প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন

Spread the love

একটি পরিবারে একটি নবজাতকের আগমনের যে চিত্রটি সাধারণত আমাদের মনের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে- তা হোলো নতুন শিশুটিকে ঘিরে বাবা-মা এবং অন্যান্য পরিজনের উচ্ছ্বাস। কিন্তু বাস্তবে চিত্রটি সবসময় এরকমটি নাও হতে পারে।

গর্ভকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী বিভিন্ন ধরণের শারিরিক এবং মানসিক জটিলতার ভেতর দিয়ে একজন মা-কে যেতে হয় যা সাধারনভাবে অন্যদের বোঝার কথা নয়।

বিজ্ঞাপণ

বিশেষ করে সমস্যাটি যদি অনেকখানি মানসিক হয়, যার শারীরিক বহিঃপ্রকাশ সধারনত অন্যরা দেখতে পায় না। এক্ষেত্রে রোগীর জন্য বিষয়টি অনেক করুন এবং কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু প্রাকৃতিকভাবেই ‘মা’ তার শিশুর সবচে’ বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, তাই মায়ের জন্য প্রতিকূল বিষয়গুলোর শিকার হতে পারে নবজাতক শিশুটি।

প্রসব-পরবর্তী এরকম একটি মানসিক সমস্যা যেটি অনেক নতুন মায়েদের হতে পারে- যে সমস্যাটি কে মেডিক্যাল টার্মে বলা হয় প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। এই সমস্যাটি কিছু ক্ষেত্রে বাবাদেরও হতে পারে-সেক্ষেত্রে নবজাতকের ভরণপোষণ, ইমকাম, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি হতে পারে এর সম্ভাব্য কারন।

আমাদের এই আলোচনার বিষয়টি মূলতঃ মায়েদের সমস্যা নিয়ে যেহেতু সদ্যপ্রসুতির ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং সন্তান- জন্মদানজনিত বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন এই সমস্যার পেছনে অনেকাংশে দায়ী।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কি ?

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন হলো সন্তান জন্মদান-পরবর্তী একধরনের মানসিক সমস্যা যা সাধারন-বিষণ্ণতার পর্যায়ে থাকেনা এবং যে সমস্যার চিকিৎসা /ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজন (clinical depression)।

সন্তান জন্মদানজনিত শারিরিক ধকল, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এবং হরমনের বিভিন্ন জানা-অজানা প্রভাবের কারণে মায়েরা একটু খিটখিটে আচরন করতে পারে, তুচ্ছ কারণে অভিমান বা কান্নাকাটি হতে পারে- এগুলোকে সাধারণত বেবি ব্লুস (Baby Blues)- বলা হয় যা সাধারণত শিশুর জন্মের এক-দেড় মাসের মধ্যে কেটে যায়।

তবে বিষয়টি আর ‘Baby blue’- র পর্যায়ে থাকে না যখন এসব সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় যেমনঃ মা-কে ভয়াবহ আত্মগ্লানি এবং বিষণ্ণতা গ্রাস করে এবং বিষয়গুলো দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে কিংবা সময়ের সাথে বাড়তে থাকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলোকে রোগীর আচরণজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও বিষয়টি মূলত সন্তান জন্মদান-জনিত বিভিন্ন জটিলতার প্রভা্বে ঘটে। তাই এ-বিষয়টি নতুন এবং হবু বাবা-মায়েদের ভালভাবে জেনে নেয়া দরকার, যাতে ক’রে প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এর যেকোনো ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে কন্সাল্ট্যান্টের সাথে যোগাযোগ করা যায়।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন জনিত সকল উপসর্গ একই ব্যাক্তির মধ্যে থাকবে এমন কোন কথা নেই। তবে বেশ কয়েকটি উপসর্গ লিস্টের সাথে মিলে গেলে যথাযথ পদক্ষেপ নিন।

লিস্টের বাইরেও অনেক বিষয় থাকতে পারে, যেহেতু এই সমস্যাটির কারন/উপসর্গ এখনও অনেক কিছুই অজানা। (এই লেখাটি মূলত বিভিন্ন রিসার্চ আরটিক্যাল এবং বেশ কিছু কেস-স্টাডি থেকে(তার মধ্যে কয়েকটি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে) সংগ্রহ করা।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এর উপসর্গ:

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এর লক্ষন গুলো গর্ভধারণের আগের বা গর্ভকালীন বিষণ্ণতার লক্ষনগুলোর মতই। যদি নিম্নের লক্ষন গুলোর পাঁচটি বা তার বেশী লক্ষন আপনার মধ্যে প্রতিদিন, দিনের বেশীরভাগ সময় এবং অন্তত টানা দু সপ্তাহ দেখা যায় তবে ধরে নিতে পারেন আপনি প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।

  • যেকনো কিছু নিয়ে তেমন কোনো কারন ছাড়াই খুব বেশি দুশ্চিন্তা করা বা আতঙ্কিত থাকা যেমন বাচ্চার নিরাপত্তা, হাইজিন ইত্যাদি।
  • বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়ে বিশেষ করে বাচ্চার যত্নের বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেকে অযোগ্য মনে করা। ‘আমি একজন খারাপ /অযোগ্য মা’- এ ধরণের বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাওয়া এবং কোনোভাবেই কিছু নিয়ে রিলাক্স থাকতে না পারা।
  • প্রায় সময় কোনো বিশেষ কারন ছাড়া চিৎকার চেঁচামেচি , অভিশাপ দেয়া, কান্না-কাটি করা এবং এ ধরণের আচরণ সন্তান প্রসবের কয়েক সপ্তাহ পরও চলতে থাকা।
  • কোনো কিছুতে পূর্ন-মনোযোগ দিতে কিংবা ফোকাস করতে ব্যর্থ হওয়া , পৃথিবীর কোন কাজেই আনন্দ খুঁজে না পাওয়া, নিজের মন কি চাইছে বুঝতে না পারা এবং সার্বক্ষনিকভাবে আতঙ্ক, ক্রোধ, শুন্যতা বা বিষণ্ণতা অনুভব করা।
  • নবজাতকের মায়েদের ঘুমের অসুবিধা হবেই। কিন্তু, সুযোগ থাকলেও ঘুমাতে না পারা, এমনকি বাচ্চা ঘুম থাকলেও ঘুমাতে না পারা
  • লোকজনের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া, ক্রমাগত নিজেকে অবাঞ্চিত মনে হওয়া, সমাজ বা পরিবার থেকে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার চিন্তা করা ।
  • নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করা (ঘুমের ওষুধের ওভারডোয, ধারালো কিছু দিয়ে নিজের শরিরে আঘাত অথবা কাউকে কিছু না বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া, কিংবা এমন কিছু করা যা একজন সদ্য প্রসুতির পক্ষে ক্ষতিকর)। সর্বপরি যেকোনো মূল্যে এই ভয়ঙ্কর অবস্থার অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা।
  • গর্ভাবস্থায় যেমনটি আশা করেছিলেন নবজাতক পৃথিবীতে আশার পর ঠিক তেমন বন্ডিং / উচ্ছ্বাস না থাকা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক- কিন্তু বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে না পারা এবং সে কারনে অপরাধবোধে ভোগা এবং ক্রমাগত বিষণ্ণ বোধ করা।
  • কখনো নিজের নবজাতককে সমস্ত সমস্যার মুল হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তাকে অভিসম্পাত করা।
  • খাবারে অনীহা বা অতিরিক্ত খাওয়া। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
  • এতটাই ক্লান্ত লাগা যে বিছানা থেকেই উঠতে না পারা।
  • উপরোক্ত বিষয়গুলোর কোনো কারন খুঁজে না পাওয়া এবং ক্রমাগত নিজেকে একজন খারাপ/অযোগ্য মানুষ ভাবা এবং প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়া এটা ভেবে যে এই পরিস্থিতির কোন উন্নতি বা সমাধান কখনই হবে না।

এসকল উপসর্গগুলোর বেশ কয়েকটি যদি কারো সাথে মিলে যায় , তাহলে দেরি না করে এবং সর্বোপরি তাকে দায়ী না করে যত দ্রুত সম্ভব ট্রিটমেন্ট করানোর ব্যাবস্থা করানো বিশেষভাবে পরিবার এবং আশেপাশের মানুষের দায়িত্ব ।

পোস্টপারটাম সাইকোসিস নামের আরেক ধরনের কঠিন অসুখে এসময় মা আক্রান্ত হতে পারেন যার উপসর্গ এরকম:

  • দৃষ্টিবিভ্রম/হ্যালুসিনেশন
  • উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা
  • পাগলামি ভাব
  • ডিল্যুশন
  • আত্মঘাতি প্রবণতা

যদিও এটা বেশ দুর্লভ রোগ, তবুও এধরনের উপসর্গ দেখা মাত্রই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। অন্যথায় যে ভয়ংকর বিষয়গূলো ঘটে (বিভিন্ন যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটেছে)

  • পারিবারিক বিপর্যয় , ডিভোর্স এবং রোগীর আত্মহত্যা
  • নিরাপত্তাহীনতা এবং মায়ের অস্বাভিকতার কারণে নবজাতকের মানসিক ভারসাম্য এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে, যা ভবিষ্যতে অন্য অনেক বিপরজয়ের জন্ম দিতে পারে।
  • শিশু নির্যাতন (child abuse) : শিশুকে রেগে গিয়ে ঝাঁকানো / ছুঁড়ে মারা যার ফলে হতে পারে মায়ের হাতে নবজাতক হত্যার মতো ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা – যা আশেপাশের মানুষের খালি চোখে কখনই ব্যাখ্যা করা যাবে না।
    (লেখাটি পড়ে অনেকই হয়ত শিউরে উঠবেন, কিন্তু পৃথিবীতে অসংখ্য লোক এরকম অনেক কিছুর সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে যা কখনই বাইরে থেকে বোঝা যায় না)

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা কেন হয়?

হরমোন, জৈব, পারিপার্শ্বিক, মানসিক ও জন্মগত বিভিন্ন উপাদান সম্মিলিতভাবে এ ধরনের সমস্যার কারণ হতে পারে যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। কেউ কেউ হয়ত নিজেকে প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতার জন্য দায়ী করতে পারেন, কিন্তু এটি আসলে মায়ের কিছু করা বা না করার কারণে হয়না।

প্রত্যেকটি নতুন মা ই প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তবে কিছু কিছু মায়েরদের ঝুঁকি বেশী থাকে। ঝুঁকির কারণ গুলো হোল-

  • গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতা বা দুশ্চিন্তায় ভোগা
  • গর্ভাবস্থায় বা বাচ্চা জন্মদানের পরপরই কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যা মাকে বিচলিত করতে পারে
  • প্রসবকালীন কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা
  • গর্ভধারণ বা প্রসব সংক্রান্ত তীব্র কোন জটিলতা থাকলে
  • প্রসবের পর ক্লান্তি, ঘুমের ব্যাঘাত এবং বিশ্রামহীনতা
  • পূর্বে বিষণ্ণতার ইতিহাস বা পরিবারের কারো আবেগিয় মনোরোগের ইতিহাস থাকলে
  • অপরিকল্পিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারন করলে
  • পর্যাপ্ত মানসিক সহায়তা না পাওয়া
  • দাম্পত্য সমস্যা, সাম্প্রতিক তালাক বা বিচ্ছেদ
  • আর্থিক সমস্যা
  • বাচ্চা পালনের মানসিক চাপ
  • পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা না পাওয়া
  • দুর্বল আর্থ-সামাজিক অবস্থান
  • গর্ভধারণের আগে বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে

তবে মনে রাখতে হবে এ লক্ষণগুলো থাকা মানেই আপনি প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবেন তা নয়। অনেক এ ধরনের ঘটনা থাকা সত্ত্বেও সুস্থ জীবন যাপন করছেন। আবার কেউ কেউ এধরনের কোন ঘটনার সম্মুখীন না হয়েও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বিষণ্ণতা রোধে কি করা যেতে পারে?

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন আপনাকে অসহায় অবস্থায় পতিত করতে পারে।  বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরণের থেরাপি ও চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বিষণ্ণতায় ভুগলে তা বিশেশজ্ঞকে জানানো খুব প্রয়োজনীয়। তিনি বিষণ্ণতার মাত্রা জেনে আপনার করনীয় সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ দিবেন।

এক্ষেত্রে আপনাকে সাইক্রিয়াট্রিস্ট বা কাউন্সেলর এর সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দেয়া হতে পারে। বিষণ্ণতার ওষুধ হিসেবে আপনাকে  নিরাপদ antidepressants দেয়া হতে পারে। তবে এসবের জন্য অবশ্যয় বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করতে হবে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য নিচের পয়েন্টগুলো সহায়ক হতে পারে-

বিজ্ঞাপণ

জেনে রাখুন এবং মনে রাখুন

প্রথমেই আসি বাবা ও প্রসূতির আশেপাশের লোকজনের কাছেঃ

পরিবারের কারো এরকম সমস্যা হোলে তাকে যথাসম্ভব মানসিক সাপর্ট দিন। বিশেষ করে বাবাদের ভুমিকা এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখে। প্রসুতি যদি বেবি ব্লু জনিত খিটখিটে আচরণও করে তাকে ভরসা দিন, তাকে বেশ কিছুদিনের জন্য Judge করবেন না। সবসময় ধৈর্য রাখা পরিবারের অন্যদের জন্য খানিকটা চ্যালেঞ্জিং তবে, নবজাতক এবং মায়ের স্বার্থে তাদের সহযোগিতা বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয়।

দীর্ঘ নয় মাসের গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসবের অনেক বড় শারীরিক ধকলের পর মায়েরা স্বাভাবিকভাবেই বিধ্বস্ত থাকে, তার ওপর নবজাতকের দেখাশোনা করার জন্য রাত জাগতে হয়-সুতরাং একজন প্রসূতির প্রতি অবশ্যই নমনীয় এবং সহনশীল আচরণ কাম্য। মায়েদের অন্যান্য কাজের দায়িত্ব অন্তত প্রসব পরবর্তী এক দুই মাসের জন্য অন্যদের উপর ভাগ করে দেয়া এবং নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব দায়িত্ত্ব ভাগ করে নেয়া দরকার।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এর ক্ষেত্রে স্বামী কিংবা পরিবারের অন্যদের বিশেষভাবে কিছু স্টেপ নিতে হবে যেমনঃ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মা-কে সর্বদা Motivated রাখা, তার বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করা , এমনকি তার অন্যায্য কোন ব্যাবহারের সমালোচনা না করে ঠাণ্ডা মাথায় তাকে শান্ত করা এবং যথাসম্ভব তাকে সঙ্গ দেয়া।

একা মায়েদের ক্ষেত্রে / কিংবা একক পরিবারে বিষয়টি অনেকখানি কঠিন হয়, যার কারণে গর্ভাবস্থায় এ বিষয়ের প্রয়োজনীয় প্ল্যান করে রাখা দরকার।

এবার আসি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মায়েদের কাছেঃ

টিভি, ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন কিংবা সিনেমায় দেখানো মায়ের কোলে সন্তানের হাস্যজ্জ্বল মুখই সবসময় বাস্তব চিত্র নয়। অন্য কারো ফেইসবুকের হাস্যজ্জ্বল পারিবারিক ছবি দেখেও মনে করার কোন কারন নেই যে অন্যরা সুখের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। সন্তান জন্মদান এবং ঠিকভাবে লালল পালন পৃথিবীর সবচে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি ।

আপনার সন্তান আনপার শরীরের অংশ হলেও পৃথিবীতে সে একজন আগন্তুক , সুতরাং ‘কলিজা-ছেঁড়া’ ধরণের অনুভূতি যদি বাচ্চার জন্য না থেকে থাকে, নিজেকে অস্বাভাবিক বা অযোগ্য মা ভাবার কিছুই নেই। আপনার বাচ্চার সাথেও পরিচিত হতে হয়তো আপনার কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এতে ভাবনার কিছুই নেই। একেক জনের শারীরিক এবং মানসিক সামর্থ্য একেকরকম এবং সেক্ষেত্রে নিজেকে অন্য কারো সাথে তুলনা করে বিপর্যস্ত হওয়া বড় ধরণের বোকামী ।

আপনি যদি নতুন মা হন, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে অন্যের সাহায্য নিন। অন্যেরা আপনার উপর বিরক্ত হচ্ছে কিনা, আপনি অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন কিনা, কেউ নিজে থেকে আপনাকে কেয়ার করছেনা কেন?- ইত্যাদি চিন্তা কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার চেষ্টা করুন।

সেইসাথে আপনার সমস্যা অন্যের সাথে শেয়ার করলে তারা আপনার সম্পর্কে কি ধারনা করবে- জাতীয় চিন্তা বাদ না দিলে সমস্যা বরং আরও বাড়বে। সমস্যা শেয়ার করুন এবং সাহায্য চান । আপনার এ সমস্যাটি আপনার একার নয় বরং পরিবারের সবার।

বাচ্চাকে স্ট্রলারে বসিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসুন। অথবা কোন বান্ধবীর সঙ্গে কাছের কোন কফি শপে কথা বলে আসুন। বাইরের খোলা বাতাস, সূর্যের আলো, আলাপ এসবই আপনার ও বাচ্চার জন্য ভাল। যদি বাইরে গিয়ে ঘুরে আসা আপনার জন্য কঠিন হয়, তবে বাসার বারান্দায় গিয়ে দাড়ান, গভীর ভাবে শ্বাস নিন, সূর্যালোক উপভোগ করুন। এগুলো মনকে হালকা করবে।

বন্ধুবান্ধব, পরিজন এবং আপনি সঙ্গ পছন্দ করেন এরকম ব্যাক্তিদের সাথে সময় কাটান, অন্তত পক্ষে চেষ্টা করুন।আপনি সদ্য বাচ্চা প্রসব করেছেন। বাচ্চা ঘুমালেই বাসার কাপড় ধোয়া বা বাসা পরিষ্কার করার মতো কাজে ঝাপিয়ে পড়ার মানে নেই। হালকা কাজগুলো ধীরে ধীরে করতে থাকুন। এতে মন ব্যস্ত থাকবে। ঘুমানোর চেষ্টার সময় ফোনের রিংটোন কমিয়ে রাখুন বা ফোন বন্ধ রাখুন।

যদি আপনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকেন, তবে অফিসের কথা একেবারের ভুলে যান। এসময় রান্না করতে ইচ্ছে না হলে স্বামীকে বলুন খাবার কিনে আনতে। হয়তো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা ততটা বাস্তবিক শোনায় না, তবে নিজেকে প্রশান্ত রাখা এসময় ভাল কাজ দেয়।

বিজ্ঞাপণ

‘এটা কর’/‘ওটা কেন করলে?’/‘সেটা কেন করলে না?’ /‘এ আবার কেমন মা?’ /‘আমরা কি বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করি নি?’-এ জাতীয় প্রশ্ন/অভিযোগ /উপদেশ ইত্যাদির জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হোন। আর শুনলেই এক গাল হেসে কানের ও পাশে বের করে দিন। আপনি জানুন , বুঝুন, এবং আপনিই সিদ্ধান্ত নিন।

চারপাশের পরিবেশ হয়তো কিছুদিনের জন্য প্রতিকূল হতে পারে, কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আপনার বাচ্চার জন্য সেরাটা শুধু আপনিই ভাবতে বা করতে পারেন।

দিনরাত ২৪ ঘন্টা বাচ্চার দেখাশুনা করা সত্যিই ক্লান্তিদায়ক, যদি আপনাকে একটা একা করতে হয়। বিশেষত বিষণ্নতায় আক্রান্ত মায়ের যখন বিশ্রামের দরকার, হয়তো তখনো তিনি বিশ্রামে যেতে পারেন না বাচ্চার দেখভাল করতে গিয়ে। অথচ এ সময় বিশ্রাম খুবই জরুরী।

প্রতিদিনই নিজের জন্য কিছু সময় বের করার চেষ্টা করুন- ঘুমান, টিভি দেখুন বা একটা ম্যাগাজিন পড়ুন। বিশ্রামের সময় বাচ্চাকে দেখার জন্য শাশুড়ি বা অন্য আত্মীয়ের সাহায্য নিন। অথবা একজন আয়া রাখুন।

অনেক সময় একটু পরিচ্ছন্ন থাকা, হালকা সাজ আপনার মনকে প্রফুল্ল করতে পারে। তাই বাহ্যিকভাবে সুন্দর থাকাকেও গুরুত্ব দিন। আরাম করে গোসল করুন এবং এসময় আপনার স্বামীকে বলুন বাচ্চার দেখাশুনা করতে। স্বামী ও বাচ্চাকে নিয়ে হয়তো ঘুরতে গেলেন বা কোথাও খেতে গেলেন। আপনার  পছন্দের জামাটি পড়েই বের হন। এগুলোতে মন ভাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এর উপসর্গ দেখা গেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসক কিংবা কন্সাল্ট্যান্টের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, এই সমস্যা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় যা শুধু আপনার সাথেই ঘটছে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য। পৃথিবীর সকল মা অসাধারণ -হয়তো একেক জন একেক রকমের।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment