গর্ভাবস্থায় স্বপ্ন কেমন হতে পারে?
মা হওয়ার মুহুর্তটুকু একদিকে যেমন আনন্দের তেমনি একটু শঙ্কারও বটে। গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় অনাগত শিশুর ভবিষ্যৎ চিন্তা ও ডেলিভারি ভীতি থেকেই নানারকম স্বপ্ন দেখে থাকেন। গর্ভাবস্থায় স্বপ্ন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দু:স্বপ্নে পরিবর্তিত হতে পারে। নানারকম দু:শ্চিন্তা থেকেই এই স্বপ্নগুলো একজন গর্ভবতী মা দেখে থাকেন।
যতই ডেলিভারি দিন কাছে আসতে থাকে ততই মায়ের দু:শ্চিন্তা তীব্রতর হতে থাকে। মনের মধ্যে নানা ভয়ের ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। নানারকম চিন্তা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার কারনে সে দেখতে থাকে নানা ভীতিকর স্বপ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন গর্ভবতী নারীর তার যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে মনে যে উদ্বেগ এবং ভয়ের জন্ম নেয় তা স্বপ্নের মধ্যে প্রতিফলিত হওয়াকে গর্ভাবস্থায় স্বপ্ন বলে অভিহিত করা হয়। প্রতিটি গর্ভবতী নারীই তার গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপে কিছু সাধারণ স্বপ্ন দেখে থাকে। আসুন জেনে নিই এমনই ৫ রকমের স্বপ্ন যা একজন গর্ভবর্তী নারী দেখে থাকেন।
সন্তানরূপে বিকৃত শিশু বা বিভিন্ন প্রাণীকে স্বপ্নেদেখা:
একজন নারী যখন জানতে পারেন যে তিনি মা হতে চলেছেন তখন তার মানসপটে ভেসে উঠে তার অনাগত সন্তানের মুখচ্ছবি। সাথে সাথে তার মনে ভর করে এক অজানা আশংকা। সন্তানের সুন্দরভাবে ভূমিষ্ঠ হওয়া নিয়ে অজানা দু:শ্চিন্তা যা তার স্বপ্নে প্রতিফিলিত হতে থাকে।
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী অ্যালান সীগ্যালের মতে, ‘একজন প্রসূতি মা সবসময় চিন্তিত থাকেন তার সন্তানটি মাতৃজঠরে ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কিনা? এই অনাহুত ভয় থেকে সে স্বপ্নে দেখতে থাকে কোন জড়বস্তু, কোন পশুর মুখ, কিংবা ভিনগ্রহের কোন এলিয়েন, কিংবা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত না হওয়া কোন বিকৃত শিশু সন্তানের মুখ, ইত্যাদি নানা অদ্ভুত জিনিস। এই স্বপ্নগুলো একজন গর্ভবতী নারী ডেলিভারীর শেষ সময়গুলোতে প্রতিনিয়ত দেখতে থাকে।’
সন্তানের প্রতি অজানা আশংকা থেকেই এই চিরায়িত স্বপ্নগুলো একজন গর্ভবতী নারী প্রতিনিয়ত দেখে থাকেন বলে সীগ্যাল মনে করেন। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে তিনি অভিমত দেন।
ছেলে না মেয়ে?
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র এমন যে অনেকক্ষেত্রেই একজন প্রসূতি মায়ের উপর পরিবারের মুরব্বীদের দাবী থাকে প্রথম সন্তানটি যেন পুত্র সন্তান হয়। যদি কন্যা সন্তান থেকে থাকে তখন পরের সন্তানটি ছেলে হওয়ার জন্য চাপ থাকে আরো প্রবল যা অনেকক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়।
এই বিষয়টি একজন গর্ভবতী নারীর মনের মধ্যে তীব্র প্রভাব ফেলে। তিনিও পুত্রসন্তানের জন্য কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করতে থাকেন। প্রবলভাবে এই চাওয়ার কারনে স্বপ্নে তিনিও দেখতে পান পুত্র সন্তানের প্রতিচ্ছবি।
স্বপ্ন গবেষকদের মতে, একজন গর্ভবতী নারী ছেলে বা মেয়ে যার জন্য প্রবলভাবে আকাঙ্খা করেন তাই স্বপ্নে তিনি দেখতে থাকেন। এতে তার সন্তানটি ছেলে বা মেয়ে হওয়া একদমই নির্ভর করে না। স্বপ্নের সাথে যদি কোন কিছু বাস্তবে মেলে যায় তা পুরোপুরি কাকতালীয় বলে মনে করেন স্বপ্ন বিশেষজ্ঞরা।
অ-চিত্তাকর্ষক:
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর হরমোনজনিত এবং শারীরিক নানা পরিবতর্দন ঘটে। যেমন: মুটিয়ে যাওয়া, শরীরে ভারিক্কি চলে আসা, মাঝে মাঝে বিষন্ন দেখা ইত্যাদি।এসব পরিবর্তন অনেক ফ্যাশান সচেতন নারীই মেনে নিতে পারেন না। তখন দাম্পত্য জীবন নিয়ে অনাকাঙ্খিত ভাবনায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
স্বপ্নে দেখতে থাকেন স্বামী অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, দাম্পত্য জীবন ভেঙ্গে যাচ্ছে, স্বামী তাকে অবহেলা করছে ইত্যাদি। দাম্পত্য কলহের এসব নানা দু:স্বপ্ন্ একজন সন্তানসম্ভাবা নারী প্রায় দেখে থাকেন। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রতি একটু অতিরিক্ত মনোযোগ আর ভালোবাসায় এই স্বপ্ন থেকে সহজেই বেরিয়ে আসা যায়।
শিশুর ভূমিষ্ট হওয়া সম্পর্কিত
একজন গর্ভবতী নারী যখন তার তৃতীয় তিনমাসে পদার্পন করেন তখন তিনি সন্তান কোথায় ভূমিষ্ঠ হবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ফলশ্রুতিতে, তিনি স্বপ্নে দেখতে থাকেনতার সন্তানটি লোকালয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানী নিয়েলসন ও সেইগেলের মতে, এ ধরনের স্বপ্ন দেখা একজন গর্ভবতী নারীর পক্ষে খুবই স্বভাবিক।
সাধারণত একজন প্রসূতি মা সন্তান প্রসবের শেষ মুহূর্তগুলিতে ভাবতে থাকনে যে,ডাক্তারের দেয়া সিডিউলের আগেই তার সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হবে, ফলে প্রস্তুতি না থাকায় যেখানে সস্তানের প্রসব হওয়ার কথা সেখানে না হওয়ার এক অজানা ভয় থেকে তিনি স্বপ্নটি দেখেন।
আগত সন্তানকে হারিয়ে ফেলার ভয়
আগত শিশুর প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসা থেকে অনেক গর্ভবতী মায়েই সন্তান হারানোর ভয় থেকে নানা অদ্ভুত স্বপ্ন দেকতে থাকেন। হঠাৎ স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি তার শিশু সন্তানকে কোন শপিং মলে ফেলে রেখে এসেছেন। বাসায় এস তিনি সন্তানকে খুঁজছেন, কিন্তু কিছুতেই তিনি তার শিশু সন্তানটিকে পাচ্ছেন না।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, একজন প্রসূতি মায়ের আগত সন্তানের প্রতি ভালোবাসার তীব্রতা এবং ইমোশনের কারনে তার মনের মধ্যে সবসময় এক আজানা আশংকা ভর করতে থাকে। এজন্যই গর্ভবতী মা এধরনের স্বপ্ন প্রায় দেখে থাকেন।
পরিশিষ্ট:
অনাগত শিশুকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণে বাস্তবে ঘটতে পারে এমন ভয়ঙ্কর কোনও স্বপ্ন দেখা বিচিত্র নয়। মূলত দু:শ্চিন্তা, অজানা ভাবনা, টেনশন লতার মতো মনের মধ্যে বাড়তে বাড়তে স্বপ্ন দু:স্বপ্ন হয়ে ঘুমের মধ্যে এসে হানা দেয়। স্বপ্নগুলোকে আলাদা করে কোনো গুরুত্ব দেবেন না। গর্ভাবস্থায় স্বপ্ন দেখা একজন নারীর পক্ষে স্বাভাবিক।
স্বামীদের করনীয়- আপনার স্ত্রীর সাথে রোজ একান্তে কিছু সময় কাটান। জিজ্ঞেস করুন রাতে ভালো ঘুম হয়েছে কিনা। তার স্বপ্ন শুনলেই বুঝতে পারবেন যে সে ঠিক কি নিয়ে বেশী ভীত। সেইসব ব্যাপার গুলোতে তাকে নির্ভয় করতে চেষ্টা করুন। ভবিষ্যত বাচ্চা নিয়ে তার সাথে পরিকল্পনা করুন। এই সময়টাতে তার মন আনন্দে পরিপূর্ণ থাকবে। অহেতুক ভয়-ভীতি তার থেকে দূরে থাকবে।
উপরে যে মানসিক পরিবর্তন এর কথা বলা হয়েছে, তা সব নারীর ক্ষেত্রেই কম বেশী ঘটে। তবে এটি “ক্লিনিকাল বিষন্নতা” রোগ নয়, তাই এর কোন ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু পরিবার ও আশেপাশের মানুষ দের ভালোবাসা।
তবে এই যত্ন টুকু যদি আপনি তার না করেন, তাহলে সে আস্তে আস্তে সে বিষন্নতা রোগের দিকে অগ্রসর হতে পারে। তখন তা গর্ভের সন্তানের ঝুকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাছড়া এই সময়টাতে এখন আরেকজনকে সাপোর্ট দেয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক একটা নতুন মোড় পায়।
অযথা দু:শ্চিন্তা করবেন না। এসময় পরিবারের সাথে একটু ঘনিষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। গর্ভবতী স্ত্রীর প্রতি স্বামীর একটু অতিরিক্ত যত্ন, ভালোবাসা, দায়িত্ব এবং মনোযোগ এই স্বপ্নগুলো থেকে মুক্তি পেতে খুব সাহায্য করে।
আপনার সুস্থ, স্বাভাবিক সন্তানের জন্য এইমুহূর্ত থেকে দু:শ্চিন্তাকে ঝেটিয়ে বিদায় দিন। এতে যেমন আপনার মঙ্গল, তেমনি আপনার আগত সন্তানেরও মঙ্গল।
তথ্যসূত্রঃ
Supermombd