নবজাতকের ঘুম সম্পর্কে ৫ টি প্রয়োজনীয় তথ্য যা হয়তো আপনার অজানা

Spread the love

অনেক নির্ঘুম রাত পার করে তবেই সদ্য হওয়া নতুন মা বাবা বুঝতে পারেন যে শিশুর ঘুম আর আমাদের ঘুমের মাঝে বিস্তর পার্থক্য। জেনে নিন এধরনের ৫ টি তথ্য-

কিছু শিশু সারা রাত জেগে থাকে আর সারা দিন ঘুমায়

চার্লস শুবিন, বাল্টিমোরের মের্সি ফ্যামিলি কেয়ারের পেডিয়াট্রিক্সের পরিচালক বলেন , অনেক নবজাতক আছে যারা দিনের সময়টা বেশিরভাগ ঘুমিয়ে কাটায় আর রাতেরবেলা সতর্ক হয়ে জেগে থাকে।আপনার শিশুটি যখন প্রতি ঘন্টায় জেগে উঠে হাত পা ছুড়ে আপনার আদর খুজতে থাকে আপনি তখন ক্লান্ত- পরিশ্রান্ত। শুবিন বলেন, “আমরা জানি এটি মোটেই সহজ কাজ নয় মা বাবার জন্য কেননা আমরা সারা রাত জেগে থেকে অভ্যস্ত নই।এই কারনেই এটি অত্যন্ত কঠিন সময়”।

যে সময়টিতে আপনার শিশু লম্বা সময় ধরে ঘুমায়, সে সময়টি তে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।জেনে রাখুন যে এই সময়টি খুবই সংক্ষিপ্ত। আপনার শিশুর ব্রেইন এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র পরিনত হওয়ার সাথে সাথে তার ঘুমের সময় ও বাড়তে থাকবে এবং সে রাতে বেশী ঘুমানো শুরু করবে কেননা বেশীরভাগ শিশুই এক মাসের কাছাকাছি সময়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে একই সময়ে ঘুমানো শুরু করে।

এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে আপনি রাতে তৈরী করতে পারেন শান্ত এবং অন্ধকার পরিবেশ। একইসাথে দিনে পর্যাপ্ত সুর্যের আলোয় রুম আলোকিত করতে ভুলবেন না। একজন মা তার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন-

“দিনে আমি আমার বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় তার সাথে অনেক্ষন সময় নিয়ে কথা বলতে থাকি কিন্তু রাতে তার একেবারে বিপরীত।আমি একেবারেই কথা বলিনা আর আলো নিভিয়ে রাখি” ।

এভাবেই তিনি অভ্যস্ত করছেন নিজের শিশুকে এবং নিজেকে।

শিশুদের ঘুমানোর সময় অত্যন্ত অনিশ্চিত

জন্মের প্রথম সপ্তাহগুলোতে শিশুদের ঘুমানো, পরীক্ষার আগের রাতের সেই ছাত্রটির মত যে কিনা এই ঘুমোচ্ছে তো এই জেগে উঠছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল জন্মের প্রথম সপ্তাহগুলোতে বেশীরভাগ শিশুই একেবারে দুই থেকে ৪ ঘন্টার বেশী ঘুমায় না।

আপনার নবজাতক শিশু সাধারনত প্রথম সপ্তাহে দিনে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা এবং এক মাস বয়স পর্যন্ত ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ঘুমাবে। কিন্তু মনে রাখবেন প্রতিটি শিশুই ব্যতিক্রম এবং একইভাবে তাদের ঘুমানোর সময়ও ।কারও ঘুমানোর সময় কিছুটা বেশী এবং কারো কিছুটা কম।

[আরও পড়ুনঃ নবজাতকের ঘুম । কেমন হতে পারে ? ]

দুর্ভাগ্যবশত, আপনার শিশুটি যদি ঘুমের পোকাও হয়, আপনার হয়ত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতেই রাত পার হয়ে যেতে পারে।সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা গেছে যে, ১০০ জনে ৭১ জন মা জানিয়েছেন যে বাচ্চা হওয়ার পর না ঘুমাতে না পারাটাই সবচাইতে জটিল সমস্যা।

আপনি হয়ত আপনার শিশুর বিক্ষিপ্তভাবে ঘুমানোকে এর জন্য দায়ী করতে পারেন। একজন মা বলেন-

“ তার ৯ সপ্তাহ বয়সি শিশুর ঘুম এতটাই বিক্ষিপ্ত যে মাঝে মাঝে তিনি হয়ত ৪ ঘন্টা ঘুমাতে পারছেন আর মাঝে মাঝে ১ ঘন্টা ও নয়”।

আবার অন্য একজন মা জানান,

“আমার ৯ দিনের বাচ্চা সারাদিন ই ঘুমায়, ৫-৬ মিনিটের জন্য জেগে থাকা ছাড়া।আমার কি চিন্তিত হওয়া উচিত”?

শিশু বিশেষজ্ঞ এবং ইট-স্লিপ-পুপঃ আ কমন সেন্স গাইড টু ইউর বেবি’স ফার্স্ট ইয়ারের ( Eat Sleep Poop: A Common Sense Guide to Your Baby’s First Year) লেখক স্কট কোহেন উত্তর দেন “মোটেই চিন্তিত হবেন না । কিছু কিছু নবজাতকের জন্য দিনে ২০ ঘন্টা করে ঘুমানো খুবই সাভাবিক। আপনার শিশু যদি এমন হয়ে থেকে তবে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান কেননা খুব তারাতারি ই আপনার শিশুর এই ঘুমানো পর্বের সমাপ্তি ঘটবে”।

শিশুদের ঘুমাতে পিনপতন নিস্তব্ধতার দরকার নেই।

ভাববেন না যে আপনাকে আপনার ঘুমন্ত শিশুর আশেপাশে ফিসফিস করে কথা বলতে হবে অথবা পা টিপে টিপে হাটতে হবে।শুবিন বলেন “বেশীরভাগ ছোট্ট সোনামনিরাই আলো, আওয়াজ-হট্টগোলের মাঝে ঘুমাতে পারে।আমাদের ঘুমাতে যেমন পরিবেশের দরকার হয় তেমনটা তাদের হয়না” ।

এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই কেননা শিশুরা যখন নয়টা মাস মায়ের পেটের ভেতর কাটায় সেটি খুব নিশ্চুপ কোন জায়গা নয়। মা এর হার্টবিট, ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীন অংগ প্রত্যঙ্গের আওয়াজ কিন্তু মোটেই আস্তে হয়না।

এক মা বলেন, “আমাদের শহরের ক্রিস্মাস প্যারেডে সব ফায়ার ট্রাক, এম্বুলেন্স , পুলিশের গাড়ির সাইরেন, হর্ন সব কিছুর মাঝেও আমার বাচ্চা ঘুমিয়ে ছিল।এমন কি সে চমকে ও উঠেনি একবার ও”।

অনেক নবজাতকই ভাল ঘুমায় যেখানে একই শব্দের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে যেমন ফ্যান অথবা মেশিনের শব্দ। এক মা বলেন-

বিজ্ঞাপণ

“ আমি আমার বাচ্চার দোলনা ঘুমানোর সময় ডিস ওয়াসার এর পাশে রেখে দেই আর সে খুব আরামে ঘুমিয়ে থাকে”।

শিশুদের জন্য কারও আলোকজ্জল গহনা অথবা হেটে আসা কোন মানুষের হাসিতে কিছু যায় আসেনা।কেননা তারা যখন ই ঘুম আসে তখন ই ঘুমায়।তাই আত্মীয়রা বেড়াতে আসলে তাদের আস্তে কথা বলতে বলার কোন প্রয়োজন নেই। তাই আপনি নিজে ও নিশ্চিন্তে আপনার শিশুকে নিয়ে যে কোন দাওয়াত খেয়ে আসতে পারেন।

শিশুদের এভাবে এমন শব্দদুষনের মাঝে ঘুমাতে দেখে অনেক মা বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন এটা ভেবে যে তাদের সন্তান ভালোভাবে কানে শুনতে পারেন কিনা। আপনি ও যদি এমন দুশ্চিন্তা করতে থাকেন তবে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে শিশুকে নিয়ে জেতে ভুলবেন না। কিন্তু শিশুকেই যদি জন্মের পর কান পরীক্ষা করে দেখা হয় তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এটা জেনে যে “আপনার শিশুটি ঠিক আপনার শিশুর মতই ঘুমাচ্ছে” ।

যতদিন সম্ভব এই সময়টি উপভোগ করে নিন আর যখন আপনার শিশুর এই প্রাথমিক পর্যায়টি পাল্টাতে শুরু করবে তখন আস্তে আস্তে আপনার সোনামনিকে একটি নিয়মের ভেতর ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং এটা ও জেনে রাখুন যে যখন থেকে আপনার শিশুর যখন তুখন ঘুমিয়ে পড়া কমতে থাকবে তখন থেকে আস্তে আস্তে আপনাকে অযাচিত আওয়াজ করা কমিয়ে দিতে হবে ,এমনকি বাসার ভেতরে হয়ত আপনাকে পা টিপে টিপে ও হাটটে হতে পারে।

এক একটি শিশুর ঘুমানোর ধরন কিন্তু এক এক রকম

শিশুরা হল একটি সাদা খাতার মত ।তারা তাদের নিজের ঘুমানোর ধরন নিয়ে আসে। “ সব বাচ্চাদের ঘুমানোর ধরন ভিন্ন ঠিক যেমনটা আমরা বড়দের কারো কারো ঘুম খুব পাতলা আবার কারো কারো ঘুম খুবই গাড়” –বলেন শিশু বিশেষজ্ঞ কোহেন।

সাধারনত একের অধিক সংক্ষক সন্তান যাদের আছে তারা এই ব্যাপারটি আরো ভালভাবে খেয়াল করেন। এক মা বলেন-

“ আমার এক সন্তান অনেক্ষন ধরে ঘুমাতো যেখানে আমার অন্য আর একটি সন্তান অনেক বেশী নড়াচড়া করত আর কিছুক্ষন পর পরই জ়েগে উঠত” ।

কোহেন বলেন ,বাচ্চাদের পার্সোনালিটিও ঘুমানোর ক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর। কিছু কিছু শিশু ঘুম না আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকে আর কিছু শিশু ঘুম আসলেই ঘুমিয়ে পড়ে।

আপনার সোনামনির ঘুমকে নিজের আয়ত্তে রাখতে আপনি আপনার শিশুর জন্য ঘুমানোর কিছু নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন আর বাচ্চাদের ঘুমের রুটিন ঠিক করা নিয়ে আমাদের আর্টিকেলগুলো পড়ুন নীচের লিঙ্কগুলোতে-

বাচ্চাদের ঘুমানোর স্থান খুব বেশি নরম ও আরামদায়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই

বেশ কিছু সময় আগে বাচ্চাদের দোলনাতে কাথা বালিশ দিয়ে মাথার কাছটা উচু করা হত কিন্তু পরীক্ষায় জানা গেছে যে বাচ্চাদের জন্য সমান্তরাল ঘুমানোর জায়গা তুলনা মুলকভাবে বেশী নিরাপদ।

বিজ্ঞাপণ

বাচ্চাদের জন্য তাদের মেরুদন্ডে ভর দিয়ে সোজা হয়ে ঘুমানো সব চাইতে বেশী নিরাপদ। কোন কাথা বালিশ না থাকলে আমাদের বড়দের জন্য ঘুমানোটা কস্টকর হলেও বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত কাপড় চোপড়ে কাথা বালিশ ছাড়া ও ঘুমানো যথেষ্ট আরামদায়ক।

শিশুর ঘুমানোর জায়গা থেকে কাথা , বালিশ , খেলনা এবং অন্যন্য সব কিছু সরিয়ে ফেলুন যা কিনা শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে অথবা নিশ্বাসে সমস্যা করতে পারে। কেননা এটি শিশুদের সিডস এর রিস্ক বাড়িয়ে দেয় যেটা কিনা যুক্তরাস্ট্রে ১ মাস থেকে ১ বছড় বয়সি শিশুর অকালে মারা যাবার কারন।

আরও পড়ুনঃ সাডেন ইনফ্যাণ্ট ডেথ সিন্ড্রোম (SIDS) বা শিশুর আকস্মিক মৃত্যু

আর বাচ্চার খেলনা বা বালিশ গুলো ব্যবহার করতে পারছেন না বলে মন খারাপ এর কোন কারন নেই। চাইলে দেওয়ালে উপর থেকে ঝুলিয়ে দিন অথবা আপনার রকিং চেয়ারে ব্যবহার করুন অথবা মাঝে মাঝে দিনের বেলা আপনার বাচ্চাকে খেলতেও দিতে পারেন যদি আপনি চান।

সবার জন্য শুভকামনা।

সূত্রঃ বেবীসেন্টার থেকে অনূদিত।

বিজ্ঞাপণ

Spread the love

Related posts

Leave a Comment