৬ থেকে ৯ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর ঘুমের ধরণ ও করণীয়

Spread the love

৬ থেকে ৯ মাস বয়সের শিশুদের ঘুমের আদর্শ সময়সূচী কেমন হতে পারে 

৬ থেকে ৯ মাসের বেশিরভাগ শিশু দিনে ১৪ -১৫ ঘন্টা ঘুমায় (দিনে এবং রাতে মিলিয়ে)  এবং এ সময় তারা একবারে টানা দীর্ঘ সময় ঘুমাতে সক্ষম হয়। এ বয়সে অনেক শিশু দিনের বেলায় ঘুম কমিয়ে ৩ থেকে ২ বার ঘুমায়। একবার সকাল বেলা এবং একবার দুপুর বেলা।

কোন বয়স থেকে শিশুরা সারারাত ঘুমাতে শুরু করে?

সাধারণত ৬ মাস বয়সে শিশুরা সারারাত ঘুমাতে শুরু করে, যদিও কিছু শিশুর বেলায় সেটা নাও হতে পারে। যদি এখন আপনার শিশু রাতে ৮ ঘন্টা অথবা তার বেশি সময় ধরে ঘুমায়, এর মানে সে বুঝতে পেরেছে কিভাবে ঘুমাতে হয়। অভিনন্দন! এটাই ভালো লক্ষণ,  আপনি একটি ভালোই ঘুমাতে পারদর্শী সোনামণি গড়ে তুলছেন।

বিজ্ঞাপণ

যদি আপনার শিশু এখনো রাতে ৮ ঘন্টা না ঘুমায়, সেক্ষেত্রে আপনি একা নন। অনেক শিশু ৬ থেকে ৯ মাস বয়সে রাতে দুধ পান করার জন্য উঠে যায় । (যদিও অনেকে রাতে এ বয়সে সলিড খাবার খায় )।

এ বয়সে শিশুরা শুধু ক্ষুধার  জন্য রাতে জেগে উঠে না। আমরা সকলেই রাতে অল্প সময়ের জন্য কয়েকবার জেগে উঠি। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে আমরা খুব দ্রুত নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়ি। যা আমরা সকালে মনে ও করতে পারি না। যদি আপনার শিশু এই দক্ষতা আয়ত্ত করতে না পারে তবে সে রাতে জেগে উঠে কান্না করবে এমন কি তখন সে ক্ষুধার্ত না হলেও।

আমার শিশু কি ঘুমের প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত?

যদি আপনার শিশু এখনো আপনার পারিবারিক জীবনের সাথে মানানসই ঘুমের সময়ে অভ্যস্ত না হয় তবে এখনই উপযুক্ত সময় তাকে কিছু ভালো ঘুমের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। ঘুমের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি আপনার শিশুকে আরো সহজে ঘুমাতে, রাতে  দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে থাকতে এবং আরো নিয়মিত করতে সাহায্য করবে।

কেন আপনার শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় সমস্যা অনুভব করে

৬ থেকে ১২ মাস বয়সে যে শিশুগুলো ভালো ঘুমাতো তারা হঠাত করে রাত্রে জেগে উঠতে শুরু করে অথবা ঘুমিয়ে পড়তে অসুবিধা অনুভব করে। কেন? ঘুমের এই সমস্যার কারণ হতে পারে বেশিরভাগ সময়, আপনার শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশ, অঙ্গসঞ্চালনের উন্নয়ন সাধন বা তার সেপারেশন অ্যাঙ্গযায়েটি।

এই ৬ থেকে ৯ মাস বয়সে আপনার শিশু হয়তো বসতে, হামাগুড়ি দিতে, ঘোরাঘুরি করতে ও দাঁড়াতে শিখে। অর্জনের এক মহাসমারোহ! বাচ্চারা নতুন কোন খেলনা পেলে যেমন উত্তেজনায় ঘুমাতে চায়না ঠিক তেমনি এসব করতে শিখে সে এতোটাই উত্তেজিত থাকতে পারে যে এগুলোর কারণে সে ঘুমাতে নাও চাইতে পারে।  এমনও হতে পারে তার নতুন শেখা স্কিল আরেকবার করার জন্য উত্তেজনায় তার ঘুমও ভেঙ্গে যেতে পারে।

বিচ্ছেদের উদ্বেগ  বা সেপারেশন অ্যাঙ্গযায়েটি আপনার শিশুর রাতে জেগে উঠার আরো একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। সে আকুলতায় জেগে উঠে আপনাকে খুজতে পারে, যদি আপনি সেখানে না থাকেন তাতে সে কান্নাকাটি করতে পারে । কিন্তু আপনি তার কাছে আসার এবং আদর করার সাথে সাথেই সে শান্ত হয়ে যেতে পারে।

পরিশেষে, নতুন দাঁত উঠার ব্যাথা আপনার শিশুকে জাগিয়ে দিতে পারে। অবশ্য সব সময় আপনি বুঝতেও  পারবেন না কোন কারনে আপনার শিশু জেগে উঠেছে। মনে রাখবেন এই বয়সে জেগে উঠার অনেক গুলো ভালো কারনও  আছে। সুতরাং,  ভালো হয় নিজের প্রত্যাশার সাথে একটু আপোস করুন এবং সহজ থাকুন।

মনে রাখবেন প্রত্যেক শিশুই স্বতন্ত্র। কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে ভালো ঘুমায়। তাই অন্যের বাচ্চার সাথে তুলনা করে মন খারাপ করবেন না।

কিভাবে আপনার শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করবেন

ঘুমানোর সময়সূচী গড়ে তোলা ও অনুসরণ করা

যদি আপনি এখনো কোন প্রকার ঘুমের পদ্ধতি গড়ে না তোলেন তবে এখনি শুরু করুন। ঘুমের সময়সূচী আপনার শিশুকে রাতে শান্ত হতে সাহায্য করবে ও ঘুমের জন্য প্রস্তুত করবে। এই পর্যায় এসে বেশিরভাগ শিশু বাবা মায়ের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে শুরু করে। তাই তাদের এই সময়টাতে প্রশিক্ষণ দেয়াটা অনেক সহজ হয়।

বিজ্ঞাপণ

আরামদায়ক ঘুমানোর নিয়ম চালু করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু কিছু কাজ নিয়ম মেনে করুন। যদি আপনার শিশুর ঘুমাতে যাওয়ার আগের রুটিন হয় -গোসল করানো, তার সাথে খেলা-ধুলা করা, তাকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করা, এক দুটো গল্প শোনানো, ঘুম পাড়ানি গান করা,  তবে নিশ্চিত করবেন তা যেন প্রতিরাতে একিভাবে একিসময়ে হয়।

ঘুমের আগে পরপর কয়েক দিন কাজগুলো করলে সে-ও বুঝতে পারবে এখন ঘুমের সময় হয়েছে এবং তাকে ঘুম পাড়ানো সহজ হবে। যে কোন বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রুটিন প্রযোজ্য। শিশুরা এমন ধারাবাহিক রুটিন পছন্দ করে।

আপনার শিশুকে একটি ধারাবাহিক সময়সূচীতে অভ্যস্ত রাখুন

আপনারা দুজনেই উপকৃত হবেন যদি শিশুর ঘুমানোর জন্য একটি দৈনন্দিন সময়সূচী নির্ধারণ করতে পারেন। এর মানে এই নয় যে, আপনার শিশুকে প্রতিদিন ১২:১৫ মিনিটেই দুপুরের খাবার খাওয়াতে হবে। বরং সুন্দর ও সহজভাবে একটি নিদিষ্ট সময়সূচী অনুসরণের চেষ্টা করা।

যদি প্রতিদিন আপনার শিশু নির্দিষ্ট সময়ে দিনের বেলার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, খেলা-ধুলা ও রাতের ঘুমের জন্য তৈরি হয় তবে সে খুব সম্ভবত আরো সহজে ঘুমিয়ে যেতে পারবে।

আপনার শিশুকে নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়তে উৎসাহ দিন

বাচ্চা ভালোভাবে এবং পুরো রাত জুড়ে ঘুমানোর জন্য তার নিজ থেকে ঘুমিয়ে পরা শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ঘুমভাব আসার সাথে সাথে তাকে শুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে করে সে নিজে নিজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। যদি সে কান্না করে তবে তাকে কোলে নেয়ার আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে লক্ষ্য করুন আসলেই কি তার খারাপ লাগছে নাকি ঘুমানোর আগে কিছুটা হইচই মাত্র।

তাড়াতাড়ি বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন

যদি আপনার শিশু রাত সাড়ে ৮ টায় ঘুমাতে অভ্যস্ত থাকে,  কিন্তু এ সময় যদি সে শান্ত না থাকে তবে তাকে আধ ঘন্টা আগে বিছানায় শুইয়ে দিতে চেষ্টা করুন। এমন ও হতে পারে সে অতিরিক্ত ক্লান্ত এবং আপনি শুইয়ে দেওয়ার সাথে সাথে সে ঘুমিয়ে পড়লো, এভাবেই আপনি আপনার শিশুকে আরো নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ঘুমাতে সাহায্য করতে পারেন।

সবশেষে আবারো বলবো, আপনার শিশুর ঘুমের যথাসম্ভব একটি সময়সূচি অবলম্বন করুন। এধরনের রুটিন আপনার শিশুকে রাতে ভাল ঘুম যেতে সাহায্য করে এবং সে সতেজ অনুভূতি নিয়ে সকালে জেগে উঠে। ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হচ্ছে লক্ষ্য। যদি আপনি আপনার শিশুকে একদিন ৩টায় ঘুম পাড়ান এবং পরের দিন ১ টায় ঘুম পাড়ান, তাহলে তার একটি নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়তে সমস্যা হবে।

আরও পড়ুনঃ

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment