সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রভাব | প্যারেন্টাল ফেভারিটিসম

Spread the love

কোন সন্তানটি আপনার বেশি প্রিয়? কোন বাবা মাকে যদি এই প্রশ্ন করা হয় তবে এর তাৎক্ষনিক উত্তর হবে “কেউ না, সবাই সমান প্রিয়”। এমন বাবা মা হয় নাকি যারা তার কোন এক সন্তানকে অন্যদের চাইতে বেশি পছন্দ করবেন? বাবামায়ের কাছে তো সব সন্তানই সমান। ভালোবাসা, আদর, মমতা সবই সমান। তবে সত্যিটা হলো- এমন বাবা মা অনেকেই আছেন।

আমাদের সমাজে অবধারিতভাবে এমনটা মনে করা হয় যে প্রত্যেকটা সন্তানকেই বাবা মা একই রকমভাবে পছন্দ করেন। তবে এখনকার করা অনেক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। একাধিক সন্তানের অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি ভালোলাগা, আচরণের ভিন্নতা সত্যিই বিদ্যমান, যতই আমরা তা অস্বীকার করতে চাইনা কেন। শুধু তাই নয় এসব গবেষণায় এমন আচরণের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপণ

বাবা মায়ের এমন আচরণ শুধু যে কম প্রিয় শিশুটির ক্ষতি করে এমন না, বরং যে শিশুটি তুলনামূলক বেশি আদর পাচ্ছে তারও ক্ষতি করতে পারে সমানভাবে। এই বিষয়টির বিভিন্ন খুঁটিনাটি এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়েই এই আর্টিকেল। 

মা বাবার পক্ষপাতমূলক আচরণ বা প্যারেন্টাল ফেভারিটিসম আসলে কি?

সহজভাষায়, যখন বাবা মা কোন এক সন্তানের প্রতি নিয়মিত পক্ষপাতমূলক আচরণ প্রদর্শন করে তখন তাকে প্যারেন্টাল ফেভারিটিসম বলা হয়। যদি কোন সন্তান সবসময় ভালো উপহারটা পায়, মনোযোগ এবং সময় বেশি পায়, বাবা মায়ের আদর বেশী পায় তখন এগুলোকে পক্ষপাতিত্ব বলা যেতে পারে। তবে এর প্রধান শর্ত হচ্ছে এধরণের আচরণ নিয়মিত হতে হবে। যদি কোন সন্তানের অসুস্থতার কারণে বাবা মাকে এমন আচরণ করতে হয় তবে সেটাকে প্যারেন্টাল ফেভারিটিসম বলা যাবেনা। 

আবার অনেক সময় দেখা যায় সন্তানেরা একটা অভিযোগ তোলে তার বাবা মা তার থেকে তার অপর কোনো সহোদরকে বেশি পছন্দ করে। অর্থাৎ বাবা মায়ের স্পষ্ট কোন পক্ষপাতিত্ব না থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের মনে হয় তারা বঞ্চিত।

সমাজবিজ্ঞানী Katherine Conger এর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগ মায়েরা এবং ৭০ ভাগ বাবারা তাদের কোন এক সন্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। একই গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম সন্তানেরা বলেছে তাদের মনে হয় তারা বাবা মায়ের বেশি প্রিয় এবং তার ছোট ভাই বা বোন বলেছে তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারে যা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

এই দুটি বিষয় নিয়েই বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে এবং সন্তানের উপর এগুলোর ক্ষতিকর বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে।

তবে মনে রাখতে হবে ভালোবাসা এবং ভালোলাগা দুটো আলাদা শব্দ। এদের অর্থও ভিন্ন। একজন মা অথবা বাবা হয়তো তাদের সব সন্তানকে একইভাবে ভালবাসেন কিন্তু ভিন্ন সন্তানের প্রতি তাদের ভালোলাগা এবং আচরণ ভিন্ন হতেই পারে। এর মানে এই নয় যে তারা সেই সন্তানকে ভালবাসেন না।

মা বাবারা কেন এমন আচরণ করেন

বেশিরভাগ বাবা মায়েরা তাদের প্রত্যেকটি সন্তানের প্রতি ফেয়ার থাকার চেষ্টা করলেও কখনো কখনো নিজের অজান্তেই কোন এক সন্তানের প্রতি বেশি ঝুঁকে পরেন। যেমন ধরুন, কোন বাচ্চা যদি খুব বেশি খিটখিটে মেজাজের হয় তবে বাবা মা হয়তো শান্ত বাচ্চাটিকেই বেশি ফেভার করবেন, তার সাথে সময় বেশি কাটাবেন। কোথাও যাওয়ার সময় হয়তো খিটখিটে বাচ্চাটিকে বাসায় রেখে যেতে চাইবেন বা তার দিকে মনোযোগ একটু কম থাকবে।

যে বাচ্চাটি দেখতে আপনার মত, তার ব্যাক্তিত্ত, আচার আচরণ সবই আপনারই প্রতিচ্ছবি, তার ভেতর নিজেকে দেখতে আপনি গর্ববোধ করবেন এটাই স্বাভাবিক। এমন ক্ষেত্রেও আপনি না চাইলেও অনেক সময় সে সন্তানের প্রতি আলাদা টান এসে পরে। একইভাবে যে সন্তানের মধ্যে আপনার নিজের খারাপ গুনগুলো দেখতে পাবেন যা আপনার সীমাবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেবে, তখন অবচেতনভাবেই তার উপর রাগ জন্মাতে পারে বা তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে পারেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রথম সন্তান বাবা মায়ের বেশি আদরের হয় কারণ জন্মের পর অনেকটা সময় সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবেই থাকে এবং সব আদরের পূর্ণ অধিকার দখল করে রাখে। দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার আগেই যেহেতু বাবা মা বেশ অভিজ্ঞ হয়ে জান তাই সে সন্তানের ক্ষেত্রে যত্নআত্তি একটু কমই লাগে। এটা বাবা মায়ের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও দ্বিতীয় শিশুটি যখন বোঝার মত বড় হয়ে যায় তখন সে এটাকে পক্ষপাতিত্ব বলেই মনে করে।

আবার অনেক সময় পরিবারের ছোট সন্তানটি বাবা মায়ের প্রিয় হয় কারণ সে পরিবারের সব চাইতে ছোট সদস্য। বাবা মা সব সময় চেষ্টা করেন তাকে বড় ভাই বোনের দুষ্টুমি থেকে রক্ষা করতে। শুরুতে এটা কোন সমস্যা না হলেও যখন সে যথেষ্ট বড় হওয়ার পরও বাবা মায়ের একই আচরণ চলতে থাকে তখনই বাঁধে বিপত্তি।

মাঝের সন্তানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে “প্রিয়” স্থানটি পায়না যদি না তাদের মধ্যে অসাধারণ কোন গুণাবলী না থাকে। গবেষকরা একে “Middle child syndrome” নামে অভিহিত করে থাকেন। সন্তানের সংখ্যা তিনজন হলে সাধারণত এটি বেশি দেখা যায় তবে মাঝের সন্তানটি যদি পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান বা মেয়ে সন্তান হয়ে তবে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

সব বাবা মাই সন্তানদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। সন্তান ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, আরও কত কি! এমন বাবা মায়েরা, যে সন্তানের মধ্যে সেসব স্বপ্ন পূরণ করার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা দেখতে পান, সে সন্তানের লেখাপড়া, ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নিয়ে একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পরেন। ফলাফল সরূপ সে সন্তানই বাবা মায়ের আদর, সময় এবং মনোযোগ অন্য ভাইবোনের তুলনায় একটু বেশি পায়।

কখনো কখনো বাবা মায়ের জীবনে আগে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা বা অভিজ্ঞতার কারণেও এমন হতে পারে। যে কোন মানুষের ছোটবেলায় নিজেদের বাবা মায়েদের সাথে বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সাথে সম্পর্কে তাদের বর্তমান সম্পর্কে বেশ প্রভাব বিস্তার করে।

কোন সন্তান যদি আপনার প্রিয় কোন ব্যাক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় তবে সে সন্তানের সংসর্গ আপনাকে সেই ভালোলাগার অনুভূতি দিতে পারে আবার কোন সন্তান যদি এমন কোন মানুষের কথা মনে করিয়ে দেয় যার সাথে কোন খারাপ অভিজ্ঞতা জড়িত তবে সেই সন্তানের আচরণে আপনার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।  

তবে অনেকসময় বাবা মায়েদের সন্তানের কোন মানসিক বা শারীরিক সমস্যার কারণে তার দিকে মনোযোগ বেশি দিতে হয়। আবার একেবারে নবজাতকদের তার অন্যান্য ভাইবোনের তুলনায় বেশি সময় এমনিতেই প্রয়োজন।  এসব ক্ষেত্রে অন্য সন্তানেরা এ প্রয়োজনটা বুঝতে পারলেও বাবা মাকে বেশি কাছে না পাওয়াটা খুব সহজে মেনে নিতে পারেনা।

আবার অনেক সময় কোন সন্তানের যদি মানসিক কোন সমস্যা থাকে (অটিজম বা ADHD) তবে বিষয়টি দু ধরণের হতে পারে। প্রতিবন্ধী শিশুটি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত এবং স্বাভাবিক শিশুটি সকল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে আবার স্বাভাবিক শিশুটি পুরপুরি উপেক্ষিত হতে পারে কারণ অসুস্থ শিশুটির বাবা মায়ের অনেকটা সময় প্রয়োজন হয়।

সবশেষে আছে ছেলে এবং মেয়ে বাচ্চার পার্থক্য যেটা আমাদের সমাজে খুব বেশি প্রচলিত। ছেলে বাচ্চাদের যেহেতু আমাদের সমাজে বার্ধক্যের সম্বল হিসেবে মনে করা হয় তাই তার প্রতি একটু বায়াসনেস বেশিরভাগ বাবা মায়েরই চলে আসে।

বিজ্ঞাপণ

সন্তানের উপর প্যারেন্টাল ফেভারিটিসমের প্রভাব

শিশুর বয়স যখন দুই বছর হয় তখন থেকেই তাদের মধ্যে নিজস্বতা এবং স্বাধীনচেতা মনোভাব প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই সময় থেকেই সাধারণত শিশুরা তুলনা করতে শুরু করতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় সহোদরদের মধ্যে কিছুটা জেলাসি চলে আসে।তার সাথে যদি মা বাবার পক্ষপাতিত্ব যোগ হয় তবে তা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে।

বাবা মা যখন একজনের প্রতি বিশেষ আচরণ করতে থাকেন তবে তা বঞ্চিত শিশুটির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে, শিশুটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। অনেক সময় সে নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করে এবং তার মধ্যে নির্বিকার ভাব চলে আসে। কারণ সে ভাবতে থাকে কোন কিছুতেই সে তার বাবা মায়ের প্রিয় হতে পারবেনা। এসব কিছুরই দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকতে পারে যা তার স্কুল এবং পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রের পারফরমেন্সে এবং বিভিন্ন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

অনেক শিশু আবার দেখা যায় তাদের এই অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং পরবর্তীতে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে ওঠে। কারণ তারা জীবনটাকে স্বাধীনভাবে দেখতে পারে এবং তাদের পরনির্ভরশীলতা কম থাকে। এটি আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও এই ধরণের মনোভাব একাকীত্ব তৈরি করে। 

বাবা মায়ের প্রিয় সন্তানটিও কিন্তু এসব ক্ষেত্রে খুব ভালো থাকেনা। যেহেতু ছোট বয়স থেকেই তারা বুঝতে শেখে তার নির্দিষ্ট কোন আচরণের কারণেই সে বাবা মায়ের প্রিয় তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার ইচ্ছা অনিচ্ছা সে বিসর্জন দেয়। তারা যেহেতু বাবা মায়ের বাহবা পেয়েই অভ্যস্ত তাই তারা মনে করে কোন ভাবেই ব্যর্থ হওয়া যাবেনা। সব কিছুতেই সফলতা পাওয়ার জন্য তারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।

এসব শিশুরা বাবা মায়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পরে যা তাদের বিভিন্ন সম্পর্কের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাবা মায়ের সাথে তার সম্পর্ক এবং তাদের আদর ভালোবাসার বিচারে সে তার অন্যান্য সম্পর্কের তুলনা করতে শুরু করে যেটা পাওয়া খুবই অবাস্তব। সবচাইতে বড় কথা হলো নিজের ভাইবোনের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে যার জন্য সে কোনভাবে দায়ী নয়।

এসব কিছু মিলিয়ে উভয় সন্তানই পরবর্তী জীবনে বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা এবং অন্যান্য আরও মানসিক সমস্যার শিকার  হতে পারে।

প্যারেন্টাল ফেভারিটিসমের কারণে শিশুর মধ্যে রাগ, উগ্র মেজাজ, অতিরিক্ত জিদ ইত্যাদির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। বঞ্চিত শিশুটি এসবের প্রয়োগ ঘটায় তার সহোদরদের উপর কারণ সে জানে বাবা মায়ের সাথে এসব করলে সে আরও অপ্রিয় হয়ে উঠবে। বঞ্চিত সন্তানটি যদি বড় সন্তান হয়ে থাকে তবে খেয়াল করে দেখবেন সে কখনো কখনো আপনার চোখের আড়ালে ছোটটির গায়ে হাত তুলছে।

আবার যে সন্তানটি গুরুত্ব বেশি পায় তার মধ্যে অতিরিক্ত বায়না করা, জিদ দেখানো ইত্যাদির প্রবণতা বাড়তে পারে। কারণ তারা মনে করে তারা যা চাইবে তাই পাবে। তাদের মধ্যে “সুপিরিয়র” মনোভাব চলে আসে যা তারা সবার সাথেই খাটাতে চেষ্টা করে। এর একটি উদাহরণ হলো- যদি আপনি বড় সন্তানটিকে ছোটটির সামনে নিয়মিত বকাঝকা করেন তবে খেয়াল করবেন ছোটটিও তার বড় বোন বা ভাইয়ের সাথে একই আচরণ করতে থাকবে। আর এসবের ফলাফল হলো “সিব্লিং রাইভালরি” যা পরবর্তীতে বেশ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে এমনকি এর কারণে সহোদরদের পরস্পরের ক্ষতি করার উদাহরণও কম নেই।

সবচাইতে ভয়ের কথা হলো, যাকে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন আর যাকে দিচ্ছেন না, তাদের দুজনের মধ্যেই পরবর্তীতে আপনার প্রতি রাগ, দুঃখ, ঘৃণা বা অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। বঞ্চিত শিশুটির মধ্যে এমন মনোভাব আসা স্বাভাবিক। কিন্তু যে শিশুটির আপনার প্রিয় হয়ে উঠতে গিয়ে তার নিজস্ব সবকিছুই বিসর্জন দিতে হচ্ছে এবং নিজের ভাইবোনের সাথে তার যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে তাতে তার মধ্যেও এমন মনোভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও খুব একটা কম নয়।   

বাবা মায়ের করণীয়

আমাদের মনে খুব সুপ্তভাবেও যদি কোন এক সন্তানের প্রতি আলাদা টান থাকে সেটা আমরা কখনোই স্বীকার করতে চাইনা। কিন্তু এটা মেনে নেয়াটা জরুরী। যখনই আমরা এটি মেনে নিতে পারবো তখনই এই আচরণ শুধরানোর দিকে আমরা অনেকটুকু এগিয়ে যেতে পারবো।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা মায়ের পক্ষপাতমূলক আচরণের সৃষ্টি হয় সন্তানের আচরণের কারণে। কোন সন্তান যদি অবাধ্য এবং উগ্র মেজাজের হয় এবং কোন সন্তান যদি খুব শান্ত স্বভাবের এবং বাধ্য হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ভালোলাগা সেই শান্ত সন্তানটির প্রতিই থাকবে। আর এই ধরণের বিষয় যখন হয় তখন আমারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম ভালোলাগার সন্তানটির সব কিছুই ইগ্নোর করে যাই। তার ভালো গুনগুলোও আমাদের চোখে পরেনা।  

মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি শিশুর কিছু খারাপ আবার কিছু ভালো গুণাবলি আছে। তাই অপ্রিয় সন্তানটির ভালো গুণাবলীগুলোর দিকে নজর দিন।তার এসব গুণাবলী নিয়ে ভাবুন, সেগুলোর প্রশংসা করুন প্রয়োজনে পরিবারের সবার সামনে তার প্রশংসা করুন। দেখবেন তার সব অবাধ্য আচরণগুলো আপনার কাছে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।  

অপ্রিয় সন্তানটিকে আলাদা করে সময় দিন। যদি মন থেকে না আসে তবে জোর করে দিন। তার যেসব কাজ পছন্দ তার সাথে সেসব কাজই করুন। আপনার প্রিয় সন্তানটির বা আপনার নিজের পছন্দের কাজ তার উপর চাপিয়ে দিবেন না। সবার সব কিছু প্রিয় নাও হতে পারে। এতে আপনাদের বন্ধন ধীরে ধীরে জোরালো হতে থাকবে।

নিজের বলা কথাগুলোর দিকে মনোযোগ দিন। এমন কোন কথা কখনোই বলবেন না যা সন্তানদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করে। আমারা অনেকেই মজা করে বলি “ও আমার বেশি প্রিয়”। কিন্তু আপনার কাছে যেটা মজা করা মনে হচ্ছে সেটা নিজেকে অপ্রিয় ভাবতে থাকা সন্তানের কাছে অনেক গুরুতর বিষয় হতে পারে। এমনকি সন্তান যদি ভুল মনে করে যে আপনি তাকে কম পছন্দ করেন তবুও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিন। তার সাথে কথা বলুন। তাকে আশ্বস্ত করুন।

নিয়ম কানুন সব সন্তানের জন্যই সমান রাখুন। জন্মদিন বা কোন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া কোন উপহার দিলে সবাইকেই দিন। বড় সন্তানকে বয়স উপযোগী কিছু কিনে দিলে ছোট সন্তান সে বয়সে আসার পর তাকেও দেয়ার চেষ্টা করুন। মোট কথা সব সন্তানকে একইভাবে ট্রিট করুন।

পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা আপনার সন্তানদের সাথে সম্পর্কে কোন প্রভাব ফেলছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। এতে আপনার সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি বুঝতে পারবেন শুধুমাত্র সন্তানের আচরণের কারণেই আপনার মধ্যে এই বোধটা আসছে নাকি এর পেছনে আরও বড় কোন কারণ রয়েছে। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নিতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই।

যদি কোন সন্তানের শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণে অনেক বেশি মনোযোগের প্রয়োজন হয় তবে অন্য সন্তানদের তাদের বয়সের উপযোগীভাবে বুঝিয়ে বলুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে তাদের সাথে সম্পূর্ণ একা সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। বাবা মা আলাদাভাবে তাকে সময় দিতে পারেন।

সবশেষে মনে রাখবেন, আপনার সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্কে অন্য সব সম্পর্কের মতই। এতে অনেক চড়াই উতরাই থাকবে। সব সম্পর্কের মতই একে এগিয়ে নেয়ারও সুযোগ থাকবে। কি কারণে এ সম্পর্কে ব্যঘাত ঘটছে সেটা জানতে চেষ্টা করাটা জরুরী। ভিন্ন সন্তানের প্রতি আপনার ভালোলাগা ভিন্ন হতেই পারে। তবে এটা খুবই জরুরী যাতে সব সন্তানই বাবা মায়ের কাছ থেকে সমান ভালোবাসা এবং যত্ন পায়।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment