শিশুর বেড়ে ওঠা । ১৮ মাস

Spread the love

এই বয়েসের প্রত্যেকটা শিশুই চায় সবাই শুধু তার দিকে মনোযোগ দিক, আর ঠিক তাই যখন আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করবেন তখন হয়ত দেখতে পারেন যে আপনার শিশুটি হুট করেই চিৎকার করছে, আর এমনটা দেখলে মোটেও অবাক হবেন না।

শিশুরা সাধারণত স্বাধীনতা প্রবণ হয়ে থাকে, যদিও আপনি যখন অফিসে যাওয়ার সময় তাদের ডে-কেয়ার সেন্টার অথবা বাসায় অন্য কারো কাছে রেখে যান তখন এই ‘স্বাধীনতা প্রবণ’ শব্দটা তাদের সাথে খাপ নাও খেতে পারে। কেননা, তখন দেখবেন যে সে আপনাকে যেতে দিতে চাচ্ছে না, আপনাকে ধরে বসে আছে যাতে করে আপনি না যেতে পারেন।

বিজ্ঞাপণ

তবে এই বয়েসের শিশুরা নিজেদের স্বাধীনচেতা স্বত্বাকে প্রকাশ করে “এটা আমার!”, “এখনই লাগবে” এই ধরনের শব্দ দিয়ে এবং আপনার কথার অবাধ্য হয়ে।

১৮ মাস বয়সী শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি

আপনার ১৮ মাস বয়সী বাড়ন্ত শিশুকে দেখবেন এই সময়ে একদম প্রাণবন্ত ও চঞ্চল হয়ে খুব দৌড়াদৌড়ি করছে ও অনেক ধরনের শারীরিক কসরত প্রতিনিয়ত করেই যাচ্ছে।

১৮ মাস বয়সী শিশুর উচ্চতা এবং ওজন

১৮ মাস বয়সী একটি শিশুর উচ্চতা এবং ওজনের সঠিক পরিমাপটি কেমন হতে পারে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে ১৮ মাস বয়সী শিশুর স্বাভাবিক ওজন ও উচ্চতা হল নিম্নরূপঃ

  • ছেলে শিশুঃ ওজন-২৪.১ পাউন্ড এবং উচ্চতা-৩২.৪ ইঞ্চি
  • মেয়ে শিশুঃ ওজন-২৩.৪ পাউন্ড এবং উচ্চতা-৩১.৮ ইঞ্চি

১৮ মাস বয়সী শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির মাইলস্টোনগুলো

বাবা মা রা প্রতিনিয়তই এমনটা ভেবে থাকেন যে এই বয়সে আমার শিশুর কি করা উচিৎ ছিল? অথবা সে কতটা প্রাণবন্ত হতে পারে এই সময়ে! নিম্নে ১৮ মাস বয়সী শিশু যে মাইলস্টোনগুলো অতিক্রম করবে সেগুলো বর্ণনা করা হলঃ

হাঁটাঃ ১৮ মাস বয়সী বেশীরভাগ শিশুই শুধুমাত্র হাঁটে যে তা নয় বরং তাড়া রীতিমত দৌড়ানো শুরু করে। অচিরেই তারা লাফালাফিও শুরু করতে পারে। কিন্তু তারপরেও ভীরের মধ্যে অথবা অনেক লম্বা দূরত্বে যাওয়ার সময় তারা চাইবে যাতে করে আপনি তাদের কোলে নিয়ে রাখেন।

কথা বলাঃ ১৮ মাস বয়সী বেশীরভাগ শিশুই মোটামুটি ১০টার মত শব্দ অনায়াসেই বলতে পারে। এমনকি এই বয়সে অর্ধেকের বেশি শিশু ২০টা অথবা তারচেয়েও বেশি শব্দ বলা শিখে যায়। অচিরেই আপনার শিশুকে দেখবেন দুই তিন শব্দের একটি বাক্য বলার চেষ্টা করতে। তার যদি কোন কিছু প্রয়োজন পরে তখন দেখবেন সে আঙুল দিয়ে জিনিসটার দিকে দেখিয়ে সেটার নাম বলতে পারছে।

দাঁত ওঠাঃ ১৬ থেকে ২২ মাসের মধ্যে আপনার শিশুর উপরের মাড়ির দাঁত ওঠা শুরু করবে। শিশুর অন্যান্য মাইলস্টোনগুলোর মতই নতুন দাঁত উঠতে দেখা প্রত্যেক বাবা মা এর জন্য খুবই আনন্দ দায়ক সময়।

পটি বা বাথরুম করার জন্য প্রশিক্ষণঃ এই বয়সী কিছু শিশুর মধ্যে এমন সব বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যেগুলো দেখে মনে হতে পারে যে এই শিশু এখন পটি বা বাথরুম করার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তৈরি।

যদি দেখেন যে আপনার শিশু আপনাকে বলছে সে এখন বাথরুম করতে চায় অথবা তার ময়লা হয়ে যাওয়া ডায়াপার পরিবর্তন করতে চায় তাহলে বুঝবেন এখন তার পটি প্রশিক্ষণের সময় হয়েছে।

এছাড়াও যদি দেখেন যে শিশু নিজ থেকেই তার প্যান্ট পড়তে এবং খুলতে পারার সাথে সাথে বেশ কয়েক ঘণ্টা কোন ডায়াপার ছাড়াই পরিষ্কার থাকতে পারছে তখন এই ধরনের সব লক্ষণগুলো দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশুকে নিজ থেকে বাথরুম করার প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় হয়ে গেছে।

তবে কখনই এইসব ব্যাপার তাড়াহুড়া করবেন না, কেননা অনেক শিশুদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তারা দুই থেকে তিন বছর পর ডায়পার ছেড়ে দেয় এবং নিজ থেকেই বাথরুম করার মত প্রশিক্ষিত হয়ে উঠে। আর তাই শিশু যদি নিজ থেকে উপযুক্ত না হয়ে উঠে, আপনার প্রশিক্ষণ কখনই কাজে দিবে না। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

১৮ মাস বয়সী শিশুর আচার আচরণ

আপনার ১৮ মাস বয়সী স্বাধীনচেতা ছোট্ট শিশুটি হয়ত এই সময়ে এমন সব আচার আচরণ করতে পারে যেগুলো সামাল দিয়ে ওঠা আপনার জন্য কিঞ্চিৎ কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। তার এইসব অদ্ভুত আচার আচরণের সাথে কীভাবে মানিয়ে চলবেন অথবা সামলে উঠবেন সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলঃ

বদ মেজাজঃ যদিও এই সময়টাতে আপনার ছোট্ট শিশুটি খুব দ্রুতই অনেক কিছু বলতে শিখে যায়, তবুও কিন্তু সে তার মনের ভাব সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ করতে পারে না। এই বয়সী শিশুটি চাইলেই আপনার কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না, আর এই প্রকাশ করতে না পারার অক্ষমতা তাকে খুব হতাশ করে তুলতে পারে।

শিশুর জন্য তাকে সাথে করে বাজার করতে যাওয়ার মত কষ্টদায়ক যে কোন অবস্থা যতটা সম্ভব কমিয়ে নিয়ে আসুন। এছাড়া খেয়াল রাখবেন যাতে শিশুটি বের হওয়ার আগে যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্রাম নিতে পারে এবং তার পেট ভরা থাকে।

আপনার সাথে দূরত্বের উদ্বেগঃ (Separation Anxiety) : আমরা অনেকেই এমনটা করি যে, বাইরে যাওয়ার সময় শিশুকে না জানিয়েই আমরা চলে যাই। কিন্তু আপনি যে কোন সময় এমন চলে যেতে পারেন, শিশুর মধ্যে এই চিন্তাটা প্রবেশ করতে না দেয়াই ভালো। তাই সবসময় কোথাও যাওয়ার আগে শিশুকে জানিয়ে যান, সেটা তার জন্য যতই কষ্টকর হোক না কেন।

আপনি যখন বাইরে থাকবেন ততক্ষণ শিশু যাতে ব্যস্ত থাকে সেই ব্যবস্থা করে রেখে যেতে পারেন এবং শিশুকে যাওয়ার আগে অল্প একটু আদর করে বিদায় নিন।

ADHD বা হাইপার একটিভ শিশুর কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে না পারাঃ  আপনার ১৮ মাস বয়সী শিশু কি অনেক আবেগ প্রবণ ও হাইপার একটিভ? এর সাথে কোন কিছুতে শিশু কি ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারছে না? এমন হলে বাবা মায়েরা একটু দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন যে এগুলো কি ADHD (attention deficit hyperactivity disorder) এর লক্ষণ কি না!

তবে এই ব্যাপারে মূল কথা হল, ঠিক এখনই এসব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটা উচিৎ নয়। কেননা এই বয়সের বেশীরভাগ শিশুর মধ্যেই এই ধরনের লক্ষণগুলো দেখা যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে যদি এগুলো ঠিক না হয়ে যায় তখনই কেবল আপনি দুশ্চিন্তা করতে পারেন। আর এই ধরনের দুশ্চিন্তা হলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিন।

এছাড়া মনে রাখবেন আপনার শিশু কি  ADHD (attention deficit hyperactivity disorder) এ ভুগছে কি না সেটা জানার পরীক্ষা আরো অন্তত কয়েক বছর পর করা যেতে পারে। ১৮ মাস বয়সেই এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠে না।    

অটিজমঃ ১৮ মাস বয়সের নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষার সময় ডাক্তার আপনার শিশুর মধ্যে কি অটিজম আছে কি না সেটা জানার জন্য তার আচার আচরণ সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করবেন। অটিজমের অনেক ধরনের লক্ষণ হতে পারে, যেমন অস্বাভাবিক নড়াচড়া, চোখের দিকে তাকিয়ে কথা না বলা ইত্যাদি।

১৮ মাস বয়সী শিশুকে কীভাবে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রাখবেন?

শিশু যাতে সব কথা শুনে আর অবাধ্য না হয় এমনটা সব বাবা মায়েদের চাওয়া। এসব ক্ষেত্রে মনে রাখবেন আপনার শিশুরা কিন্তু খুবই সহজ সরল, তাদের আপনি যা অভ্যাস করাবেন তারা সেটাই করবে। ভালো আচরণের জন্য পুরষ্কার, আর খারাপ আচরণ করতে নিষেধ এই ধরনের অভ্যাসগুলো নিয়মিত করার জন্য শিশু ঠিক কতটা অবাধ্য আচরণ করতে পারবে সেটা ঠিক করে দিন এবং সেই অনুযায়ী চলুন।

এছাড়া মনে রাখবেন, ১৮ মাস বয়সী আপনার শিশুটি কিন্তু এখনো অনেক ছোট, কীভাবে ভালো হয়ে থাকতে হয় এটাই হয়ত সে এখনো ঠিকমত বুঝে উঠতে পারে নি। এমতাবস্থায় শিশুর সকল ব্যাপারে একটু ধৈর্যশীল হন এবং শিশুকে সবকিছু শিখানোর জন্য চেষ্টা করতে থাকুন।

[ আরও পড়ুনঃ শিশুর শৃঙ্খলা শিক্ষার কিছু কৌশল ]

১৮ মাস বয়সী শিশুর ঘুম

আপনার ছোট্ট শিশুটির শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য রাতের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম খুবই জরুরী। কিন্তু ১৮ মাস বয়সী শিশুর জন্য দৈনিক ঠিক কি পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন?

বেশীরভাগ ১৮ মাস বয়সী শিশুর জন্য দৈনিক ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন। এছাড়াও দিনের বেলায় দেড় থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুম অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।

১৮ মাস বয়সী শিশুর ঘুমের প্রশিক্ষণ

এই বয়সী শিশুদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ হল এটা খেয়াল রাখা যে শিশু যাতে করে নিজ থেকেই রাতের বেলায় ঘুমিয়ে পড়ে। তার ঘুমের জন্য যেন কোলে নেয়া, দোল খাওয়ানোর মত বিশেষ কোন পদক্ষেপ যাতে না নেয়া হয়। কেননা শিশু যদি মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে যায় তাহলে আবার কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে কীভাবে ঘুমিয়ে পড়তে হয় এটা তার জেনে রাখা প্রয়োজন। 

বিজ্ঞাপণ

তবে আপনার শিশু যদি এখনো নিজে নিজে ঘুমাতে না পারে তবে এ নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, বিশেষ করে শিশু যদি এখনো দোলনায় ঘুমায়। কারণ তার বয়স মাত্র ১৮ মাস! তাই এমন একটা অভ্যাস তৈরি করার চেষ্টা করুন, যাতে আপনার শিশুর প্রচুর ঘুম আসার পরই সে ঘুমাতে যায়। তবে জেগে থাকা অবস্থাতেই যেন বিছানায় যায়। রাতে ঘুমানোর সময় যদি আপনার কাছে থাকার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে এখনই সময় ধীরে ধীরে তাকে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করার।

১৮ মাস বয়সী শিশুর ঘুম না আসা

এই ধরনের সমস্যা আপনাকে একটু অবাক করে দিতে পারে, কারণ কিছুদিন আগেও আপনার যে শিশুটি একদম ঠিকমত ঘুমাচ্ছিল সে ইদানীং ঘুমাতেই চাচ্ছে না! বিভিন্ন কারণে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন দাঁত উঠা, শারীরিক অসুস্থতা অথবা এমন কোথাও ঘুরতে যাওয়া যেখানে শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের নিয়মের ব্যাঘাত ঘটছে।

আপনার শিশু যাতে আগের মত স্বাভাবিক ভাবে ঘুমায় তার জন্য আপনাকে সমস্যার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করতে পারলেই তবে আপনি শিশুকে আগের মত করে ঘুমানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন। এসমস্ত সময়ে সাধারণত আগের ঘুমানোর সময়টাকে অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে যাওয়ার মাধ্যমে বেশ সুফল পাওয়া যায়।  

আপনার ১৮ মাস বয়সী শিশু একদমই ঘুমাতে না চাইলে কি করবেন?

কোন রাতে আপনার এমনটা মনে হতে পারে যে আজকে হয়ত আপনার শিশুকে কোন ভাবেই ঘুম পারানো সম্ভব না। তবে সত্য কথা হল প্রত্যেকটা শিশুরই ঘুমের প্রয়োজন আছে এবং তারা একসময় ঠিকই ঘুমিয়ে যাবে যদি আপনি তাদের জন্য সেই ঘুমের পরিবেশটা তৈরি করে দিতে পারেন।

শিশুর ঘুমাতে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলে পরিবেশটা শান্ত রাখার জন্য আপনি টিভি, গান অথবা অন্যান্য ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোন সব বন্ধ করে দিন। এরপর শিশুকে উষ্ণ একটা গোসল দিতে পারেন অথবা শান্ত কোন গল্প পড়ে শুনাতে পারেন, এগুলো শিশুকে সারাদিনের উচ্ছ্বাস কমিয়ে এনে শান্ত হতে সাহায্য করে। শিশুকে কোন অজুহাত দেখিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার সময়টা দেরী করতে দিবেন না।

১৮ মাস বয়সী শিশু রাতের বেলায় ঘুমর মধ্যে কান্না বা চিৎকার করলে কি করবেন?

ডাক্তারি ভাষায় শিশুর মাঝরাতে ঘুমের মধ্যেই কান্না বা চিৎকার করাকে নাইট টেরর বলা হয়ে থাকে। এই নাইট টেরর হওয়া অবস্থায় শিশুকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করবেন না, এমন সময়ে শিশুকে আলতো করে আদর করে শান্ত করার চেষ্টা করুন, এতে করে শিশু আবার পুনরায় ঘুমিয়ে যাবে।

আর ঘুমের মধ্যে যদি শিশু নড়াচড়া করে অথবা হাঁটাচলা শুরু করে তাহলে তার চারপাশে সবকিছু নিরাপদ আছে কি না অর্থাৎ শিশু কোন কিছুর সাথে বাড়ি বা ধাক্কা খেয়ে ব্যথা পেতে পারে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

তবে সবচাইতে ভালো ব্যাপার হল শিশুর মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে কাঁদা কেবল মাত্র আপনাকেই একটু দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে শিশুকে নয়। কেননা পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শিশু এগুলো কিছু মনে করতে পারবে না। এছাড়া এই ধরনের অবস্থা শিশুর নয় বছর বয়স পর্যন্ত হতে পারে।

শিশু ঘুমানোর সময় যেন একদম শান্ত একটা পরিবেশে শান্ত হয়ে ঘুমাতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখুন। এবং যতটা সম্ভব শিশুকে দ্রুত শুইয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন যাতে করে সে পুরো রাত বিশ্রাম পায়। 

১৮ মাস বয়সী শিশুর খাবার

পানি পান করা এবং খাবারের ব্যাপারে শিশুদের এই বয়সটাই একটু অদম্য। এই বয়সী আপনার শিশুটা হয়ত এখন “বেবি ফুড” খায় না। বুকের দুধ অথবা ফরমুলা দুধের পরিবর্তে সে হয়ত এখন গরুর দুধ অথবা সাধারণ পাউডার দুধই খাচ্ছে। এই বয়সে  শিশুর খাদ্যাভ্যাসে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে, আবার কীভাবে খাবে তার মধ্যেও আসে ব্যাপক পরিবর্তন। কেননা সে হয়ত এখন ফিডার বাদ দিয়ে স্বাভাবিক পাত্র থেকেও পান করা শুরু করতে পারে।

১৮ মাস বয়সী শিশু কি পরিমাণ খাবার ও পানীয় প্রয়োজন?

এই বয়সী শিশুর ঠিক আপনার মত করেই তিন বেলা খাবার এবং দুই বেলা নাস্তার প্রয়োজন পরে। এছাড়া যদি অন্য খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালশিয়াম না পেয়ে থাকে তাহলে শিশুকে প্রতিদিন ৮ আউন্স কাপের সম পরিমাণ পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ খেতে দিবেন। তবে শিশু যদি পান না করতে চায় তাহলে জোর করে খাওয়াবেন না, তখন রেখে দিন, পরে আবার চেষ্টা করুন।

১৮ মাস বয়সী শিশুকে যদি আপনি বুকের দুধ ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন প্রক্রিয়াটি যেন খুব ধীরে হয়। প্রথমে এক বেলা বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করুন এবং আরো এক বেলা দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার আগে অন্তত এক সপ্তাহ সময় নিন।

কেননা আপনি যদি খুব দ্রুত শিশুকে বুকের দুধ ছাড়িয়ে দিন তাহলে আপনার বুকে উৎপন্ন হওয়া অতিরিক্ত দুধের কারণে আপনার “plugged milk ducts” নামক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়া এই ছাড়ানোর সময়টা দ্রুত হলে শিশুর মানসিক অবস্থার উপরেও চাপ সৃষ্টি হতে পারে, কেননা শিশু হয়ত ভাবতে পারে আপনি তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। তাই বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় শিশুর প্রতি একটু বিশেষ যত্ন খুবই জরুরী।

১৮ মাস বয়সী আপনার শিশুর কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিৎ?

প্রতি বেলায় এবং নাস্তার সময়মত আপনার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে দিন। বেশীরভাগ শিশুরই এই বয়সে সাধারণত এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ সম পরিমাণে ফল এবং সবজী , এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ সমপরিমাণে শস্য জাতীয় খাবার এবং তিন চামচ পরিমাণে প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।

১৮ মাস বয়সী শিশু যদি খেতে না চায় তাহলে কি করবেন?

এই বয়সী শিশুরা অনেক ধরনের খাবার বেছে খাবার জন্য মোটামুটি প্রসিদ্ধই বলা চলে। তাই আপনার শিশু যদি কোন এক বেলায় খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে অথবা শুধুমাত্র কয়েক কামড় খাবার খায় তাহলে খুব একটা দুশ্চিন্তা করবেন না। কেননা, প্রথম এক বছরে শিশুরা যতটা দ্রুত বড় হয় দ্বিতীয় বছরে ঠিক আগের মত অত দ্রুত বড় হয় না।

বিজ্ঞাপণ

এছাড়া নতুন অনেক কথা শিখছে এবং যে কোন কিছুর প্রতি নিজের অনীহা প্রকাশ করার ক্ষমতা নিয়ে সে বেশ উচ্ছ্বাসিত। আর তাই যে কোন কিছুর মধ্যেই শিশুর “না” শব্দটা শুনতে পাওয়ার ব্যাপারে নিজেকে তৈরি করে নিন। যেটা আপনি করতে পারেন এই সময়ে বেশি বেশি পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার দিন, দুইজন একসাথে খাবার প্রস্তুত করুন এবং খাবার জন্য একটা চমৎকার পরিবেশ তৈরি করে নিন।

এছাড়া শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং খাওয়া দাওয়া নিয়ে আপনার যদি কোন ধরনের উদ্বেগ থেকে থাকে তাহলে ১৮ মাস বয়সে নিয়মিত চেকআপের সময় এই ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিতে পারেন।

[ আরও পড়ুনঃ যেভাবে আপনার বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে আগ্রহী করে তুলবেন ]

১৮ মাস বয়সী শিশুর জন্য কি ভিটামিন ওষুধ খাওয়া জরুরী?

আপনি যদি মনে করে থাকেন যে শিশু তার দৈনন্দিন খাবার থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন পাচ্ছে না তাহলে ডাক্তারের সাথে অতিরিক্ত ভিটামিন সাপলিমেন্ট দেয়ার ব্যাপারে আলাপ করুন।

এই বয়সী অনেক শিশুকে মাল্টি-ভিটামিন অথবা আয়রন সাপলিমেন্ট সেবন করতে দেখা যায়। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য এই সময়ে শিশুকে আঁশ সমৃদ্ধ চকোলেট অথবা চুইংগাম দিতে অনেক ডাক্তারকেই দেখা যায়।

তবে এমনটা খুব কম সময়েই প্রয়োজন পরে, কেননা হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য এই বয়সে খাওয়া ফল এবং শাক সবজীতেই শিশুর আঁশ জাতীয় খাবারের প্রয়োজন মিটে যায়।   

১৮ মাস বয়সী শিশুর কার্যকলাপ

১৮ মাস বয়সী আপনার শিশু এই বয়সে একটু দুরন্ত হয়, তারা খেলাধুলা করতে অনেক পছন্দ করে। এছাড়া গান গাওয়া, গল্পের বই পরে শুনানো এবং একসাথে নাচানাচি করা শিশুকে নিত্য নতুন অনেক কিছু শিখতে এবং আপনার সাথে তার সখ্যতা আরো বাড়াতে সাহায্য করে।

নিম্নে ১৮ মাস বয়সী শিশুর সাথে করা যেতে পারে এমন মজার কিছু কাজ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলঃ

  • এই সময়ে শিশুরা আঙুল দিয়ে ইশারা করে মজার মজার ছড়া এবং গান খুবই পছন্দ করে থাকে।
  • এই সময়ে শিশুরা ছবি সম্বলিত গল্পের বই এর পাতা উল্টাতে খুবই পছন্দ করে।
  • এই সময়ে শিশুরা নাচানাচি করে এবং গান শুনতে ভালোবাসে। দেখবেন শিশু নিজ থেকেই কখনো গুন গুন করে কোন গান গাইছে!
  • বল দিয়ে ক্যাচ ধরার খেলা এই সময়ের শিশুদের জন্য দারুণ মজার একটা খেলা।
  • বাবল তৈরি করার খেলনা নিয়ে শিশুর সাথে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসলে সেটা শিশুর জন্য খুবই আনন্দদায়ক একটা অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে।
  • যে কোন খেলনা দিয়ে শিশুর সাথে লুকোচুরি খেলা তাদের আনন্দের একটা অন্যতম উৎস হয়ে উঠতে পারে এই সময়ে।

১৮ মাস বয়সী শিশুদের ব্যাপারে কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ বা চেকলিস্টঃ

  • ১৮ মাস বয়সী নিয়মিত চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
  • এই সময়তে HepB, DTaP, IPV এর মত বেশ কিছু ভ্যাকসিনের শেষ ডোজ দেয়ার সময়। যদি ইতোমধ্যেই না নিয়ে থাকে তাহলে শিশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে দিন।
  • শিশুকে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করাতে ভুলবেন না। আপনার শিশু হয়ত নিজে নিজেই দাঁত ব্রাশ করতে চাইবে। তাকে নিজে থেকেই দাঁত ব্রাশ করতে দিন, তবে খেয়াল রাখবেন যে সে ঠিকমত দাঁত ব্রাশ করতে পারছে কি না এবং দাঁত ঠিকমত পরিষ্কার হচ্ছে কি না।
  • ঘর গোছানোর সময় শিশুকে সাথে রাখুন। শিশু ধীরে ধীরে শিখে যাবে কোন জিনিস কোথায় রাখতে হয়, কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন সে নিজ থেকেই সবকিছু সঠিক যায়গায় রাখতে পারছে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment