একটি শিশু জন্মের পর থেকে পরিণত অবস্থায় পৌঁছানো পর্যন্ত তার মধ্যে বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এগুলো আসলে বেড়ে উঠারই একটি অংশ, আর কিছু নয়। আর তেমনই একটি পরিবর্তন হচ্ছে শিশুর গ্রোথ স্পার্ট (Growth Spurt) বা দ্রুতবর্ধন।
গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধন যদিও বেড়ে উঠারই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবুও অনেক মা-বাবারাই, বিশেষ করে যারা নতুন মা-বাবা হয়েছেন, তারা এটি নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা ভয় পেয়ে বসেন যে তাদের শিশুর হয়তো কোনো অসুখ হয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা এই সমস্ত ভুল ধারণা দূর করে শিশুর গ্রোথ স্পার্টের ব্যাপারে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
শিশুর গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধন বলতে আসলে কী বোঝায়?
নাম শুনেই যেমনটা বোঝা যাচ্ছে, গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধন হচ্ছে এমন একটি সময়কাল, যখন শিশুর বিকাশ অন্য যেকোনো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি হয়। এই সময় শিশুর মাঝে রাতারাতি আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই সে ঘন ঘন খেতে চাইতে পারে, আবার তার স্বাভাবিক ঘুমের রুটিনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়াও শিশু অন্য সময়ের তুলনায় বেশি খিটখিটে আচরণ করতে পারে, সবসময় দেখবেন তার ভিতর একটা অস্থির ভাব কাজ করছে।
এখানে মনে রাখা জরুরি যে, এসব লক্ষণের সাথে মিল পেলেই যে সবসময় তার গ্রোথ স্পার্ট হচ্ছে তা নয়। বরং এমনও হতে পারে যে সে হয়তো নতুন কোনো দক্ষতা শিখছে, তারই অংশ এটি। অনেকসময় শিশুরা তাদের কোন মাইলস্টোন অতিক্রম করার সময়ও এসব আচরণ করতে পারে। তবে হ্যা সবগুলি লক্ষণ একসাথে আর অতিরিক্ত হতে দেখলে হয়তো আপনার শিশু আসলেই গ্রোথ স্পার্ট পার করছে।
গ্রোথ স্পার্টের সময় কি ঘটে?
গ্রোথ স্পার্টের সময় শিশুর ওজন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। খানিকটা লম্বাও হতে পারে, এমনকি মাথার পরিধিও কিছুটা বাড়তে পারে।
আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডাক্তার এবং গ্রোথ রিসার্চার মিশেলে ল্যাম্পল বলেন,”যখন একটি শিশুর গ্রোথ স্পার্ট হয়, তখন সেটি বেশ দ্রুত এবং তীব্রভাবে হতে পারে ; এই সময় মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শিশুর উচ্চতা এবং ওজন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে”। তার পরীক্ষা হতে জানা যায় গ্রোথ স্পার্টের সময় ২৪ ঘণ্টায় শিশু লম্বায় ৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাছাড়া এই সময় হয়তো শিশু নতুন কোন দক্ষতা পুরোপুরি রপ্ত করবে যা সে বেশ কিছু দিন ধরে শিখতে চেষ্টা করছিলো।
শারীরিক নয়, মানসিক বিকাশও ঘটছে!
শুধু শরীরের বৃদ্ধি নয়, এই সময় নিউরনের সংযোগ (synapse) তৈরির হারও বেড়ে যায়। অর্থাৎ শিশুর মস্তিষ্কও দ্রুত বিকশিত হয়, যা তার শেখার ক্ষমতা, ভাষা ও সামাজিক দক্ষতা তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
এই সময় শিশুরা হামাগুড়ি, বসা, দাঁড়ানো, কিংবা ছোট ছোট শব্দ বলা শেখে। এ কারণে তারা একটু অস্থির থাকে—নতুন স্কিল শেখার চাপ তাদের আচরণে প্রভাব ফেলে।
কখন গ্রোথ স্পার্ট হতে পারে এবং তা কতদিন ব্যাপী স্থায়ী হয়?
একটি শিশুর জন্মের প্রথম বছরে বেশ কয়েকবার গ্রোথ স্পার্ট হতে পারে। শুধুমাত্র প্রথম মাসেই কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পরপর গ্রোথ স্পার্ট হতে পারে, তবে এরপর সময়ের এই ব্যবধান বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে গ্রোথ স্পার্ট সাধারণত নিম্নলিখিত সময়গুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি :
- দ্বিতীয় সপ্তাহে।
- তৃতীয় সপ্তাহে।
- ষষ্ঠ সপ্তাহে।
- তৃতীয় মাসে।
- ষষ্ঠ মাসে।
- নবম মাসে
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে প্রত্যেকটি শিশুর বেড়ে উঠার ধরণ অপর একটি শিশুর থেকে ভিন্ন। তাই আপনার শিশুর যে এই সময়গুলোতেই গ্রোথ স্পার্ট হতে হবে তা নয়। এর আগে, মাঝে, পরে যেকোনো সময়ই হতে পারে। তাই এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
শিশুর গ্রোথ স্পার্ট চলাকালীন সময় মা-বাবাদের অনেক সময় মনে হয় যে এটি কখনোই শেষ হবেনা। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয়। সাধারণত নবজাতকের ক্ষেত্রে গ্রোথ স্পার্ট এক থেকে তিনদিন স্থায়ী হয়। আর একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে তা অনেক সময় এক সপ্তাহব্যাপীও স্থায়ী হয়। এই ধাপটা পার হয়ে গেলেই দেখবেন আপনার শিশু আবার আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধনের লক্ষণ
যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছে, গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধনের সময় শিশুর মধ্যে বিভিন্নরকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
শিশু অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকে : বেশিরভাগ মায়েরাই এই বিষয়ে একমত যে গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধনের অন্যতম লক্ষণ হলো এই সময় শিশু অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকে। অন্য সময় যদি তারা প্রতি তিন-চার ঘন্টা পরপর খেলেও এসময় তারা প্রতি দেড়-দুই ঘন্টা অন্তর অন্তরই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে।
তাছাড়া এই সময় তারা সাধারণের তুলনায় বেশিক্ষণ ধরে স্তন্যপান করে থাকে। আর যারা ফর্মুলা দুধ খায় দেখা যায় তারা খাওয়ার পরেও অতৃপ্ত অবস্থায় থাকে, যেন খিদে মিটে নি।
ঘুমের অনিয়ম : একটি ছোট সমীক্ষা হতে জানা যায়, গ্রোথ স্পার্টের প্রথম এক-দুইদিন শিশুরা অন্য সময়ের চেয়ে সাড়ে চার ঘন্টা বেশি ঘুমায়। এমনটা ঠিক কেন হয় তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, “হিউম্যান গ্রোথ হরমোন” নামের একটি হরমোন রয়েছে যা শিশু ঘুম থাকা অবস্থায় উৎপন্ন হয়। এই হরমোনটি বেড়ে উঠার জন্য খুবই জরুরি, তাই এই ক্ষেত্রে ঘুম শিশুর বেড়ে উঠার একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
কিছু শিশুর ক্ষেত্রে আবার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। তাদের গ্রোথ স্পার্টের সময় তুলনামূলক কম ঘুম হয়, এবং প্রায়শই মাঝরাতে তাদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে। প্রতি ঘন্টায় একবার ঘুম ভেঙে কান্না করা, খেতে চাওয়াটাও খুব স্বাভাবিক এই সময়ে।
আচরণগত পরিবর্তন : সদা উৎফুল্ল শিশুটিও গ্রোর্থ স্পার্টের সময় অনেক বেশি অস্থিরতায় ভোগে এবং অন্য সময়ের তুলনায় বেশি বিরক্ত করতে থাকে। সে চায় সবসময়ই তার সাথে কেউ না কেউ থাকুক এবং যখনই তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করা হয় তখনই সে কান্নাকাটি শুরু করে৷ এছাড়াও তাকে দেখে মনে হয় যে সে সবসময়ই একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় আছে এবং কারণে অকারণে কান্নাকাটি করতে থাকে।
আচরণের এমন পরিবর্তন কি কারণে হয় তার সঠিক কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে মনে করা হয় দ্রুত বৃদ্ধির জন্য তার শরীরের অতিরিক্ত শক্তি খরচের কারণে সে হয়তো ক্লান্ত থাকে, তার সাথে ঘুমের অনিয়ম তো আছেই৷ এসব মিলিয়ে তার আচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
অবশ্য, এমনও হতে পারে এই আচরণগত পরিবর্তনগুলো তার নতুন কোনো দক্ষতা শেখার পূর্ব লক্ষণ। যেমন হামাগুড়ি বা গড়াগড়ি দেওয়া। এই দক্ষতামূলক উন্নয়নগুলো গ্রোথ স্পার্টের সময় বা অন্য কোনো সময়ও দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চা যখন এই ধরণের আচরণ করতে থাকে তার কিছুদিন পরেই হয়তো তার নতুন কোন দক্ষতা প্রকাশ পাবে।
মায়েদের সাধারণ কিছু সমস্যা
শিশু যখন অনেক বেশি বিরক্ত করে এবং একটু পরপর খাওয়ার জন্য জেদ করে তখন মায়েদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তারা এটা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন যে তাদের সন্তান হয়তো ঠিক মতো খেতে পারছেনা। শিশুর গ্রোথ স্পার্ট হচ্ছে নাকি অন্য কোনো কারণে সে ঠিক মতো খেতে পারছেনা তা কিন্তু আপনি খুব সহজেই ধরতে পারবেন।
গ্রোথ স্পার্ট একটি সাময়িক ব্যাপার, কয়েকদিন বাদেই এটি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি আপনার বুকের দুধ উৎপাদন কম হয় বা অন্য কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তা ততক্ষণ অব্দি ঠিক হবেনা যতক্ষণ না আপনি কোনো প্রতিকার নিবেন।
শিশু যখন গ্রোথ স্পার্ট পার করছে, তখন তাকে ঘনঘন স্তন্যপান করান এবং তার বেশি বেশি যত্ন নিন। পাশাপাশি নিজেরও যত্ন নিন। শিশুর গ্রোথ স্পার্টের কারণে কিছু কিছু মায়েরাও ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকেন। চেষ্টা করুন যতটা পারা যায় বিশ্রাম নিতে, বেশি বেশি তরল পান করতে এবং পর্যাপ্ত খাবার খেতে।
গ্রোথ স্পার্টের সময় অনেক মায়েরা অন্য সময়ের মতো স্তন পরিপূর্ণ বোধ না করলে চিন্তায় পড়ে যান। চিন্তার কিছুই নেই, এই সময় আপনার শিশু অন্য সময়ের চেয়ে বেশি খাচ্ছে বলে এমনটা হচ্ছে। আপনার শিশুর খাওয়ার চাহিদা অনুযায়ীই আপনার শরীর কাজ করবে, তাই নিশ্চিন্ত থাকুন।
শিশুর গ্রোথ স্পার্টের সময় আপনার করণীয়
শিশু ক্ষুধার্ত থাকলে তাকে খেতে দিন : যেমনটা আমরা পূর্বেই জেনেছি, গ্রোথ স্পার্টের সময় শিশু অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকে। তাই যখনই সে খেতে চায়, তখনই তাকে খেতে দিন। দেখুন এই সময়টা বেশিদিন থাকবেনা। এটা কেটে গেলে সবকিছু আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাই তাকে নিশ্চিন্ত খেতে দিন। এতে করে আপনি ও সে দুজনেই নির্ভার থাকবে। অনেকেই বুকের দুধ পর্যাপ্ত হচ্ছেনা ভেবে ফর্মুলা দেয়ার চিন্তা করেন। এই বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বাচ্চার মধ্যে পর্যাপ্ত দুধ পাওয়ার লক্ষণগুলো খেয়াল করুন।
আর সে যদি ফর্মুলা দুধ খায়, সেক্ষেত্রে ফর্মুলার দুধের পরিমাণ অল্প অল্প বাড়ান। হঠাৎ করে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ফর্মুলা দিলে তার সমস্যা হতে পারে।
সময়ের আগেই শক্ত সলিড খাবার শুরু করতে যাবেন না, কারণ শক্ত খাবার দেয়ার জন্য নির্ধারিত সময় আছে। গ্রোথ স্পার্টের সম্ভাব্য সময়গুলো খেয়াল করুন। কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
বুকের দুধ নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়: বাচ্চা ঘন ঘন খাওয়ার মানেই এই না যে আপনার দুধ কমে গেছে। ও যত বেশি খাবে, শরীর তত বেশি দুধ তৈরি করবে। এটা এক ধরনের supply & demand সিস্টেম।
তাদেরকে ঘুমোতে সাহায্য করুন : এই সময় শিশুরা সারাদিনই অস্থিরতা এবং কান্নাকাটি, চিল্লাচিল্লি করে কাটায় বলে তারাও একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই তাদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। তাই তাদের যে ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে এটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। অনেক সময় তাদেরকে ঘুম পাড়াতে আপনার বেগ পেতে হতে পারে, সেক্ষেত্রে একটু ধৈর্য্য ধরে তাকে সামলান। কোলে নিয়ে হেঁটে, হালকা করে দোল দিয়ে, যেভাবে শিশু আরামবোধ করে সেভাবে শিশুর ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়টা নতুন মায়েদের জন্য কঠিন তবে আশার কথা হলো এটা খুব দ্রুত কেটে যায়, মাত্র কয়েকদিনের বিষয়।
[আরও পড়ুনঃ শিশুর ঘুম ]
চেষ্টা করবেন ঘুমের রুটিনে যেন খুব বেশি হেরফের না হয়। তাহলে, এই ধাপটি শেষ হয়ে গেলে পুনরায় পূর্বের রুটিনে ফিরে আসতে সুবিধে হবে।
তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখান এবং সহনশীল হন : গ্রোথ স্পার্টের সময়টাই শিশু সবকিছু নিয়ে অনেক বেশি বিরক্ত থাকে। এসময় তার আপনাকে পাশে পাওয়া খুবই দরকার। তাই ধৈর্য্য ধরে তার পাশে থাকুন এবং এমন কিছু করুন যাতে তার মন উৎফুল্ল হবে। যেমন অনেক শিশুরা গোসলের সময়টা অনেক পছন্দ করে। অথবা তাকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। গান বা ছড়া পারেন তাকে। মোদ্দাকথা তার পছন্দ হয় এমন কিছু করুন।
শিশুর ডায়াপার এবং ওজন বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রাখুন : এই কথাটি শুনে আপনার ভ্রূ কুঁচকে উঠলেও এটি কিন্তু একটি কার্যকরী উপায়। যেমন ধরুন, আপনার শিশু কয়েকদিন আগে যে জামাটি আরামে পড়তে পারতো আজ সেটি পড়তে তার একটু কষ্ট হচ্ছে৷ আর পুরোদিনে ৫-৬ বার ডায়াপার বদলাতে হচ্ছে। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কিছুই নেই, সব স্বাভাবিক আছে।
নিজের শিশুর এবং নিজের শরীরের যত্ন নিন : জন্মের প্রথম বছর শিশুরা অনেক কষ্টে থাকলেও তারা তো বোঝাতে পারেনা যে তারা কেমন বোধ করছে। তাই আপনাকেই বাড়তি নজর দিতে হবে। এসব লক্ষণ ব্যতীত শিশু অন্য কিছু যেমন জ্বর, ঘামাছি, ডিহাইড্রেশন বা অন্য কোনো সমস্যা বোধ করছে কিনা খেয়াল করুন। যদি করে থাকে তাহলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বাবার অংশগ্রহণ জরুরি:এই সময় শুধু মায়ের না, বাবার ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম পাড়ানো, ডায়াপার বদলানো, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ—এসবই মায়ের চাপ কমাতে সহায়তা করে।
পাশাপাশি নিজের শরীরেরও যত্ন নিন। এটি সহজেই বোধগম্য যে এই সময়টা আপনার জন্যও অনেক কঠিন।প্রথম দুটো গ্রোথ স্পার্ট ডিল করা মায়েদের জন্য অনেক বেশি ক্লান্তিকর এবং কঠিন হয়ে থাকে৷ তাই নিজেও ভালো করে খাওয়া দাওয়া করুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রয়োজনে ওই সময় অন্য কাউকে শিশুর দেখভাল করার দায়িত্ব দিন। গ্রোথ স্পার্ট একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে এটা জানলে এবং বুঝলে আপনি মানসিকভাবে আরও শক্ত থাকতে পারবেন এবং আপনার শিশুকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারবেন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?
গ্রোথ স্পার্ট আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্যই ক্লান্তিকর একটি ব্যাপার। তবে মনে রাখবেন এটি কেবলই অল্প কিছুদিনের ব্যাপার। তাছাড়া গ্রোথ স্পার্ট আপনার শিশুর স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বেড়ে উঠা এবং দক্ষতার উন্নয়নের একটি অপরিহার্য অংশ।
তবে দিন কয়েকের মধ্যে যদি আপনার শিশু পূর্বের রুটিনে ফিরে না আসে, খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি নিয়ে যদি তখনো সমস্যা করে তখন বিষয়টা চিন্তার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে শিশু জ্বর, বমি বা অন্য কোনো সমস্যায় ভুগছে কিনা। এগুলো কিন্তু গ্রোথ স্পার্টের সময় হওয়ার কথা নয়। তাই এমতাবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারকে জানানো প্রয়োজন।
শুধুমাত্র গ্রোথ স্পার্টের কারনে যে বাচ্চারা অস্থির হয়, তা কিন্তু না। অনেক বাচ্চা দাঁত উঠবার সময় খিটখিটে আচরণ করে। কখনো কখনো বাচ্চার প্রতিদিনের রুটিনে পরিবর্তন হলেও এমন হতে পারে । তবে বাচ্চা ক্রমাগত বিরক্ত বা কান্না করলে এবং বেশী সময় ধরে খাওয়া-ঘুম নিয়ে সমস্যা করলে বা লম্বা সময় আচরনগত পরিবর্তন চোখে পড়লে, ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।
সবার জন্য শুভকামনা।