রেসিপির বর্ণনা এবং পুষ্টিগুণ
“পুষ্টি গুড়া” ৬-৮ মাসের শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রধান খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে এবং প্রস্তুতে চালের গুড়া, ডালের গুড়া, বাদাম, গুড়/চিনি, কলা এবং গাজরের গুড়া ব্যবহৃত হয়েছে। চাল এবং ডালের মিশ্রণ হতে ক্যালোরি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়। চাল-ডাল এবং বাদামের মিশ্রন খাবারের আমিষের মান বৃদ্ধি করে।
এছাড়া শস্য, বাদাম ইত্যাদি অল্প আঁচে চুলায় ভাজার কারণে এটি খাদ্যটির স্বাদ বৃদ্ধি করে এবং পরিপাক ক্রিয়াকে দ্রুত করে। পাশাপাশি এটি খাদ্যকে হালকা এবং শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির যোগান দেয়। চিনি এবং তেল খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে এবং ক্যালোরি মান বাড়ায়। তেল ও চিনি ছাড়া রেসিপিতে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদান হতে আয়রন পাওয়া যায়। এটি বিভিন্ন খাবারের সাথে যোগ করে বা প্রধান খাবার হিসেবেও শিশুকে খাওয়ানো যাবে।
এই রেসিপিটি অল্পসময়ে প্রস্তুত উপযোগী। চাল এবং ডালের গুড়া আলাদাভবে প্রায় ১ মাসের জন্য সংরক্ষণ করা যায় ফলে যে কোন সময়ে খুব দ্রুত মৌসুমি সবজি অথবা ফল যেমন কলা, কমলার রস, মিষ্টিকুমড়া, গাজর গুড়া ইত্যাদি ব্যবহার করে এই রেসিপিটি প্রস্তুত করা যায়।
** গাজরের পরিবর্তে অন্যান্য রঙিন সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়ার পাউডার ব্যাবহার করা যাবে।
** গুড়ের পরিবর্তে চিনি ব্যবহার করা যাবে তবে গুড় আয়রনের ভালো উৎস
প্রস্তুতকৃত খাবারের ওজনঃ ২৮০ গ্রাম (১ বাটি)
পরিবেশনের সংখ্যাঃ ৩
খাবার প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় সময়ঃ ৫-৮ মিনিট
আয়রনের উৎসঃ গুড়, ডালের গুড়া, বাদাম।
বয়সসীমাঃ ৬-৮ মাস, ৯-১১ মাস, ১২-২৩ মাস।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। বাদাম অল্প আঁচে চুলায় ভেজে নিন এবং গুড়া করুন।
২। একটি পাত্রে চাল, ডাল ও বাদামের গুড়া একসাথে নিন। এত গাজরের পাউডার যোগ করুন।
৩। এবার এতে তেল এবং গুড় যোগ করুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটানো পানি দিয়ে সবগুলো উপকরণ একসাথে মেশান এবং অল্প আঁচে চুলায় ৩-৫ মিনিট রান্না করুন। সবগুলো উপকরণ ভালোমত মিশে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
৪। একটি পাকা কলা নরম করে চটকিয়ে নিন এবং রান্না করা মিশ্রণের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে শিশুকে পরিবেশন করুন।
গাজরের পাউডার প্রস্তুত প্রণালী
১। গাজর ভালোমত ধুয়ে, ছিলে কুচি করে কেটে নিন।
২। গাজরের কুচিগুলোকে একটি পরিষ্কার সাদা রঙের সুতি কাপড়ে নিয়ে থলীর মত বেঁধে নিন।
৩। গাজরের থলিটিকে পর্যাপ্ত পরিমান গরম ফুটন্ত পানিতে ৩-৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে, উঠিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে (১-২ মিনিট) একইভাবে আবারও ৩-৫ মিনিটের জন্য গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে উঠিয়ে নিতে হবে।
৪। এভাবে ২-৩ বার গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে গাজরের থলিটিকে ঠাণ্ডা পানির প্রবাহের নিচে (সম্ভব হলে বরফ পানিতে) রাখতে হবে যাতে গরম পানির ভাব চলে যায়।
৫। গাজরের কুচি ঠাণ্ডা হলে পানি থেকে উঠিয়ে নিতে হবে এবং ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
৬। পানি ঝারানো হলে গাজরের কুচিগুলোকে পরবর্তী ১-২ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
৭। গাজরের কুচি শুকিয়ে মচমচে হলে গুড়া করে নিন।
৮। এভাবে প্রস্তুতকৃত গাজরের পাউডার একটি শুকনো, পরিষ্কার মুখবন্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং পুষ্টিগুড়া প্রস্তুতের সময় ব্যবহার করুন।
চালের গুড়া প্রস্তুত প্রণালী
১। চাল পরিষ্কার করে ধুয়ে ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালোমত পানি ঝরিয়ে নিন।
২। একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে পানি ঝরানো চাল ভালোমত মুছে নিন এবং বাতাসে শুকিয়ে নিন।
৩। এক ঘণ্টা পরে শুকনো চাল গুড়া করে নিন।
৪। এবার গুড়া করা চাল অল্প আঁচে চুলায় ভেজে নিন, চালের গুড়া হালকা বাদামী হলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
৫। চালের গুড়া ঠাণ্ডা করে পরিষ্কার শুকনা মুখবন্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং পুষ্টিগুড়া তৈরির সময় ব্যবহার করুন।
ডালের গুড়া প্রস্তুত প্রনালীঃ
১। ডাল ভালোমত পরিষ্কার করে নিন।
২। ডাল অল্প আঁচে চুলায় ভেজে নিন এবং হালকা বাদামী হলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
৩। একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে ভাজা ডাল ভালোমত মুছে নিন। এরপর ভাজা ডাল গুড়া করে নিন।
৪। ডালের গুড়া ঠাণ্ডা করে পরিষ্কার শুকনা মুখবন্ধ পাত্রে সংরক্ষন করুন এবং পুষ্টিগুড়া তৈরির সময় ব্যবহার করুন।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, শরীরের কোথাও র্যাশ, বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না। বাচ্চার কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে বা পেট ফুলেছে, প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
রেসিপি টি বাংলাদেশের জন্য পরিপূরক খাবার বিষয়ে ম্যানুয়াল উন্নয়ন গবেষণা থেকে তৈরি বুকলেট “৬-২৩ মাস বয়সী শিশুদের জন্য ঘরে তৈরি পরিপূরক খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী” থেকে গ্রহন করা হয়েছে। গবেষণাটি বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। গবেষণাটিতে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করেছে এফএও এবং আর্থিক সহায়তা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএসএআইডি।