শিশু ওষুধ খেতে না চাইলে কিভাবে খাওয়াবেন ?

Spread the love

শিশুকে ওষুধ খাওয়াতে রাজি করাটা কখনো বেশ কঠিন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত শিশুরা খুব একটা ওষুধ খেতে চায় না। এমনটা হওয়ার কারণ হল এ বিষয়টা তাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর এবং তারা ওষুধ খেতে ভয়ও পায়। এছাড়া শিশুরা ওষুধ খাওয়ার কারণটাও ঠিক তেমন একটা বুঝতে পারে না। শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়টি আপনার এবং শিশু উভয়ের জন্যই সহজ করতে এই আর্টিকেলে কিছু টিপস বর্ণিত হল।

শিশুকে বুঝিয়ে ওষুধ খাওয়ান

আপনার শিশুর সাথে কথা বলে জানতে চেষ্টা করুন, ঠিক কি কারণে সে ওষুধ খেতে চাচ্ছে না? ওষুধ খেতে শিশুর ভয় পাওয়াটা যে যথাযথ এটা মেনে নেয়াটা আপনার জন্য খুবই জরুরী, কেননা কখনো ওষুধ এর স্বাদ শিশুর জন্য খুবই বাজে হতে পারে। আপনি যখন তার ভয়গুলো জেনে ও মেনে নিবেন তখন সে ব্যাপারে শিশুর সাথে কথা বলে তাকে ওষুধ খেতে রাজি করানোটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞাপণ

এছাড়া আরেকটি বিষয় খুবই জরুরী, আপনার শিশু যাতে বুঝতে পারে যে সে ওষুধ কেন খাচ্ছে এবং ওষুধ না খেলে এর ফলাফল কি হতে পারে। সে যাই হোক, কখনো শিশুকে ভয় দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াবেন না।

একটা ব্যাপার শিশুকে বুঝাতে চেষ্টা করুন যে, সে খুব দুষ্ট হয়ে গেছে এইজন্য তাকে কখনো ওষুধ খেতে হবে না।

আপনাকে অবশ্যই শান্ত থেকে শিশুকে ওষুধ খাওয়ার সঠিক কারণটি বুঝিয়ে বলতে হবে। শিশুর সাথে এমন ভাবে কথা বলুন, যাতে করে তার মধ্যে এমন কোন ধারনা সৃষ্টি না হয় যে, সে আপনাকে খুব হতাশ করে দিচ্ছে অথবা সে খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

শিশুর ওষুধ খেতে না চাওয়ার সাধারণ কিছু কারণ

  • শিশু বুঝতে পারে না যে তাকে কেন এই ওষুধটি খেতে হবে
  • ওষুধের স্বাদ অথবা রঙ তার পছন্দ না হতে পারে
  • ট্যাবলেট অথবা ক্যাপস্যুলটি গিলে নিতে তার সমস্যা হতে পারে

শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর কিছু টিপস বা উপায়

জেনে নিন শিশু ঠিক কীভাবে খেতে পছন্দ করবে। যেমন সে কি চামচ দিয়ে, সিরিঞ্জ দিয়ে, ড্রপার দিয়ে অথবা কাপের মধ্যে স্ট্র দিয়ে ওষুধ খেতে পছন্দ করছে কি না। এছাড়াও জেনে নিন ওষুধ খাওয়ার সময় সে আপনার কোলে থাকতে চায় নাকি সোফায় অথবা বিছানায় থাকতে চায়।

আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন যে তরল ওষুধটি কি খাবারের সাথে অথবা অন্য কোন তরলের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে কি না। কেননা ওষুধটি যদি জুস, মধু অথবা এমন কোন সুস্বাদু তরলের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায় তাহলে ওষুধের স্বাদ শিশু আলাদা করে পাবে না এবং তার কাছে এটা খেতে বেশ ভালোও লাগবে।

তবে অনেক বেশি তরলের সাথে ওষুধটি মেশাবেন না, কেননা এতে করে ওষুধ খাওয়ার জন্য শিশুর অনেক সময় লেগে যেতে পারে এবং একসাথে সে পুরো ওষুধটি নাও খেতে চাইতে পারে।

জিহ্বার পেছনের অংশ দিয়েই আমরা সাধারণত স্বাদ বেশি বুঝতে পারি, তাই ছোট্ট শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় একটু একটু করে ঠোঁটের কোনার দিকে দিলে ভালো, কেননা এতে করে জিবের পেছনের দিকে তেতো স্বাদ অনুভূত হওয়ার যে সংবেদী কোষ আছে, তার সংস্পর্শ এড়ানো যায়।

আপনার শিশু যদি একটু বড় হয়, তাহলে ওষুধ খাওয়ানোর আগে এক গ্লাস বরফ ঠাণ্ডা পানি খেতে দিলে তার কাছে ওষুধের তিক্ত স্বাদ একটু কম অনুভূত হবে।

শিশুকে মজা ও অভিনয়ের সাথে ওষুধ খাওয়ানোটা বেশ উপকারী। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এমন একটা ভাব করুন যে আপনি শিশুর প্রিয় প্রিয় পুতুল অথবা টেডি বিয়ারকেও ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। শিশুর ওষুধ খাওয়ার পুরো বিষয়টি এমনভাবে মজার করতে চেষ্টা করুন যাতে শিশু পুরো বিষয়টিতে মজা পায়।

আপনার শিশুর যদি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গিলে খেতে কষ্ট হয় তাহলে সেটা কোন নরম খাবারের মধ্যে মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুর জন্য সেটা বেশ উপকারী। যেমন আপনি দই এর সাথে ওষুধ মিশিয়েও শিশুকে খাওয়াতে পারেন।

আপনার ডাক্তারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করে জেনে নিন যে ট্যাবলেটটি গুড়ো করে খাবারে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে কি না অথবা ক্যাপসুলটি কি কি খুলে খাওয়ানো যাবে কি না। পাউডার জাতীয় ওষুধ অন্য কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে সেটার স্বাদ পরিবর্তন করে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।

ওষুধ খাওয়ার জন্য একটা রুটিন করে ফেলুন এবং একই সময়ে যাতে শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো হয় সেটা লক্ষ্য রাখুন। টিভিতে শিশুর কোন প্রিয় অনুষ্ঠান অথবা প্রিয় কোন কাজের আগে যদি শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো যায় তাহলে সেটা খুব ভালো হয়, কেননা শিশুর মনোযোগ তখন অন্য একটি বিষয়ের দিকে থাকে।

বিজ্ঞাপণ

একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওষুধ খাওয়ার বিষয়টিও বেশ উপকারী। যেমন এক থেকে দশ গোনার মধ্যে শিশুকে ওষুধ খেয়ে শেষ করতে হবে, এমনটা যদি করা যায় তাহলে সেটা বেশ কার্যকরী প্রভাব ফেলতে পারে।

ওষুধ খাওয়ানোর জন্য যতটা সম্ভব কম মানুষের সাহায্য নিতে চেষ্টা করুন। কেননা পরিবারের অনেকেই যদি একসাথে শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা করে সে বিষয়টি শিশুর জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় এবং শিশু বেশ প্রেশার অনুভব করে। শুধু মাত্র আপনি যদি শান্ত পরিবেশে শিশুকে ওষুধ খাওয়ান সেটা বরং আরো বেশি কার্যকর।

শিশুকে কোন কিছু করতে আদেশ না দিয়ে তাকে যদি কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হয় তাহলে সাধারণত শিশু আরো বেশি সহযোগিতা করে। এক্ষেত্রে আপনাকে একটু কৌশল খাটাতে হবে, শিশুকে এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দিন যাতে করে তার ওষুধ খেতেই হয়।

যেমন আপনি তাকে প্রশ্ন করতে পারেন, তুমি ওষুধ কমলার জুসের সাথে খাবে নাকি আপেলের জুসের সাথে খাবে? অথবা, তুমি কি ওষুধ নাস্তা করার আগে খেতে চাও নাকি নাস্তা করার পরে খেতে চাও? এই ধরনের সিদ্ধান্ত তাকে নিতে দিলে শিশুর ধারনা হয় যে পুরো বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে।

যদি আপনি চান তাহলে ওষুধ খাওয়ার জন্য শিশুকে যে কোন ধরনের পুরষ্কার দিতে পারেন। যেমন আপনি তাকে বলতে পারেন যে, তুমি যদি এই সপ্তাহের পুরো ওষুধ খাও তাহলে আমি তোমাকে খেলনা কিনে দিব।

তবে খেয়াল রাখবেন যে এমন কোন প্রমিজ শিশুকে করবেন না যে প্রমিজ আপনি পরবর্তীতে রাখতে পারবেন না। কেননা এতে করে পরবর্তীতে শিশু আপনার কথায় বিশ্বাস করবে না।

প্রশংসা এবং উপহার

যদিও সেটা অনেক কঠিন এবং দীর্ঘ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তবুও সবসময় শিশুকে ওষুধ খাওয়ার পর প্রশংসা করুন এবং কোন পুরষ্কার দিন। 

টোকেনের মাধ্যমে শিশুকে পুরষ্কার দিলে সেটা বেশ কার্যকরী হয়। যেমন প্রতিবার ওষুধ খাওয়ার পর শিশুকে একটি টোকেন দিন এবং বলুন যে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টোকেন সংগ্রহ করতে পারলে শিশুকে একটা পুরষ্কার দেয়া হবে।

বিজ্ঞাপণ

শিশুকে কি কি ধরনের উপহার দেয়া যেতে পারে এভাবে সেটার তালিকা আপনি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। অথবা আপনি নিজে থেকেই শিশুর কি পছন্দ তার উপর ভিত্তি করে একটা তালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।

শিশু ওষুধ খাওয়ার পর তার সাথে মজার এবং আনন্দকর কিছু করার চেষ্টা করুন। এতে করে শিশু ওষুধ খাওয়ার জন্য উৎসাহ পাবে।

তবে একদিন হুট করে দেখতে পারেন যে সেদিন আপনার কোন কৌশলই কাজ করছে না, তবে তখন হতাশ হবেন না একটু ব্রেক নিন এবং পরে আবার চেষ্টা করুন। তবে এই সমস্যা যদি সবসময় হতেই থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন। ডাক্তার শিশুকে অন্য কোন ধরনের এবং অন্য স্বাদের ওষুধ দিতে পারবে কি না সেটা জিজ্ঞেস করুন।

এছাড়াও শিশুকে সবসময় মনে করিয়ে দিন যে ওষুধ খাওয়াটা কতটা জরুরী এবং শিশু ওষুধ খেলে আপনি খুবই খুশি হন। কখনো শিশুকে ‘দেখো দেখো চকলেট খাবে এবার’ এ রকম বলে ওষুধ সেবন করাবেন না। এটা পরবর্তী সময়ে ব্যাক ফায়ার হয়ে আসবে। একান্ত সময়ে শিশু মজা পেয়ে বেশি মাত্রার ডোজ খেয়ে পয়জনিংয়ের শিকার হবে।  

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment