নবজাতকের ঘুম । কেমন হতে পারে ?

Spread the love

প্রতিটি শিশুই আলাদা। প্রত্যেকটি নবজাতকের ঘুম , খাওয়ার অভ্যাসও আলাদা। অনেক শিশু আছে, যারা রাতে ঘুমায় না। অনেকে আবার পাঁচ ঘণ্টার টানা ঘুমে রাত পার করে দেয়।

শিশুদের ২৪ ঘণ্টায় কতক্ষণ ঘুমানো উচিত, কীভাবে ঘুম পাড়াবেন—প্রথম থেকেই এ বিষয়গুলো জানা থাকলে সুবিধা। কারণ, নবজাতক একটু ঘুমালে নতুন হওয়া মায়েরও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপণ

নবজাতকের  ঘুম কেমন হতে পারে?

প্রকৃতপক্ষে জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শিশু ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমায়। এটা অস্বাভাবিক নয়। ঘুম শিশুদের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এ সময় তাদের মস্তিষ্ক ও শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুধু রাতের ঘুমই যথেষ্ট নয়, নিয়মিত দিনে ভাঙা ভাঙা ঘুম/ন্যাপও তাদের ঘুমের অনেকটা চাহিদা পূরণ করে।

আপনার নতুন শিশু দিনে ও রাতে একটানা দু’ থেকে চার ঘন্টা ঘুমাতে পারে। এ সময় কোন নির্দিষ্ট ঘুমোনোর ধরনবা সময় আশা করা ঠিক হবে না। শিশুকে তার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ঘুমোতে দিন। নবজাতকের ঘুমের মধ্যে র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM)বেশী হয় যা শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য খুবই উপকারী।

শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে, তখন জঠরের উষ্ণতায়, মায়ের পরম মমতায় সারা দিন-রাত সে ঘুমিয়ে থাকে। কোনো খাবারেরও তার প্রয়োজন হয় না। কারণ প্লাসেন্টার মাধ্যমে শিশু মায়ের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যায়। তার মস্তিষ্ক দিন ও রাতের পার্থক্য করতে পারে না। দিনের বেলা কাজ করার জন্য , জেগে থাকার জন্য এবং রাতের বেলা ঘুমানোর জন্য-এই জীবনচক্রে অভ্যস্ত হতে জন্মের পর শিশুর কিছুদিন সময় লাগে।

কখন থেকে বাচ্চা একটু বেশী সময় ঘুমাবে?

জন্মের পর কোনো শিশু রাতে বেশি ঘুমায়, আবার কোনো শিশু দিনে বেশি ঘুমায়। আবার কোনো কোনো শিশু রাতে একদম ঘুমাতে চায় না। এসবই সাময়িক, কিছুদিন পর থেকেই নবজাতকের ঘুমের এই নিয়ম-কানুন বদলে যাবে, অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না।

কোন বয়সে কতটুকু ঘুম

শূন্য থেকে দুই মাস : নবজাতকরা ২৪ ঘণ্টার প্রায় ১০ থেকে ১৯ ঘণ্টা ঘুমাবে।প্রি-ম্যাচিওর শিশু একটু বেশি ঘুমাবে। বুকের দুধ পান করা শিশু একনাগাড়ে এক থেকে তিন ঘণ্টা ঘুমায়। অন্যদিকে বোতলে দুধ খাওয়া শিশু দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা টানা ঘুমায়। তবে মাঝখানে এক থেকে দুই ঘণ্টা জেগে থাকার বিরতি থাকে। প্রথম সপ্তাহ দিন ও রাতে অনেকে ঘুমাবে। আস্তে আস্তে রাতে সাড়ে আট ঘণ্টা এবং দিনে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো ঘুমাবে।

২-৪ মাস: দিনের বেলা বাচ্চা কম করে তিন বার, আর রাতে ৯-১০ ঘন্টার ঘুম খুব জরুরি। এই সময় বাচ্চা যদি সারা দিনে ১৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকে তাহলে চিন্তা করবেন না। জানবেন এটা স্বাভাবিক।

৪-৬ মাস: চার মাসের পর থেকে দিনে ২-৩ বার ঘুমবেই, সেই সঙ্গে রাতে কম করে ১০ ঘন্টার ঘুম প্রয়োজন আপনার বাচ্চার। অর্থাৎ দিনে কম করে ১৪-১৫ ঘন্টা।

৬-৯ মাস: এই বয়সে বাচ্চা সারাদিনে প্রায় ১৪ ঘন্টা ঘুমবে। দিনের বেলা কম করে দুবার। আর রাতে ঘুমবে কম করে ১০-১১ ঘন্টা।

৯-১২ মাস: এই সময় দিনে দুবার আর রাতে ১০-১২ ঘন্টার ঘুম জরুরি। অর্থাৎ সারাদিনে বাচ্চা ঘুমবে কম-বেশি ১৪ ঘন্টা।

বিজ্ঞাপণ

বিশেষজ্ঞদের মতে ৪ থেকে ৬ মাস বয়সে বাচ্চা রাতে ৮-১০ ঘন্তা টানা ঘুম দিতে পারে। কিছু কিছু বাচ্চা ৬ সপ্তাহ থেকে রাতে একটানা অনেকক্ষণ ঘুমাতে পারে তবে বেশীরভাগ শিশুর ক্ষেত্রে এমনটা হতে ৫-৬ মাস সময় লেগে যায়।

কিভাবে আপনার শিশুর ঘুমের সময়সূচি তৈরি করবেন?

মানসিক ও শারীরিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শিশুদের দরকার পরিমিত ঘুম। তবে প্রথম তিন মাস খিদে, ডায়াপার বদলানো কিংবা শারীরিক কোনো অসুবিধার কারণে একনাগাড়ে অনেক শিশুই ঘুমায় না। কিছুক্ষণ পরপরই ঘুম ভেঙে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন মাস পর থেকে শিশুদের জন্য একটা নির্দিষ্ট ঘুমের সময় ঠিক করে ফেলা ভালো। কাজটি অবশ্যই কষ্টকর। কিন্তু একবার যদি শিশুর ঘুমের সময় ঠিক করে ফেলা যায়, তাহলে সেটা আপনার জন্য আনন্দের সংবাদ হবে।

সাধারণত দিনের মধ্যে একটা সময় থাকে, যখন আপনার শিশু টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাবে। তবে সব শিশুই যে ঘুমাবে তা নয়। শিশুদের ঘুম পাড়ানোর কায়দাও কিন্তু ভিন্ন। প্রথম কয়েকটা দিন একটু ধৈর্য ধরে খেয়াল করলেই বুঝে যাবেন, আপনার শিশু কী চাইছে। প্রথম কয়েকটা দিন শিশুকে আরাম, স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করুন।

শিশুকে দিন-রাত্রির পার্থক্য বোঝাতে চেষ্টা করুন। আপনার নবজাতক প্রতিদিন গড়ে ১৬ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। শিশুকে প্রথমেই শেখান অন্ধকার হচ্ছে ঘুম আর আলো হচ্ছে জেগে থাকা। আর জন্মের দশ সপ্তাহের মধ্যে শিশু দিবা-রাত্রি সম্পর্কে ধারণা পেতে সক্ষম।তাকে বুঝতে সাহায্য করতে হবে, রাত হচ্ছে ঘুমের সময় এবং রাতেই দীর্ঘক্ষণ ঘুমাতে হবে।

শিশুটিকে দিনে হৈ চৈ এবং ছোটাছুটির মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। রাতে খাওয়ানোর সময় শিশুকে উত্তেজিত করবেন না। নিচু স্বরে কথা বলুন এবং শিশুর চোখে চোখ রাখুন। অন্ধকারে ঘুম এবং নিরবতার বিষয়টি মনে করিয়ে দিন। এটি আপনার শিশুকে বুঝতে সহায়তা করবে যে রাত হচ্ছে ঘুমানোর সময়।

অতিরিক্ত ক্লান্ত শিশুদের জন্য ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। তাছাড়া, শিশুদের ঘুমের ইঙ্গিত বুঝতে শেখাও আপনার জন্য দরকারি। শিশু শান্ত এবং ধীরস্থির হয়ে গেলে, চোখ কচলালে, হাই তোললে বা কান্না করলে বুঝতে হবে এগুলো ঘুমের ইঙ্গিত। ঘুমের এই ধরনের ইঙ্গিত পেলে শিশুদের ঘুম পাড়িয়ে দিন। প্র

বিজ্ঞাপণ

থম মাস শেষে দেখবেন, আগের তুলনায় শিশুর ঘুম ভাঙার সময় এক বা দেড় ঘণ্টা পরিবর্তন হয়েছে। যদি এটি উপকারী হয় তাহলে ডায়রিতে শিশুর খাওয়া এবং ঘুমানোর সময় লিখে রাখুন। এতে করে একটি নিয়ম মেনে চলতে আপনার জন্য সুবিধা হবে।সাধারণ ঘুমের রুটিন তৈরি করার চেষ্টা করুন। ভালোভাবে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করা খুব কঠিন কাজ নয়। প্রতি রাতে শিশুটিকে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে সহযোগিতা করুন।

ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হচ্ছে লক্ষ্য। আপনার শিশুর দিনের ঘুমের যথাসম্ভব একটি সময়সূচি অবলম্বন করুন। যদি আপনি আপনার শিশুকে একদিন ৩টায় ঘুম পাড়ান এবং পরের দিন ১ টায় ঘুম পাড়ান, তাহলে তার একটি নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়তে সমস্যা হবে।

নবজাতকের ঘুম এর  এসব পদ্ধতি অবলম্বনের সময় খুব কঠোর হওয়া যাবে না। জোর করাও উচিত নয়। মুল কাজটা হবে দিনের বেলায় শিশুকে জাগিয়ে রাখতে তাকে উদ্দীপ্ত ও উৎসাহিত করা আর রাতে শিশুর ঘুমের জন্য শব্দহীন, আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা। এতসব করতে গিয়ে নবজাতকের খাওয়া-দাওয়া যেন অপর্যাপ্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment