৩৩ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা | ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের শরীর এবং কিছু টিপস

Spread the love

গর্ভাবস্থার ৩৩ তম সপ্তাহে গর্ভে থাকা ভ্রূণেটির কুঁচকে থাকা ত্বক আস্তে আস্তে আরো মসৃণ হতে থাকে এবং সে ধীরে ধীরে একজন পূর্নাঙ্গ নবজাতকের চেহারা ধারণ করতে থাকে। এই সময় ভ্রূণের ত্বক আগের চাইতে আরো খানিকটা পুরু হয়ে ওঠে এবং চামড়ার লালচে ও স্বচ্ছ ভাবও আগের চেয়ে কমে আসে। মোট কথা ভ্রূণটি এখন থেকে জন্মগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।

গর্ভাবস্থার ৩৩ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের ষষ্ঠ সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে।

বিজ্ঞাপণ

গর্ভধারণের ৩৩  তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি

৩৩ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুটি তার চোষা এবং গেলার দক্ষতা ঝালিয়ে নিতে থাকে। এর ফলে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় পেশীগুলোও সুদৃঢ় হতে থাকে এবং তার শ্বাসতন্ত্রের গঠন আরো  সুগঠিত হতে থাকে।  

এ সপ্তাহে তার ফুসফুস আরো পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ফলে, এসময় শিশুটি জন্ম নিলে তার শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য কৃত্রিম যন্ত্রের প্রয়োজন নাও হতে পারে। ভ্রূণের নিজের শরীরে এসময় সারফেক্ট্যান্ট নামক পদার্থ উৎপন্ন হতে থাকে যা তার শ্বাসনালীকে উন্মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

যদি সময়ের আগেই লেবার বা প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যায়, কিংবা কোনো কারণে সম্ভাব্য তারিখের আগেই সিজারিয়ান সেকশন করিয়ে ফেলতে হয়, তবে প্রসবের আগের দুইদিন ডাক্তার আপনাকে কর্টিসোন ( Cortisone, এক প্রকার হরমোন। সাধারণত অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়) ইনজেকশন দেবেন। এই হরমোন শিশুটির ফুসফুসের বিকাশকে তরান্বিত করবে যাতে করে ভূমিষ্ঠ হবার পর তার ফুসফুস পর্যাপ্ত পরিমাণ surfactant উৎপাদন করতে পারে।

৩৩ তম সপ্তাহে জন্ম নেয়া শিশুদের হাসপাতালে কিছুটা হলেও নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। প্রি-ম্যাচিওরিটি সক্রান্ত কিছু জটিলতা থাকার সম্ভাবনা থাকলেও  এ সপ্তাহে জন্ম নেয়া শিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৯৯ ভাগ।

মায়ের গর্ভে এখন সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যামনিওটিক তরল(amniotic fluid) জমা থাকবে, যার পরিমাণ হতে পারে প্রায় ১ লিটারের মত। কতটুকু অ্যামনিওটিক ফ্লুয়িড আছে তার পরিমাণ থেকেই আন্দাজ করা যাবে শিশুটির বৃক্ক বা কিডনি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মিলি করে তরল উৎপাদিত হবে।

শিশুটির আকার বৃদ্ধির কারণে জরায়ুতে তার জায়গা কমে আসে। এ সময় সে হয়তো আগের মত ডিগবাজি খেতে পারবেনা, তবে তার নড়াচড়া বা হাত পা ছোঁড়ার পরিমাণ কমা উচিত নয়। যদি মনে হয় শিশুটি কম নড়ছে বা নড়াচড়া করছেনা তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ভ্রূণের আকার ৩৩ তম সপ্তাহে একটি বড় সাইজের আনারসের সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১৭.২ ইঞ্চি বা ৪৩.৭ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ৪.২৩ পাউন্ড  বা ১৯১৮  গ্রামের মত।

৩৩ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ

মস্তিষ্ক

তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের পুরো সময়টা জুড়েই ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দ্রুত হতে থাকে। তবে তার জন্মের পর যখন সবগুলো ইন্দ্রিয় কাজ করতে শুরু করে তখন তার মস্তিষ্কের বিকাশ হয় সবচাইতে বেশি।

হাঁড়

ভ্রূণের শরীরের সবগুলো হাঁড় ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকলেও  তার মাথার খুলির হাড়গুলো নমনীয় থাকে। খুলির হাঁড়গুলো একসাথে জুড়ে থাকেনা। যার ফলে হাঁড়গুলো সামান্য নড়াচড়া করতে পারে এমনকি একটি আরেকটির উপর উঠে যেতে পারে। এতে প্রসবের সময় শিশুর মাথা সহজে জন্মনালী দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে।

জন্মের সময় শিশুর মাথায় কিছু নরম অংশ থাকে যেগুলোকে ফন্টানেল বলা হয়। খুলির হাড়গুলো শিশু সাবালক হওয়া পর্যন্ত অসংযুক্ত থাকে যাতে তা শিশুর বর্ধিষ্ণু মগজ ও অন্যান্য টিস্যুর জন্য জায়গা করে দিতে পারে। এগুলো জন্মের পর ১৮ মাস নাগাদ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

এখন থেকেই ভ্রূণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম (immune system) গঠিত হতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডিগুলো ভ্রূণ নিজে উৎপন্ন করেনা। এগুলো মায়ের শরীর থেকে প্লাসেন্টার মাধ্যমে শিশুর শরীরে আসে যা তাকে জন্মের পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।  

প্রেগনেন্সীর শেষ ১২ সপ্তাহে এভাবে বিভিন্ন অ্যান্টিবডি মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণের শরীরে প্রবাহিত হয়। একারণে প্রি- ম্যাচিওর বাচ্চাদের বিভিন্ন ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ সময়ের আগেই  জন্ম নেয়ায় মায়ের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অ্যান্টিবডি ভ্রূণের শরীরে পৌঁছাতে পারেনা।

রিফ্লেক্স

নবজাতক শিশুর আশেপাশে কোন উচ্চ শব্দ অথবা দ্রুত নড়াচড়া হলে শিশুকে আঁতকে উঠতে দেখা যায়। উচ্চ কোন শব্দ হলে শিশু সাধারণত তার মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে দেয় এবং হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে শুরু করে, আবার হাত এবং পা শরীরের দিকে ভাঁজ করে কুঁকড়ে যায়। শিশুর এই প্রতিক্রিয়াকে মোরো বা স্টার্টল রিফ্লেক্স (startle reflex) বলা হয়। গর্ভাবস্থার ৩২তম সপ্তাহ থেকে বেশিরভাগ ভ্রূণের মধ্যেই এই রিফ্লেক্স দেখা যায়।

এছাড়াও এসময়ে এসে গর্ভের ভ্রূণের সাকিং রিফ্লেক্স (চোষার ভঙ্গি করা) এবং রুটিং রিফ্লেক্সের ( থুতনি বা ঠোঁটে স্পর্শ পেলে মুখ খোলা) বিকাশ হতে থাকে।

জননাঙ্গ

গর্ভের ভ্রূণটি যদি ছেলে হয় তবে এই সময়ের মধ্যে তার অণ্ডকোষগুলো পেট থেকে নেমে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে এসে যায়। তবে কখনো কখনো জন্মের পরও একটি বা উভয় অণ্ডকোষই  নীচের দিকে নাও নামতে পারে। সাধারণত প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের মধ্যে এমনটা বেশি দেখা যায়। জন্মের পর সাধারণত তিন মাসের মধ্যে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।

৩৩ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার ৩৩ তম সপ্তাহে মায়ের  চলাফেরা বেশ শ্লথ হতে থাকে। কারণ, এই সময় থেকে জরায়ুর আকার বাড়ার সাথে সাথে শরীরের ওজন বাড়ার হারও বাড়তে থাকে। বর্ধিত পেটের আকার এবং অতিরিক্ত ওজন আপনাকে অল্পতেই ক্লান্ত করে দিতে পারে। সেই সাথে কোমর, পা বা  পিঠের ব্যথাও শুরু হতে পারে।

সামান্য হাঁচি, কাশি হলে কিংবা সামান্য ভারী কিছু ওঠানোর সময় ইউরিন লিক করার সমস্যা দেখা দিতে পারে।  বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই সমস্যা দেখা দেয়। যাদের এটি প্রথম প্রেগ্ন্যান্সী নয়, তাদের এ সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো পেলভিক-ফ্লোর ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাবে।পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজের আরো নানামুখি উপকার রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে জেনে নেবেন।

গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হলো-

বিজ্ঞাপণ

ঘুমের সমস্যা

গর্ভকালীন বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ, লেগ ক্র্যাম্প, বুক জ্বালা করা, শুয়ে আরাম না পাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ঘুমের বেশ সমস্যা হতে পারে। তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ৩ জন মাই এই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে যদি বিছানায় শুয়ে আরাম না পান, তাহলে আরামদায়ক আর্মচেয়ারে কিংবা সোফায় এক কাতে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। সমাধান হিসেবে এটা যে সবসময় কার্যকরী হয় তা নয়, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

শুতে যাওয়ার আগে হালকা গরম পানিতে গোসল সেরে নিতে পারেন বা হালকা গরম এক কাপ দুধ খেতে পারেন। শুতে যাওয়ার ঠিক আগে ভারী খাওয়া বা একসাথে বেশী তরল পান করা থেকে বিরত থাকুন। এতে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা কম থাকবে এবং রাতে বার বার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন কম হবে।

ঘুমাতে যাবার অন্তত এক ঘন্টা আগে আপনার টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার সুইচ অফ করুন। এসব ডিভাইস থেকে একটুখানি বিরতির পর ঘুমোতে যান।

হাত অবশ লাগা বা সুই ফোটার অনুভূতি

গর্ভাবস্থায় কারপাল টানেল সিনড্রোমের কারণে হাত অবশ লাগা, সুই ফোটার মতো বা ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে। সাধারণত হাতের বুড়ো আঙুল, তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকার অর্ধেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, খাবার খেতে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে বা কোনো জিনিস ধরতে সমস্যা হয়। লক্ষণগুলো রাতে বেশি দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় শরীরের অতিরিক্ত তরল আমাদের হাতের কব্জির কাছে থাকা মিডিয়ান নার্ভে চাপ দেয় বলে এমনটা হয়। প্রসবের পর শরীরের অতিরিক্ত তরল কমে গেলে এ সমস্যাও কমে যায় তবে কিছু কিছু মায়েদের সন্তান জন্মদানের পরও প্রায় বছরখানেক এ সমস্যা থাকতে পারে।

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন এক ধরনের তীব্র ব্যাথা যা সাধারনত অল্প সময়ের জন্য হয় এবং অনেকটা মাংশপেশীর খিঁচুনির মত মনে হতে পারে। এ ব্যাথা দুপাশেই হতে পারে তবে ডান পাশে বেশী হয় যা উরু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

সাধারণত  গর্ভবতী মায়েরা যখন হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করেন তখন রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন অনুভূত হতে পারে, যেমন- বিছানা বা চেয়ার থেকে ওঠার সময়। কাশি দেয়ার সময় বা বিছানায় নড়াচড়া করার সময়।

এই ধরণের ব্যাথা সাধারণত তেমন কোন উদ্বেগের বিষয় নয়, তবে যদি এর সাথে জ্বর, কাঁপুনি বা রক্তপাতের মত উপসর্গ থাকে তবে অতিসত্বর ডাক্তারকে জানাতে হবে।

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন শুরু  হলে বসে পড়ুন এবং রিলাক্স করার চেষ্টা করুন। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলেই এর থেকে স্বস্তি পাবেন। যদি বসে থাকা অবস্থায় ব্যাথা হয় তবে দাঁড়িয়ে পড়ুন বা হাঁটা চলা করুন। মোটকথা পজিশন পরিবর্তন করুন।

শোয়া থেকে বসা বা বসা থেকে ওঠার সময় আস্তে আস্তে উঠুন। হঠাৎ নড়াচড়ার কারণে রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন বেশী হয়। তাই ধীরে নড়াচড়া করুন।হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় কোমর ও হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে নিন। এতে লিগামেন্টে চাপ কম পড়ে।

এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করনীয়

গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মায়েদের ডায়েটে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড বা DHA থাকে তাদের গর্ভের শিশুর বিকাশ খুব দ্রুত হয়। DHA হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডগুলোর মধ্যে একটি। এটি গর্ভে থাকা শিশুর দৃষ্টিশক্তি ও রক্তকোষ বিকাশের সহায়ক। বিশেষ করে শেষের ৩ মাস DHA গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে কাজ করে।

তাই গর্ভবতী মায়ের DHA সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বেশ প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম এমন খাবার খাওয়া দরকার যাতে DHA আছে। সামুদ্রিক মাছ ও ডিমে পাওয়া যাবে DHA। তবে এসময় অধিক মার্কারি সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় পাশ ফিরে শোওয়া বিশেষ করে বাম পাশ ফিরে শোওয়াটা সবচাইতে নিরাপদ।বাম কাত হয়ে শোয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ভালো কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্লাসেন্টার মাধ্যমে সহজেই বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে।তবে, একটানা এক পাশে শোয়া কষ্টকর হয়ে পড়লে আপনি আপনার সুবিধামত পাশ পরিবর্তন করে শুতে পারেন।

প্রতিদিন কিছু সময় আলাদা রাখুন বাচ্চার নড়াচড়া বোঝার জন্য। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ২৮ সপ্তাহ থেকে বাচ্চার মুভমেন্ট গুনতে বা কিক কাউন্ট করতে বলে থাকেন।ভ্রূণের নড়াচড়া কিংবা কিক কাউন্টের সময় নিরবিলি ও আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। প্রতিদিন একই সময়ে কিক কাউন্টের চেষ্টা করুন। ভ্রূণ সাধারণত মায়ের খাওয়াদাওয়ার পর বেশি নড়াচড়া করে। তাই খাওয়ার পরের সময়ে নড়াচড়া গোনার চেষ্টা করুন।

আপনার যদি আরও সন্তান থেকে থাকে, তাহলে নতুন অতিথির জন্য তাকে এখন থেকেই মানসিকভাবে তৈরি করতে শুরু করুন। অনেক বাচ্চাই সহজে তাদের নতুন ভাই/বোনের সাথে তাদের ঘর, খেলনা, কাপড়চোপড়, সর্বোপরি মা-বাবাকেও শেয়ার করতে চায় না। কীভাবে প্রথম সন্তানকে নতুন শিশুটির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন সে ব্যাপারে আরো জানুন

এই সময় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও বিশেষ নজর রাখতে হবে। গর্ভকালীন সময়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের পরিমান যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশী হয়, তবে তা গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সূচনা করতে পারে।

আমাদের সমাজে গর্ভধারণ ও মায়েদের সুস্থতা, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলার চর্চা খুবই কম। এক্ষেত্রে আপনার কাছের বা বিশ্বস্ত কারো কাছে যেমন আপনার স্বামী, শাশুরি, মা, বোন, বন্ধু, অন্য কেউ, এমন কি ডাক্তারের কাছেও আপনার যাবতীয় কথা শেয়ার করতে পারেন। এটি আপনাকে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করবে।

সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। নতুন মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না এবং অনেক ব্যাপারে নার্ভাস থাকেন। হাজার হাজার উপদেশের ভিড়ে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন লেখা পড়ে ও এক্সপার্টদের কাছ থেকে করণীয় কি ইত্যাদি  জেনে নিতে হবে। এবং সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে । 

সবার জন্য শুভকামনা।

<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ- ৩২
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ- ৩৪>>


Spread the love

Related posts

Leave a Comment