সারভিক্স (Cervix) কি ?
সারভিক্স (Cervix) হোল জরায়ুর নীচের দিকের সরু, নলের মত অংশ যা ভ্যাজাইনা বা যোনীর সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি জরায়ুমুখ নামেও পরিচিত।
যখন মেয়েরা গর্ভবতী থাকেনা তখন সারভিক্স সামান্য খোলা থাকে যাতে শুক্রাণু ভেতরে ঢুকতে পারে এবং পিরিয়ডের সময় রক্ত বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারে। যখন কেউ গর্ভধারণ করে তখন নিঃসরিত পদার্থ জমা হয় জরায়ু মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং এক ধরনের প্রতিরক্ষা বেষ্টনী তৈরি করে যাকে মিউকাস প্লাগ বলে।
স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় তৃতীয় ট্রাইমেস্টার পর্যন্ত জরায়ু মুখ শক্ত, লম্বা এবং বন্ধ অবস্থায় থাকে। তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে মায়ের শরীর যখন প্রসবের জন্য তৈরি হতে থাকে তখন তা আস্তে আস্তে নরম হতে থাকে, ক্ষয় হয়ে ছোট হতে থাকে (Efface) এবং প্রসারিত হয়ে খুলে যেতে থাকে (Dilate) ।
সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সি বলতে কি বোঝায়?
সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সি মানে যখন গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই কোন ব্যাথা বা কন্ট্রাকশন ছাড়ায় জরায়ুয় মুখ খুলে যায়। সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সির কারণে গর্ভপাত বা সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব হতে পারে, সাধারনত ১৬-২৪ সপ্তাহের মধ্যে।
![](https://myfairylandbd.com/wp-content/uploads/2017/08/incompetent-cervix.jpg)
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে নষ্ট হয়ে যাওয়া গর্ভের ১৫ থেকে ২০ ভাগ সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সির কারণে হয়ে থাকে।
কারা এর ঝুঁকির মধ্যে থাকে?
সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সির ঝুঁকি বেশী থাকে যখন-
- জরায়ু মুখে cone biopsy বা LEEP করা হলে।
- আগের ডেলিভারিতে জরায়ুমুখ আঘাত প্রাপ্ত হলে বা dilation and curettage (D&C) করা হলে।
- কোন কারণ ছাড়ায় আগে একবার বা তার অধিকবার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে গর্ভপাত হলে।
- যদি আগের গর্ভধারণে সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সি থেকে থাকে।
- আগের গর্ভধারণে সময়ের আগেই প্রসব হয়ে থাকলে
- জরায়ুতে কোন অস্বাভাবিকতা থাকলে।
- আপনার মা যদি আপনাকে গর্ভধারণের সময় DES (diethylstilbestrol) ওষুধ নিয়ে থাকেন। ডাক্তাররা গর্ভপাত রোধে এ ওষুধ প্রয়োগ করতেন। যদিও এখন সাধারনত এটা দেয়া হয়না।
সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সি আছে কিনা তা কিভাবে বোঝা যাবে?
সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সির থাকলে কোন লক্ষন বোঝা নাও যেতে পারে। তবে কিছু কিছু লক্ষন ১৪-২০ সপ্তাহের মধ্যে দেখা যেতে পারে, যেমন-
- পেলভিকে চাপ অনভুত হতে পারে।
- পিরিয়ডের আগে হওয়া খিল ধরা অনুভুতি হতে পারে।
- পিঠ ব্যাথা করতে পারে
- স্রাব নির্গত হওয়ার পরিমান বেড়ে যেতে পারে।
- স্পটিং বা হালকা রক্তপাত হতে পারে।
সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সি নির্ণয় করার কোন ভালো পদ্ধতি এখনো নেই। তবে আপনি যদি এর ঝুঁকির মধ্যে থাকেন তাহলে ডাক্তার ১৬ সপ্তাহের শুরুতে transvaginal ultrasounds করতে পারেন। এর ফলে জারায়ুমুখের দৈর্ঘ্য মাপা যায় এবং জরায়ু মুখ ক্ষয় হচ্ছে কিনা তা বোঝা যায়।
এ পরীক্ষা ২৩ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি দু সপ্তাহ অন্তর করা হয়। যদি ডাক্তার জরায়ুমুখের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখেন, যেমন যদি জরায়ু মুখের দৈর্ঘ্য ২৫মিমি এর কম হয় তাহলে সময়ের আগেই প্রসবের ঝুঁকি থাকে।
সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি বা সারভিকাল ইনসাফিশিয়েন্সির চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
যদি আল্ট্রাসাউন্ডে জরায়ুমুখের দৈর্ঘ্য ২৫ মিমি. এর কম পাওয়া যায়, যদি আপনি ২৪ সপ্তাহের কম সময় গর্ভবতী হন এবং যদি সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সির আরও কোন ঝুঁকির লক্ষন থাকে তবে আপনার ডাক্তার প্রি-টার্ম ডেলিভারির সম্ভাবনা কমিয়া আনার জন্য cerclage করার পরামর্শ দিতে পারেন।
Cerclage এর মাধ্যমে জরায়ুমুখের চারপাশে সেলাই করে দেয়া হয় জাতে তা বন্ধ থাকে। যাদের জরায়ুমুখ ২৪ সপ্তাহের আগেই ১ সেমি বা তার বেশী খুলে যায় তাদের ক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি কার্যকর। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এ সেলাই খুলে দেয়া হয়।
![](http://myfairylandbd.com/wp-content/uploads/2017/08/Cervical-insufficiency-482x366.png)
যাদের পূর্বের প্রি-ম্যাচিউর বার্থের ইতিহাস আছে তাদের অতিরিক্ত প্রজেস্টেরন দেয়া হতে পারে। এটি ১৬ সপ্তাহ থেকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেয়া হয়।
যদি প্রি-ম্যাচিউর লেবারের লক্ষন দেখা যায়, আলট্রাসাউন্ডে জরায়ুমুখের দৈর্ঘ্য কম পাওয়া যায় এবং গর্ভের বাচ্চার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে (সাধারণত ২৪ সপ্তাহের পর)তবে আপনার স্টেরয়েড দেয়া হতে পারে। এর ফলে প্রি-টার্ম লেবার বন্ধ থাকে এবং বাচ্চার লাংসের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
যদি কোন গর্ভধারণে আপনার সারভিকাল ইনকম্পিটেন্সি থাকে তাহলে পরবর্তী গর্ভধারণে প্রি-ম্যাচিউর বার্থ এবং গর্ভ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরবর্তী গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে আগেই বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নিন।
সবার জন্য শুভ কামনা