১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সের শিশুর সঠিক ঘুমের অভ্যাস কিভাবে গড়ে তুলবেন

Spread the love

১৮ মাস বয়সের সময় আপনার শিশুর কি ধরনের ঘুমের অভ্যাস হতে পারে?

ইতোমধ্যে আপনার শিশু হয়ত প্রতি রাতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা এবং প্রতি বিকেলে ২ ঘণ্টা করে ঘুমাচ্ছে। এখনো হয়ত সে দিনে দুইবার ঘুমাতে চাইতে পারে, তবে এক্ষেত্রে যদি রাতে ঘুমানোর সময় এবং অভ্যাসে পরিবর্তন না হয় তাহলে তাকে দুইবার ঘুমাতে দিতে পারেন। এতে কোন সমস্যা হবে না।

শিশুকে ঘুমের সঠিক অভ্যাসের জন্য কীভাবে উৎসাহ দিবেন?

একটা রুটিন তৈরি করুন এবং সেই অনুযায়ী চলুন

বিজ্ঞাপণ

ইতোমধ্যে যদি ঘুমের কোন রুটিন তৈরি না করে থাকেন তাহলে সবচাইতে ভালো হবে যদি দ্রুত একটি রুটিন তৈরি করে সেই অনুযায়ী ঘুমের অভ্যাস তৈরি করে নেন।

অনেক ব্যস্ততম সন্ধ্যাতেও আপনার শিশুর ঘুমের জন্য তার প্রিয় একটা গল্প পড়ে শুনানো অথবা ঘুম পাড়ানি গান গাওয়াটা ঠিক মানিয়ে যায়। এটা আপনার শিশুকে শান্ত এবং রিল্যাক্স হতে সাহায্য করবে এবং ঘুমানোর জন্য উৎসাহ দিবে।

প্রতিদিনের একটা দৈনন্দিন রুটিন আপনার শিশুকে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত অনুভব করাতে সাহায্য করে। আপনার শিশু যদি প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খায়, খেলাধুলা করে এবং ঘুমাতে যায়, তাহলে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ঘুমের সময় হলে আপনার শিশু ঘুমাতে চলে যাবে।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর সময় টিভি দেখলে ঘুমের নিয়মিত অভ্যাস মেনে চলতে সমস্যা হয়। যদিও এটা কি সত্যি কি না তা জানার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে। যদি ঘুমানোর আগে শিশুকে কোন প্রিয় অনুষ্ঠান দেখেন, তাহলে অনুষ্ঠান শেষ হলে পরিবেশটা একটু শান্ত হওয়ার জন্য সময় দিন।

[ আরও পড়ুনঃ বাচ্চার ঘুমের বিষয়ে যে সব ভুল বাবা মায়েরা করে থাকেন এবং তা শোধরানোর উপায় ]

শিশু যাতে নিজ থেকেই ঘুমাতে যায় সে ব্যাপারে তাকে সাহায্য করুন

রাতে ঘুমানোর জন্য যদি এখনো আপনার শিশুর সাহায্যের অর্থাৎ তাকে কোলে নিয়ে হাঁটা, জড়িয়ে ধরে রাখা অথবা রাতের বেলায় উঠে খাওয়ানো ইত্যাদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাকে নিজে থেকে ঘুমানোর ব্যাপারে উৎসাহ দেয়ার জন্য এই বয়সটাই একদম সঠিক একটি সময়।

যদি সে ঘুমানোর জন্য আপনার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে তাহলে তাহলে রাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন নিজ থেকেই আবার ঘুমানো তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।   

শিশুকে সঠিক নিয়মে এবং নিজ থেকে ঘুমানোর উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক রকম প্রশিক্ষণ বা পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। তবে আপনার যদি কোন পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে মনে হয় যে এর কারণে অল্প সময়ের জন্য হলেও আপনার শিশু কান্না করবে, তাহলে কান্না যাতে না করে এমনও অনেক পন্থা আছে, আপনি চাইলে সেগুলোও অনুসরণ করতে পারেন।

আপনি বিভিন্ন রকম উপায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন, যে কোন উপায়টি আপনার এবং আপনার শিশুর সাথে ভালোভাবে মানিয়ে যাচ্ছে।  

[ আরও পড়ুনঃ বাচ্চাকে কিভাবে ঘুমের প্রশিক্ষণ দেবেন। ]

রাতে ঘুমানোর সময় শিশুকে ডামি অর্থাৎ চুষনি দেয়া থেকে বিরত থাকুন

আপনার শিশু যদি রাতে ঘুমানোর জন্য যদি চুষনির উপর নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে দ্রুত চুষনির অভ্যাস পরিবর্তন করে নিন। কেননা রাতে যদি চুষনি তার মুখ থেকে পড়ে যায় তাহলে আপনার শিশু ঘুম থেকে উঠে যেতে পারে। এর বিকল্প হিসেবে জড়িয়ে ধরার জন্য তাকে একটা খেলনা ভালুক দিন অথবা একটা তার প্রিয় একটি চাদর দিতে পারেন।

যদিও প্রথমদিকের কিছু রাত আপনার শিশুর ঘুমাতে একটু সমস্যা হতে পারে, তবে চিন্তার কিছু নেই, কিছুদিনের মধ্যে সে এটাই ভুলে যাবে যে তার কখনো চুষনির প্রয়োজন ছিল।

আপনার শিশুকে নিজের কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দিন

বিজ্ঞাপণ

এই বয়সে শিশু প্রতিদিনই নতুন নতুন কিছু করতে শিখছে। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু না কিছু জানা ও শেখার কারণে তার মধ্যে স্বাধীনচেতা একটা মনোভাব চলে আসে। ফলাফল স্বরূপ তাকে সঠিক সময়ে ঘুম পাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে কিঞ্চিৎ বিড়ম্বনায় ভুগতে হতে পারে।  

তাই যখন ঘুমানোর রুটিন তৈরি করবেন তখন আপনার শিশুকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এতে করে আপনার শিশুর নতুন গড়ে ওঠা স্বাধীন সত্ত্বায় কোন আঘাত আসবে না এবং সে অনুভব করবে যে সবকিছু আসলে তারই নিয়ন্ত্রণে চলছে।

ঘুমানোর সময় কোন গল্পটি সে শুনতে চায় অথবা কোন পায়জামাটি সে পড়তে চায় এটা আপনার শিশুকে জিজ্ঞেস করে নিন। এখানে সবচাইতে মজার কৌশলটি হল, আপনি তাকে এমন কিছু থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলবেন যেগুলোতে আদতে আপনার কোন আপত্তি নেই।

তাকে এমন সব কৌশলে প্রশ্ন করবেন যাতে তার যে কোন উত্তরেই শিশু ঘুমাতে যাবে। যেমন, আপনি তাকে “তুমি কি এখন ঘুমাবে?” এই প্রশ্নটি না করে জিজ্ঞেস করতে পারেন, “তুমি কি এখন ঘুমাবে নাকি দুধ খাওয়ার পরে ঘুমাবে?” বুঝতেই পারছেন, আপনার শিশু যে উত্তরই দিক না কেন, তাকে কিন্তু ঘুমাতে যেতেই হচ্ছে।

এই বয়সে শিশুর ঘুমের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে?

এই ১৮ থেকে ২৪ মাসের সময়ে শিশু নিত্য নতুন অনেক কিছুই কিছুই শিখে নিচ্ছে। এমনকি সে বিছানা থেকে একা একা নিচেও নেমে যেতে পারে। এইসব নিত্য নতুন কাজগুলো সে বারবার করতে চায় আর এগুলো করার জন্য রাতে তার ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে, এমনকি রাতে সে পড়ে গিয়ে ব্যথাও পেতে পারে। 

শিশুকে তার বিছানায় নিরাপদে রাখার জন্য নিম্নে কিছু পরামর্শ দেয়া হলঃ

ম্যাট্রেস যথা সম্ভব নিচু করে রাখুনঃবাচ্চাকে যদি কটে রাখেন তবে তার বিছানায় ম্যাট্রেস একটু নিচু করে রাখুন যাতে করে শিশু নিজ থেকে তার কট টপকিয়ে নিচে নেমে যেতে না পারে। যদিও এটা একদমই সাময়িক সমাধান, কেননা শিশু বড় হতে থাকলে এই কৌশলটি আর অতটা কাজ নাও করতে পারে।

শিশুর বিছানা থেকে খেলনা এবং অন্যান্য সবকিছু সরিয়ে রাখুনঃ ঘুমানোর সময় শিশু অন্য যে কোন কিছুর সাহায্যেই তার কট থেকে নিচে নেমে যেতে চাইতে পারে। তাই একটু খেয়াল রাখুন যাতে তার বিছানায় এমন কিছু না থাকে যেটার উপর পা রেখে সে টপকিয়ে নিচে নেমে যেতে পারে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, তার কোন বই অথবা খেলনার উপর পা দিয়ে সে বিছানা টপকিয়ে নিচে নেমে যেতে পারে। তাই এগুলো সরিয়ে রেখে আপনার শিশুকে একটু বেশিক্ষণ বিছানায় থাকতে সাহায্য করুন।

তবে একটা গবেষণায় দেখা গেছে, বিছানায় খেলনা থাকার কারণে শিশুর গরম লাগতে পারে, গলায় আঘাত লাগতে পারে এমনকি শিশুর নাক আটকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই বিছানায় খেলনা না রাখাই শ্রেয়। 

শিশুর সাথে হৈচৈ করবেন নাঃ আপনার শিশু যদি বিছানা থেকে নিচে নেমে যেতে সক্ষম হয়, এক্ষেত্রে জরুরী বিষয়টি হল, শিশুর প্রতি অতটা মনোযোগ দেখাবেন না। তাহলে সে পুনরায় নিচে নেমে যাওয়ার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে।

নিজেকে শান্ত রাখুন এবং শিশুকে আবার বিছানা টপকিয়ে নিচে নামতে বারণ করে পুনরায় তার বিছানায় রেখে দিন। শিশু খুব শীঘ্রই বুঝে যাবে যে, তার নতুন এই কাজটিতে আপনি খুব একটা খুশি হচ্ছেন না।

এছাড়া আপনার শিশু যদি বারবার এমন করতে থাকে, তাহলে এমন এক যায়গা থেকে শিশুর দিকে নজর রাখুন যাতে শিশু আপনাকে দেখতে না পারে। যখন শিশু বিছানা থেকে নেমে আসতে যাবে সাথে সাথেই তাকে গিয়ে নামতে নিষেধ করুন। এভাবে কয়েকবার করলেই শিশু বুঝে যাবে, তাকে এখন বিছানাতেই থাকতে হবে।    

শিশুকে নিরাপদ রাখুনঃ যদি শিশুকে বিছানা টপকিয়ে নিচে নামতে বাঁধা দেয়া রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাহলে অন্তত এমন কিছু করুন যাতে আপনার শিশু নিরাপদ থাকে। বিছানার পাশের মেঝেতে নরম কিছু বালিশ অথবা কম্বল রেখে দিন।

বিছানার আশেপাশে যদি এমন কোন আসবাব থাকে, বিছানা থেকে নামার সময় যেটাতে শিশু আঘাত পেতে পারে। সেগুলো একটু দূরে দূরে সরিয়ে রাখুন।   

যদি শিশু প্রতি রাতেই এমন বিছানা থেকে নিচে নেমে যেতে থাকে, তাহলে তাকে কোন বড় বিছানায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হয়ত নিরাপদ পন্থা হতে পারে। তবে সেটা যেন অবশ্যই আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য সুবিধাজনক হয় সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। এছাড়া শিশুর রুম আরো কীভাবে নিরাপদ রাখা যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন। মনে রাখবেন, আপনার শিশুর নিরাপত্তাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment