প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা

Spread the love

গর্ভাবস্থায় যেমন জটিলতা দেখা দিতে পারে তেমনি প্রসব কালীন সময়েও বিভিন্ন জটিলতার উদ্ভব হতে পারে। নারীরা তাদের গর্ভকালীন সময়ে যেমন নানা প্রকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকেন তেমনি প্রসবকালীন সময়ের সমস্যাবলী সম্পর্কেও তাদের সচেতন থাকাটা অতি জরুরী। কারণ সামান্য একটি ভুলের কারণে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা।

যদিও আপনি স্বাস্থ্যবতী এবং আপনার প্রসব এবং প্রজননের জন্য ভালো প্রস্তুতি আছে, তারপরও অপ্রত্যাশিত জটিলতার সুযোগ থাকে। প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা নিয়েই আজকের আলোচনা।

বিজ্ঞাপণ

প্রসবের ধীরগতি

আপনার প্রসব কিভাবে অগ্রগতি হচ্ছে তা আপনার পেটে আপনার বাচ্চাকে অনুভব করে, আপনার জরায়ুর মুখ কতটুকু খুলেছে তা পরীক্ষা করে এবং বাচ্চা কতটুকু নীচে নেমেছে তা দেখে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তার মূল্যায়ন করতে পারেন।

যদি আপনার জরায়ুর মুখ ধীরে খোলে বা সংকোচন কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, আপনার ধাত্রী বা ডাক্তার বলবে যে আপনার প্রসবের অগ্রগতি যেমন হওয়া দরকার ছিল তেমন হচ্ছে না। যদি আপনি শিথিল এবং শান্ত থাকেন, তা ভালো। তবে  উদ্বেগ এ প্রক্রিয়াকে আরো বেশি ধীরগতি করে দেয়।

আপনি এবং আপনার সঙ্গী অথবা সহযোগী মানুষজন কি করতে  পারে এ প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য, জিজ্ঞাসা করুন। ধাত্রী বা ডাক্তার যেসব পরামর্শ দিতে পারেন:

  • অবস্থান পরিবর্তন করার
  • চারপাশে হাঁটা – নড়াচড়া, সংকোচনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি নীচে নামতে সাহায্য করে
  • উষ্ণ পানিতে বা স্বাভাবিক গোসলের
  • পিঠে মালিশ করার
  • আপনার শক্তি পুনরুদ্ধার করতে ঘুমানোর
  • কিছু খাওয়া বা পান করার।

যদি অগ্রগতি অবিরত কমতে থাকে, আপনার ধাত্রী বা ডাক্তার আপনার পানি ভেঙ্গে দিতে বা সংকোচনকে আরো কার্যকর বানাতে সিনথেটিক অক্সিটোসিন শিরাপথে ফোটায় ফোটায় শুরু করতে পরামর্শ দিতে পারে। যদি আপনি ক্লান্ত হোন বা নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য ব্যাথা থাকে, আপনি ব্যাথা নিরাময়ের বিকল্প সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

প্রসবজনিত (অবস্টেট্রিক) ফিস্টুলা

যোনিপথ, মূত্রাশয় ও মলদ্বারের মাঝখানে কোনো অস্বাভাবিক পথ তৈরি হলে একে প্রসবজনিত ফিস্টুলা বলে। এর ফলে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই প্রস্রাব-পায়খানা বের হয়ে যায়।

প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা যোনিপথের মুখে আটকে যায় এবং তা দীর্ঘসময় আটকে থাকে তবে বাচ্চার মাথার সামনের অংশ দ্বারা মূত্রথলী এবং পিছনের অংশ দ্বারা পায়ুপথ চাপের মুখে থাকে। দীর্ঘসময় চাপে থাকার ফলে এই সমস্ত অঙ্গসমূহে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় এবং তাতে পচন ধরে।

পচনযুক্ত টিস্যু খসে কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে ছিদ্র সৃষ্টি হয়। মূত্রথলী ও যোনিপথের বা পায়ুপথ ও যোনিপথের মধ্যে সৃষ্ট এই ছিদ্রের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সংযোগ তৈরি হয়। ছিদ্র পথে এসব নারীদের অনবরত প্রস্রাব বা পায়খানার রস ঝরতে থাকে। একেই প্রসবজনিত ফিস্টুলা বলা হয়ে থাকে।

প্রসবজনিত ফিস্টুলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

যখন বাচ্চা অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে

অধিকাংশ বাচ্চার প্রথমে মাথা বের হয়, কিন্তু কিছু বাচ্চার অবস্থান এমন হয় যা প্রসব এবং প্রজননের জন্য ঝুঁকি হতে পারে। মায়ের পেটে বাচ্চার অবস্থানকে সাধারণত অ্যান্টেরিয়র, পোস্টেরিয়র, ব্রীচ ও ট্রান্সভার্স লাই নামে অভিহিত করা হয়। প্রতিটি অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভে বাচ্চার অবস্থান কেমন হতে পারে?

বিজ্ঞাপণ

বাচ্চার পোস্টেরিয়র পজিশন

এর মানে হলো বাচ্চার মাথা শ্রোণী অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং মুখ আপনার পিছনের দিকে ফিরিয়ে না রেখে পাকস্থলীর দিকে রাখে। এটি আপনার পিঠ ব্যাথাসহ প্রসবকে দীর্ঘ করতে পারে।

অধিকাংশ বাচ্চা প্রসবের সময় ঘুরে যায়, কিন্তু অনেক বাচ্চা তা পারে না। যদি একটি বাচ্চা না ঘুরে তবে আপনাকে আরও বেশী ধাক্কা দিতে হবে বা ডাক্তারকে বাচ্চার মাথাকে ঘুরিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং/অথবা একে বের করতে ফোরসেপ বা ভ্যাকুয়াম পাম্পের সাহায্য নিতে হতে পারে।

আপনি হাত এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে থাকতে পারেন অথবা আপনার শ্রোণী ঘোরাতে বা দোলাতে পারেন -এটি আপনার পিঠ ব্যাথাও কমাবে।

আপনার বাচ্চার অবস্থার অবনতি হওয়া

কখনো এরকম সম্ভাবনা থাকতে পারে যে, প্রসবের সময় বাচ্চা দুর্দশাগ্রস্থ আছে। উপসর্গগুলো হলো:

  • বাচ্চার হৃদস্পন্দন তাড়াতাড়ি, ধীরগতি বা অস্বাভাবিক
  • বাচ্চার অন্ত্রের নড়াচড়া (বাচ্চার চারপাশে মেকোনিয়াম নামক সবুজাভ-কালো পানি দেখা যায়)।

যদি আপনার বাচ্চা ভালো নেই বলে মনে হয়, প্রথম ধাপ হলো তাদের হৃদস্পন্দন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ। আপনার বাচ্চার তাড়াতাড়ি জন্মের প্রয়োজন হতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে ভ্যাকুয়াম বা ফোরসেপ প্রসব বা সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন করা হয় ।

প্রসব পরবর্তী রক্তপাত (স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক রক্তপাত)

প্রজননের পর অল্প রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণত রক্তপাত কমানো এবং বন্ধের জন্য জরায়ুর মাংসপেশী অবিরত সংকোচন করতে থাকে। যদিও কিছু মহিলার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী রক্তপাতের অভিজ্ঞতা হয়,এই অবস্থাকে প্রসব পরবর্তী রক্তপাত বলা হয়।

একটি প্রসব (গর্ভ) পরবর্তী রক্তপাত হয় যখন একজন মা ৫০০ মিলিলিটার বা তার বেশী রক্ত হারায়। গর্ভ পরবর্তী রক্তপাতের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে জরায়ু সংকোচন না হয়ে শিথিল থাকা।

বাচ্চা জন্মানোর পর একটি ইনজেকশান (সিনথেটিক অক্সিটোসিন) দিলে জরায়ু থেকে গর্ভফুল বের করতে সাহায্য করে এবং ভারী রক্তপাতের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আপনার ধাত্রী নিয়মিত আপনার জরায়ু পরীক্ষা করবে, যে এটি শক্ত এবং সংকোচিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হতে।

বিজ্ঞাপণ

গর্ভ পরবর্তী রক্তপাত অনেক জটিলতা করতে পারে এবং হাসপাতালে বেশী দিন থাকতে হতে পারে। কিছু জটিলতা মারাত্মক কিন্তু তাদের ফলাফলে মৃত্যু খুব কম হয়।

আটকে যাওয়া গর্ভফুল

মাঝে মাঝে বাচ্চা জন্মের পর গর্ভফুল বের হয়ে আসে না, তাই এটা ডাক্তারের তাড়াতাড়ি বের করার প্রয়োজন হয়। এটি সাধারণত অপারেশন থিয়েটারে করা হয়। আপনাকে একটি এপিডুরাল অথবা সাধারণ অনুভুতিনাশক দিতে হবে।

মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদ প্রসব বাবস্থা এবং পরিকল্পনা করা খুবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রসবকালীন সময়ে করণীয়, প্রসূতি ও নবজাতকের তাৎক্ষণিক যত্ন ও জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি থাকা জরুরী ।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment