লিখেছেন- ড. আরিফ ইফতেখার মাহমুদ
এদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর থেকে একটি বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে সকলেই খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন- সেটি হলো চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা। দেশের সচেতন জনগন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের দাবীর মুখে এ সমস্যাটির খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে মোটামুটি অনেক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেই এর মধ্যে চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (Personal Protective Equipment) যোগাড় করা হয়েছে, কিংবা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে খুব জরুরী একটি বিষয় এসে পড়ে-তা হলো এই PPE –সামগ্রীর যথার্থ ব্যবহার এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা। PPE সরবরাহের সাথে সাথে হেলথ-সেক্টার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাক্তার , স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা খুব প্রয়োজন। এ বিষয়ে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দিয়েছেন ড. আরিফ ইফতেখার মাহমুদ। আমরা তাঁর লেখাটি সরাসরি তুলে ধরছি।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (reusable PPE) সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে জানতে শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অসতর্ক ব্যবহারে একজন ডাক্তার অথবা নার্স তার আশেপাশের মানুষে অথবা পরিবারে ছড়িয়ে দিতে পারেন করোনা ভাইরাস। একটা আদর্শ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত যা জটিল কিছু নয়।
প্রথম শর্ত হচ্ছে এই গাউন কখনোই হাসপাতালের বাইরে যাবে না। হাসপাতাল কতৃপক্ষই গাউন ম্যানেজ করবেন। গাউনিং -এর জন্য ‘ডেডিকেটেড রুম’ থাকা ভালো, অর্থাৎ স্বতন্ত্র একটি কক্ষ যেটি শুধু গাউন পরার জন্যই নির্ধারিত থাকবে।
ডাক্তাররা হাসপাতালে এসে ধোয়া এবং স্টেরিলাইজড একটি PPE পড়বেন। PPE এর অংশ গুলো হচ্ছেঃ গাউন, শু- কভার, গগলস, ফেস মাস্ক ও গ্লাভস। কিছু ক্ষেত্রে ফেস শিল্ড। এ গাউনিং টি সঠিক ভাবে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য ভুল পুরো বিষয়টাকে অকেজো করে দিতে পারে।
গাউনিং রুমে আয়না থাকা জরুরি। শরীরের সব অংশ ঢেকে রাখতে হবে যাতে ভেতরের কাপড় বা জুতা অথবা চুল কোনটাই বাইরে থেকে দেখা না যায়। সবথেকে ভালো হয় যদি ২ জন একসাথে গাউন পরেন। এক্ষেত্রে একজন অপরজনের উপর নজর রাখতে পারে যাতে কোথাও কোনো লিকেজ না থাকে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় buddy system. শুধু তাই নয়, একজন ডাক্তার ডিউটি করার সময়ও অন্য ডাক্তার বা নার্স এর উপর নজর রাখা উচিত যাতে অসতর্কতায় কোনো লিকেজ তৈরী না হয়।
N95 মাস্ক পড়ার সময় প্রতিবার fit টেস্ট অর্থাৎ যিনি মাস্কটি পরবেন তার নাক ও মুখমন্ডলে মাস্কটি মাপমতো হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেয়া করা জরুরি। সঠিক ভাবে ফিট না হলে দামি এ মাস্কটি কোনো কাজেই আসেনা। এ বিষয়ে অনেক youtube ভিডিও আছে।
কাজশেষে ডি-গাউনিং রুমে (গাউন ছাড়ার জন্য ব্যবহৃত পৃথক রুম) এসে গাউন ছাড়তে হবে। covid-19 রোগীর সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের মনে রাখতে হবে যে করোনা ভাইরাস কাপড়ের উপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং এসময় যদি অসতর্কভাবে সাধারণ কোনো রোগীর কাছে যান, তাহলে তাকে সংক্রমিত করার সম্ভাবনা থাকে।
গাউন ছাড়ার সময় সাবধানে খুলে সেটা নির্ধারিত ঢাকনা দেয়া বিন-এ রাখতে হবে। গ্লাভসসহ ডিসপোজেবল্ (একবার ব্যবহারযোগ্য) সামগ্রীগুলোর জন্য আলাদা ‘বিন’ থাকতে হবে। গাউন ছাড়ার পর সবথেকে ভালো হয় যদি সাথে সাথে গোসল করে নতুন কাপড় পড়া যায়। আপৎকালীন সময়ে হাসপাতালগুলো এ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।
এক্ষেত্রে, আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গাউন ম্যানেজমেন্ট। স্বাস্থকর্মীদের ছেড়ে যাওয়া গাউন যিনি ধোবেন তাকেও PPE পড়তে হবে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য PPE- সামগ্রী ধোয়ার নিয়মঃ গাউনগুলো নিচের যেকোনোএকটি মিশ্রনে ধুলে সেটা জীবাণুমুক্ত হবে বলে আশা করা যায়:
১. গরম পানি (কমপক্ষে ৮০ ডিগ্রী) + ক্ষার যুক্ত সাবান। (সাবানে ফেনা বেশি হলে ভালো)
২. ব্লিচ অথবা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর ৩% দ্রবণ। এরপর ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। সব থেকে ভালো হয় যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াশার এবং ড্রায়ার এর ব্যবস্থা করা যায়। বড় হাসপাতালগুলোতে এটা থাকা এমনিতেও জরুরি।
সামনে বর্ষা কাল আসছে। রোদ প্রতিদিন পাওয়া নাও যেতে পারে। ডিস্পোসেবল গুলো (গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদি) সঠিকভাবে পুড়িয়ে ফেলার জন্য incinerator (চুল্লী) ব্যবহার করতে হবে। না থাকলে একটি ধাতব ড্রামে এ ব্যবস্থা করা যায়।
ডিগাউনিং রুমের জন্য একজন সার্বক্ষণিক সহকারী দরকার। প্রতি ৩০ মিনিট বা আরো কম সময় অন্তর এটা ডিসিনফেক্ট বা জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমি জানি, মনে হতে পারে এটা অতি সতর্কতা কিন্তু করোনা’র ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত যে একটি মানুষকে যদি সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা যায় তাতে অনেক লক্ষ টাকার হাসপাতাল সার্ভিস সেভ হয়। আর আমাদের দেশে ওই সার্ভিস অনেক অপ্রতুলও বটে। কাজেই ব্রেক দা চেন।
#weAreRightBehindYouDoctors