টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের গলার একটি সাধারণ সমস্যা। এ রোগে আমাদের দেশে অনেক শিশুই ভুগে থাকে। শীতের সময় এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। টনসিল ও এডিনয়েড এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি, যা আমাদের গলার ভেতরে শ্বাস ও খাদ্যনালীর মুখে অবস্থিত। শ্বাস ও পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশপথে প্রহরী হিসেবে টনসিল ও এডিনয়েড কাজ করে, খাদ্য ও বায়ুবাহিত ক্ষতিকারক পদার্থ ও রোগজীবাণু ধ্বংস করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে এবং এই সময়েই শিশুরা টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এডিনয়েড সাধারণত বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছোট হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে বিলীন হয়ে যায়। শিশুরা সাধারণত টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে। তাই টনসিল ও এডিনয়েডের অসুখ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
[youtube https://www.youtube.com/watch?v=919lcciwSyU]
সমস্যা বা রোগের কারণ
- শিশুর দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, এলার্জি জনিত অসুখ
- দাঁত, নাক ও সাইনাসের প্রদাহ এবং ঠান্ডার প্রতি অতিসংবেদনশীলতা রোগ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে
- ভাইরাস ও বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে রোগ জটিল রূপ ধারণ করে
- সাধারণত স্কুল থেকে এ রোগ শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। তাছাড়া রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অবহেলা ইত্যাদি এ রোগের কারণ
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
- রোগের তীব্র পর্যায়ে গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, শিশু সাধারণত কিছু খেতে চায় না
- ঢোক গেলার সময় কানের ব্যথা
- শরীরের তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে
- জ্বরের সঙ্গে অনেক সময় কাঁপুনি, খিচুনি, মাথাব্যথা ও সারা শরীরে ব্যথাও থাকে
- টনসিলের প্রদাহের সঙ্গে কখনো পেটের অন্ত্রের ঝিল্লির লসিকাগ্রন্থির প্রদাহের কারণে পেটে ব্যথা
- তাছাড়া গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা থাকে
রোগের দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়
- প্রায় সময় গলা ব্যাথা
- সঙ্গে জ্বর হওয়া
- সর্দি থাকা, নাক বন্ধ থাকা, নাকের নিঃসরণ
- মুখে দুর্গন্ধ
- খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি এবং গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি সব সময় ফুলে থাকে
তাছাড়া টনসিল ও এডিনয়েডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
যেমন:
- মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া, মুখ হা করে ঘুমানো
- দাঁতের অস্বাভাবিক গড়ন
- লম্বাটে মুখমন্ডল ও চ্যাপ্টা বুক
- শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব শিশুর স্বাভাবিক ঘুম হয় না। ঘুমের মধ্যে ছটফট এবং এপাশ-ওপাশ করতে থাকে।
- খেলাধুলায় উৎসাহ থাকে না
- খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি থাকে, কম খায় এবং খেতে খেতে অনেক সময় বমিও করে দেয়
- তাছাড়া রাতে কাশি হয় এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহে সব সময় ভুগে থাকে
- আচার-আচরণে অনেক সময় অতি ব্যতিব্যস্ত, ঝগড়াটে থেকে মনমরা ধরণের হয়ে থাকে
- দিনের বেলায় তাদের অলসতা ও সকালের দিকে মাথাব্যথা থাকে
- এ রোগের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো, এসব শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তাদের শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ যেমন, পালমোনারি হাইপারটেনশন, হৃদরোগ এবং হঠাৎ হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুও ঘটতে পারে
রোগ নির্ণয়ে করণীয়
- রোগীর রোগ বৃত্তান্ত নেওয়া
- নাক, কান, গলা ভালোভাবে পরীক্ষা করা
- ডাক্তারের পরামর্শ মতে রক্তের পরীক্ষা করা
রোগের জটিলতা
- পেরিটনসিলার অ্যাবসেস বা টনসিলে পুঁজ জমা
- দীর্ঘস্থায়ী কানের প্রদাহ সঙ্গে নাক ও সাইনাসের প্রদাহ
- এ রোগের মারাত্মক জটিলতায় রয়েছে-বাতজ্বর, হৃদরোগ ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখ ইত্যাদি
চিকিৎসা বা আরোগ্য লাভের উপায়
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠান্ডা খাওয়া পরিহার, দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, হাল্কা শরীরচর্চা করতে হবে। এরপরও উপশম না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও প্রতিবন্ধকতা জনিত সমস্যায়-টনসিল ও এডিনয়েড অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া ভালো।
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ
- স্থানীয় সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- জেলা সদর হাসপাতাল
- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন.১. টনসিল ও এডিনয়েডের কাজ কি?
উত্তর. শ্বাস ও পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশপথে প্রহরী হিসেবে টনসিল ও এডিনয়েড কাজ করে খাদ্য ও বায়ুবাহিত ক্ষতিকারক পদার্থ ও রোগজীবাণু ধ্বংস করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন.২.শিশুরা কখন বেশী টনসিল ও এডিনয়েডের অসুখে আক্রান্ত হয়?
উত্তর. টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে এবং এই সময়েই শিশুরা টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রশ্ন.৩.কিভাবে শিশুরা এই রোগে সংক্রমিত হয়?
উত্তর. সাধারণত স্কুল থেকে এ রোগ শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। তাছাড়া রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অবহেলা ইত্যাদি কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশ্ন.৪.টনসিল ও এডিনয়েডের অসুখের দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়ে কি কি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়?
উত্তর.
- প্রায় সময় গলা ব্যথা
- সঙ্গে জ্বর হওয়া
- সর্দি থাকা, নাক বন্ধ থাকা, নাকের নিঃসরণ
- মুখে দুর্গন্ধ
- খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি এবং গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি সব সময় ফুলে থাকে
প্রশ্ন.৫.এই রোগের জটিলতাগুলো কি কি?
উত্তর.
- পেরিটনসিলার অ্যাবসেস বা টনসিলে পুঁজ জমা
- দীর্ঘস্থায়ী কানের প্রদাহ সঙ্গে নাক ও সাইনাসের প্রদাহ
- এ রোগের মারাত্মক জটিলতায় রয়েছে-বাতজ্বর, হৃদরোগ ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখ ইত্যাদি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত।