স্টিকি আই কি?
আপনার বাচ্চার চোখে যদি খুব বেশি পানি ছল ছল করে এমন কি চোখ গড়িয়ে পানি বের হওয়ার মত উপক্রম দেখা যায় তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার বাচ্চার চোখের নালি বন্ধ হওয়ার কারনে এটা হচ্ছে। এইসমস্যা “স্টিকি আই” নামে পরিচিত। এতে অনেক সময় বাচ্চার চোখের কোনে পিচুটি জমে থাকে।যদিও এই সমস্যাটা এমনিতেই সেরে যায়, তারপরেও যথা সময়ে ডাক্তারকে দেখানোটা বুদ্ধিমানের কাজ।
“স্টিকি আই” কেন হয় বা চোখ থেকে পানি ও পিচুটি কেন বের হয়?
আমাদের চোখের ঠিক কোণায় একটি গ্রন্থি আছে। একে ল্যাকরিমাল গ্রন্থি বলে। এই ল্যাকরিমাল গ্রন্থি থেকে পানি বের হয়। সেটা মণিকে সিক্ত রাখে, চোখ সিক্ত রাখে। এরপর চোখের কোণায় দুটো ছিদ্র রয়েছে, যাকে বলা হয় পাংটা, এরপর একটি পথ রয়েছে এর মধ্য দিয়ে পানি নাকের ভেতর দিয়ে চলে যায়। এটি স্বাভাবিক পদ্ধতি।
যদি কোনো কারণে এই পথ বন্ধ থাকে, শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মগত কারণে ছিদ্রটি তৈরি হয়নি, সেই কারণে ছিদ্রের ভেতর দিয়ে না বেরিয়ে পানিটা বাইরের দিকে গড়িয়ে আসে।
আবার দেখা যায়, পানি এই রাস্তা দিয়ে ঢুকল ঠিকই, তবে স্যাক নামক একটি জায়গা আছে, যাকে বলা হয় ল্যাকরিমাল স্যাক। এটি থলের মতো, পানিটা এসে এই থলির ভেতর জমা থাকে। যদি থলিতে কোনো সমস্যা থাকে। তাহলে পানি আর পেছনের দিক থেকে নাকে যেতে পারবে না।
সাধারণত পূর্ণ বয়স্ক বাচ্চা বা ফুল টার্ম বেবি যারা জন্মগ্রহণ করে, সে সমস্ত শিশুদের রাস্তাটি খুলে যায় জন্মের পরেই। তবে যদি অপরিপক্ব শিশু যদি হয়, তখন পথটি তার পরিষ্কার হয় না। পরিষ্কার না হলে, পানি তার পথ দিয়ে যেতে পারবে না।
প্রায় প্রতি ২০ জনের ১ জন বাচ্চা সরু চোখের নালি নিয়ে জন্মায়, কারো কারো ক্ষেত্রে চোখের নালি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। অর্থাৎ,বাচ্চার চোখের পানি ঠিক মত বের হয়ে যেতে পারেনা, ফলে বাচ্চার চোখ সারাক্ষণ ভেজা বা চিটচিটে হয়ে থাকে। এমন কি কখনো চোখের কোণে পিঁচুটি বের হয়ে থাকে। আপনার বাচ্চার“স্টিকি আই” থাকলে তার চোখে সারাক্ষণ পানি জমে থাকবে এমন কি কখনো কখনো তা অশ্রুর মত গাল বেয়ে পড়বে।
সাধারণত জন্মের চার সপ্তাহ পরে পানি পড়াটা বেশি খেয়াল করা যায়। প্রথম দিকে একটু কম থাকে। কারণ ল্যাকরিমাল গ্রন্থি যেটা থেকে পানি বের হয়, সেটা একটু কম থাকে। যেহেতু পানিটা কম বের হয়, তাই প্রথম চার সপ্তাহে অল্প অল্প করে আসতে পারে বা না-ও আসতে পারে।
আপনার বাচ্চার চোখ কি স্টিকি নাকি অন্যকিছু?
যদি দেখেন আপনার বাচ্চার চোখ থেকে সবুজাভ এক ধরণের তরল বা পিঁচুটি নির্গমন হচ্ছে যার কারনে বাচ্চার চোখের পাতা বন্ধ হয়ে থাকে এমন কি তার চোখ যদি লাল অথবা ফুলে উঠে সেক্ষেত্রে আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনার বাচ্চার চোখে ইনফেকশন হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে কঞ্জাংটিভাইটিস (Conjunctivitis) বলে।
আপনার বাচ্চার চোখে ইনফেকশন হলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ডাক্তার ইনফেকশনের মাত্রা দেখে এন্টিবায়োটিক ড্রপ অথবা মলম লিখে দিতে পারেন।
আরও কিছু লক্ষণ আছে যা দেখলে আপনার বাচ্চাকে ডাক্তারেরকাছে নিয়ে যাওয়া উচিত যেমন-
- বাচ্চা আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল হলে।
- বাচ্চাসবসময় চোখ জোর করে চেপে বন্ধ করে রাখলে।
- চোখের কোণে বা নিচে সবুজাভ, সাদা অথবাহলদে পিঁচুটি বের হতে থাকলে।
- নাকের পাশে ফুলে উঠলে।
- ১ বছর বয়স হওয়ার পড়েও চোখের নালি শুরুঅথবা অবরুদ্ধ হয়ে থাকলে।
স্টিকি আই বা চোখে পিচুটি জমার চিকিৎসা
সাধারনত বাচ্চার ১ বছর বয়স হতে হতে স্টিকি আই সমস্যা চলে যায়। যদি কোন ধরনের ইনফেকশনের লক্ষন দেখা দেয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ড্রপ অথবা মলম দিতে পারে।
যদি নিজ থেকে অবস্থার উন্নতি না হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তার বিশেষ এক ধরনের ম্যাসেজ করা শিখিয়ে দিবেন যা আপনি বাসায় নিয়মিত করলে বাচ্চার বন্ধ হওয়া চোখের নালি খুলতে সাহায্য করবে। কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে সার্জারিও করতে হতে পারে।
৯৬ থেকে ৯৮ ভাগ বাচ্চার শুধু এই নেত্রনালিতে যদি যথাযথ ম্যাসাজ করা যায় তাহলে ঠিক হয়ে যায়। চোখের ঠিক কোণায় নাকের দিকে ঊর্ধ্বমুখী চাপ দিয়ে হালকা মাসাজ করতে হবে।কয়েকবার চাপ দেওয়ার পর দেখা যাবে, চোখ দিয়ে পানি একটু বেশি আসবে। তখন একটু তুলা বিশুদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে চিপে পানি মুছে নেন। মুছে নেওয়ার পর আবার একটু আলতো চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। যদি এই ম্যাসাজ করা হয়, এতেই অনেকটা ভালো হয়ে যায়।
এছাড়াও বাচ্চার ভোগান্তি কমানোর জন্যতার নেত্রনালী না খোলা পর্যন্ত একটা পরিস্কার রুমাল হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে তা দিয়ে ৪/৫ মিনিট পর পর বাচ্চার বন্ধ চোখের পাতা পরিষ্কার করে দিতে পারেন।
প্রথমেই আপনার হাত সাবান ও পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।পরিস্কার ও শুকনো গামছা দিয়ে বাচ্চার চোখ মুছে দিন।পাতলা স্যালাইনে বা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা বিশুদ্ধ পানিতে ভেজা পাতলা কাপড় দিয়ে চোখের পানি ও ময়লা গুলো আলতো করে মুছে পরিস্কার করুন। চোখের পাতার নিচে বা চোখ পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না। এতে বাচ্চার চোখ খতিগ্রস্থ হতে পারে। পরিষ্কার করা শেষে পুনরায় আপনার হাত ধুয়ে নিন।
খেয়াল রাখতে হবে যাতে দুটো চোখ পরিষ্কার করার সময় আলাদা আলাদা কাপড় বা তুলার টুকরো ব্যাবহার করা হয়। এতে যদি বাচ্চার চোখে ইনফেকশন থাকে তবে তা এক চোখ থেকে আরেক চোখে ছড়াবেনা।
এছাড়াও আপনার বুকের দুধ দিয়েও বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করতে পারেন। এতে বাচ্চার কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই এবং তা ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারে। তবে বাচ্চার ইনফেকশনের কোন লক্ষন দেখলেঅবশ্যই তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
সবার জন্য শুভকামনা।