১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের শিশুর সঠিক ঘুমের অভ্যাস কিভাবে গড়ে তুলবেন

Spread the love

আপনার ১২-১৮ মাস বয়সের শিশুর ঘুমের অভ্যাস ঠিক কি রকম হবে?

আপনার শিশু প্রতিনিয়তই স্বাধীনভাবে বড় হচ্ছে, তবে এখনো কিন্তু একদম নবজাতক এক শিশুর মতই তারও ঠিকমত ঘুমের প্রয়োজন। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের আপনার শিশুটি দৈনিক ১৪ ঘণ্টা ঘুমাচ্ছে কি না সে ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখুন। আর এই ১৪ ঘণ্টার মধ্যে রাতে নুন্যতম ১১ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস তার জন্য খুবই জরুরী।

রাতের ঘুম ছাড়াও ১২ মাস বয়সের সময়েও আপনার শিশুর প্রতিদিন দুইবার ঘুমানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে জেনে রাখা ভালো যে, ১৮ মাস বয়স হওয়ার আগেই সে এই দুইবেলা ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করে এক বেলা ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপণ

আপনার শিশু তার ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য তৈরি কি না তার লক্ষণগুলোর দিকে একটু ভালোভাবে লক্ষ্য রাখুন। আপনার শিশু হয়ত দিনের বেলায় একটু দেরি করে ঘুমাতে যাচ্ছে, সকালে ঘুমলেও আবার বিকেলে ঘুমাতে চাচ্ছে না  অথবা এমন দেখা যেতে পারে আপনার শিশু দিনের বেলায় আগের তুলনায় একটু কম ঘুমাচ্ছে।

এই ধরনের অনেক লক্ষণ আছে যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর জন্য এখন দিনে দুই বেলা ঘুমের পরিবর্তে এক বেলা ঘুমই যথেষ্ট। আর এই ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তনের অনেকগুলো উপায় থাকা সত্যেও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে আপনার এবং আপনার ছোট্ট শিশুটির সাথে কোন অভ্যাসটা ভালোভাবে মানিয়ে যাচ্ছে। 

আপনার যখন মনে হবে যে এখনই সঠিক সময়, তখন আপনি চাইলে শিশুর সকাল বেলায় আবার একটু ঘুমানোর অভ্যাসটা বাদ দিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে দেখা যাবে হয়ত আপনার শিশু খুব দ্রুতই নতুন অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে অথবা তার সকালের ঘুম বাদ দিয়ে বিকেলের দীর্ঘ ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে একটু সময়ও লাগতে পারে।

এছাড়া আপনি চাইলে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন লক্ষণ দেখে অথবা ক্লান্তভাব দেখে তার এই ঘুমের এই অভ্যাস পরিবর্তন আরো ধীরে ধীরে করতে পারেন। দিনের বেলায় একদিন শিশুকে দুইবেলা আবার অন্যদিন একবেলা করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে দেখতে পারেন।

তবে এটা নির্ভর করবে এর আগের রাতে শিশু কতক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছিল তার উপর। আপনার শিশু তার ঘুমের নতুন অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত একবেলা ঘুমের দিনে তার রাতের ঘুমের সময়টি একটু এগিয়ে আনতে পারেন। 

আপনি কীভাবে শিশুকে সঠিক ঘুমের অভ্যাসের জন্য উৎসাহী করতে পারেন?

ঘুমের একটি রুটিন তৈরি করুন

আপনার শিশু যাতে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমতে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমের অভ্যাসের জন্য শিশু নিজে থেকেই বুঝতে পারে কখন তার ঘুমের সময় হয়েছে, তাই শিশুর ঘুমের জন্য একটা রুটিন তৈরি করে ফেলুন এবং সেটা মেনে চলুন। ঘুমানোর সময়টা আগে থেকে জানা থাকলে শিশু তখন নিজে থেকেই শান্ত হয়ে পড়বে এবং সবচাইতে জরুরী যে বিষয়টা হল শিশু নিজ থেকেই ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকবে।  

ঘুমানোর সময় ঘনিয়ে আসলে আপনার শিশু যদি একটু দৌড়াদৌড়ি বা খেলাধুলা করতে চায় তাহলে তাকে সেটা করতে দিন। এতে করে শিশুর মধ্যে ক্লান্তি আসবে এবং তার ঘুম বেশ ভালো হবে। যদিও এই খেলার সময়টা যাতে ঘুমের সময়কে অতিক্রম না করে সেদিকে খেয়াল রাখবেন, কেননা এতে করে আপনার শিশু অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে এবং ঘুমানোর জন্য অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

ঘুমানোর সময় হয়ে গেলে শিশুকে শান্ত রাখার জন্য তাকে গল্পের বই পড়ে শুনাতে পারেন, এমনকি ঘুম পাড়ানি গান গেয়েও তাকে ঘুম পাড়াতে পারেন। সন্ধ্যার পরের নিয়মিত কাজগুলো যেন প্রশান্তির ও ধিরস্থির হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কেননা সন্ধ্যার পর যদি শিশু অতিরিক্ত খেলাধুলা করে ফেলে তাহলে সে হয়ত একটু বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্ত শিশুরা খিটখিটে হয়ে ওঠে এবং ঘুমাতে চায়না।

ঘুমানোর সময়টা যাতে একটু খুব স্পেশাল একটা সময় হয় সে চেষ্টা করুন, আর তাই এই ঘুমানোর সময়ে বাবা মা দুইজনই শিশুকে একটু বেশি সময় দিন। বাসা থেকে যদি দূরে কোথাও থাকাও হয়, তবুও প্রতি রাতের এই অভ্যাসটি মেনে চলুন। এতে করে আপনার শিশু ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে যে এই সময়টা তার ঘুমের সময় এবং সেও এই অভ্যাস মেনে চলা শুরু করবে।    

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর সময় টিভি দেখলে ঘুমের নিয়মিত অভ্যাস মেনে চলতে সমস্যা হয়। যদিও এটা কি সত্যি কি না তা জানার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে। যদি ঘুমানোর আগে শিশুকে নিয়ে কোন প্রিয় অনুষ্ঠান দেখেন, তাহলে অনুষ্ঠান শেষ হলে পরিবেশটা একটু শান্ত হওয়ার জন্য সময় দিন।

বিজ্ঞাপণ

প্রতিদিন একই ঘুমের রুটিন মেনে চলুন

প্রতিদিনকার একই রুটিন মেনে চললে আপনার শিশু অনেক নিরাপদ অনুভব করবে। সে যদি একই সময়ে প্রতিদিন খাওয়া দাওয়া করে আর ঘুমতে যায়, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যাবে ঘুমানোর সময় হলে কোন সমস্যা ছাড়াই সে ঘুমিয়ে গেছে। 

রাতের বেলায় ঘুমানোর মতই বিকেলের ঘুমের জন্যও যদি একইভাবে রুটিন মেনে চলা হয় তাহলে আপনার শিশু একই সময়ে প্রতিদিন বৈকালিক বিশ্রাম নিতে যাবে। আর ঠিক রাতের ঘুমানোর সময়েও বিকেলে শিশুকে গল্পের বই পড়ে শুনাতে পারেন অথবা গান গেয়ে শুনাতে পারেন, তবে তা হবে অল্প সময়ের জন্য । এই রুটিন নিয়মিত মেনে চললে আপনার শিশু বিকেলের ঘুমের জন্য সাধারণত অস্বীকৃতি জানাবে না।

আপনার শিশু যদি দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমিয়ে নেয়, তাহলে সেটা তার রাতের বেলার ঘুমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন, যাতে তিনটার মধ্যেই শিশু বিকেলের জন্য ঘুমাতে যায়। তাহলে রাতে ঘুমানোর আগেই সে আবার যথেষ্ট পরিমাণে ক্লান্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। 

রাতে ঘুমানোর সময় শিশুকে ডামি অর্থাৎ চুষনি দেয়া থেকে বিরত থাকুন

আপনার শিশু রাতে ঘুমানোর জন্য যদি চুষনির উপর নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে দ্রুত চুষনির অভ্যাস পরিবর্তন করে নিন। কেননা রাতে যদি চুষনি তার মুখ থেকে পড়ে যায় তাহলে আপনার শিশু ঘুম থেকে উঠে যেতে পারে। এর বিকল্প হিসেবে জড়িয়ে ধরার জন্য তাকে একটা খেলনা ভালুক দিন অথবা একটা চাদর দিতে পারেন।  

যদিও প্রথমদিকের কিছু রাত আপনার শিশুর ঘুমাতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবুও ধীরে ধীরে এই চুষনির অভ্যাস পরিবর্তন না করে হুট করেই চুষনি সরিয়ে নিন। চিন্তার কিছু নেই, কিছুদিনের মধ্যেই আপনার শিশু তার চুষনির কথা ভুলে যাবে। 

এই বয়সের শিশুর ঘুমের কি ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে?

এই বয়সে আপনার শিশু প্রতিনিয়তই নতুন কিছু না কিছু শিখছে, যেমন দাঁড়ানো, হাঁটা অথবা কোন কিছু বেয়ে উপরের দিকে ওঠা। আর তার নতুন শেখা ক্ষমতাগুলো ব্যাবহার করতে সে সারাদিন চেষ্টা করতে থাকবে। আর তাই আপনি হয়ত হুট করেই মাঝরাতে দেখতে পারেন যে আপনার শিশু জেগে আছে।

এক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো অভ্যাস হল, আপনার শিশু মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে গেলে তাকে আবার নিজ থেকেই শান্ত হয়ে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়তে দিন। এতে করে সে বুঝতে পারবে, কীভাবে নিজেকে শান্ত করে রাতে ঘুমাতে হয়।  

ঘুমানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়াটা শিশুকে নিজ থেকেই শান্ত হয়ে ঘুমানোর ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলে। আর এই ঘুমের জন্য প্রশিক্ষণের অনেক ধরনের উপায় আছে যেগুলো আপনি চাইলে অবলম্বন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি ও আপনার শিশু যে উপায়টি খুব ভালোভাবে মেনে চলতে পারেন, নিত্য নতুন পন্থা অবলম্বন করা থেকে বরং সেই উপায়ই মেনে চলা সবচাইতে ভালো। অর্থাৎ, আপনার পরিবার ও শিশুর জন্য যথাযথ ও কার্যকরী পন্থাটিই অবলম্বন করা শ্রেয়।

আপনি হয়ত দেখতে পারেন যে আপনার শিশু খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি হয়ত চাইতে পারেন যে তাকে একটু দেরী করে ঘুম পাড়ানোর জন্য যাতে করে আপনার শিশু সকালে একটু বেশি সময় ঘুমায়। তবে এই পন্থা আপনার শিশুকে অতিরিক্ত ক্লান্ত করে দিতে পারে এবং যার ফলে সে রাতে ভালোভাবে নাও ঘুমাতে পারে।

খুব সকালে শিশুর ঘুম ভেঙ্গে গেলে একটু ধৈর্যশীল হন, কেননা এই অভ্যাস শিশুর বেশিদিন থাকবেনা। একটা নিয়মিত রুটিন মেনে চললেই শিশুর এই অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে এমন হলে, আপনার সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর সাথে পাল্টাপাল্টি করে শিশুর সাথে সকালে উঠুন। অর্থাৎ একদিন আপনি শিশুর সাথে সকালে জাগবেন এবং অন্যদিন আপনার সঙ্গী শিশুর সাথে সকালে জেগে উঠবে। এতে করে একজনের অন্তত রাতে ভালো ঘুম হবে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

2 Thoughts to “১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের শিশুর সঠিক ঘুমের অভ্যাস কিভাবে গড়ে তুলবেন”

  1. Sathi islam

    Amar baby din a 2 bar ghumay but olpo time. Ami job kori tai proper dekhval korte pari na.amr amma dekhe rakhe. Kono din ak bar ghumay din a. Rat a 7ঃ30 ba 8 ter modhei ghumiye pore.kin2 problem holo. Sara rat e buker dudh chuse. Ata khub biroktokor. Ki vabe a bosoy theke ppritran pauya jabe plz janaben. Amr baby er age 14month. R rat a je ghumer modhe dudh khay ate ki tar brain er opor kono provab porte pare?

    1. রাতে দুধ খাওয়ার সাথে ব্রেইনে প্রভাব পড়ার কোন সম্পর্ক নেই। ঘুমের বিষয়ে আপনাকে একটু কষ্ট করে তার রুটিন তৈরি করতেই হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।

Leave a Comment