গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটের আকার । কখন দুশ্চিন্তার, কখন নয়

Spread the love

বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রেই যখনই কেউ তার গর্ভাবস্থার খবর জানতে পারে তখন থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের উপদেশ। আশেপাশের সবাই হয়ে ওঠেন গর্ভধারণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। সবার নজর থাকে মায়ের পেটের দিকে। মায়ের পেট বড় নাকি ছোট তা নিয়ে শুরু হয় বিস্তর গবেষণা এবং নিজেদের সাথে তুলনা।

এসব শুনতে শুনতে দেখা যায় মা তার নিজের গর্ভধারণ নিয়েই দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের কাছে নিয়মিত যেসব প্রশ্ন আসে তার মধ্যে অন্যতম হলো- পেট বেশী বোঝা না যাওয়া কি কোন সমস্যা কিনা। তাই আজকের আলোচনা গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটের আকার  কেমন হতে পারে তা নিয়ে।

বিজ্ঞাপণ

গর্ভবতীর পেট কখন থেকে বাড়তে থাকে

এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। প্রত্যেকটি মা ই আলাদা। অনেক মায়েদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারেও পেট তেমন একটা বাড়ে না আবার কারো কারো প্রথম ট্রাইমেস্টারেই পেট বোঝা যেতে পারে।

আবার কিছু কিছু মায়দের পজিটিভ প্রেগন্যান্সি টেস্ট পাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পেট ফোলা ভাব থাকতে পারে। তবে এর কারণ ভিন্ন হতে পারে। যদি অনেক আগেই পেট বাড়তে থাকে তবে এর কারণ হতে পারে নিম্নরূপ-

প্রথমবার মা হতে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১২-১৬ সপ্তাহের মাঝে পেট বাড়তে পারে। তবে আগে গর্ভধারণ করা মহিলাদের ক্ষেত্রে তা আরও আগে শুরু হতে পারে। কারণ তাদের জরায়ু এবং পেটের পেশী আগের গর্ভধারণের কারণে প্রসারিত থাকে।

গবেষকদের মতে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত জরায়ু পিউবিক হাড়ের ভেতরে থাকে যার কারণে তা তেমন একটা বোঝা যায় না। এ সময়ের পর থেকে তা মায়ের পেলভিসের বাইরের দিকে বাড়তে থাকে।

এছাড়াও মায়ের জিন এর উপর ভিত্তি করেও পেট বোঝা যাওয়ার সময় ভিন্ন হতে পারে। পরিবারের অন্য সদ্যসদ্যের যদি পেটের আকার বাড়তে দেরী হয়ে থাকে তবে আপনার ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।

বয়সের উপরও এটা নির্ভর করতে পারে। বয়স বেশী মায়দের ক্ষেত্রে পেটে তাড়াতাড়ি বাড়তে শুরু করতে পারে আর কম বয়সী মায়দের দেরীতে বাড়তে পারে কারণ কম বয়সী মায়েদের পেটের পেশী শক্ত ও মজবুত থাকে।

পেট বাড়তে শুরু হওয়া দেরী হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। অনেকের রেট্রোভারটেড জরায়ু থাকতে পারে, যার মানে হলো জরায়ু পেছনের দিকে হেলানো থাকতে পারে। এটি বাচ্চার বৃদ্ধিতে তেমন বাঁধার সৃষ্টি করেনা। জরায়ু যখন পেলভিস থেকে বের হয়ে পেটের দিকে বাড়তে থাকে তখন এটা ঠিক হয়ে যায়।

এর পড়ও যদি কোন কারণে মনে সন্দেহ থাকে বা সমস্যা আছে বলে মনে হয়, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন। তিনি আলট্রাসাউন্ড  করে দেখবেন সব ঠিক আছে কিনা।

গর্ভবতীর পেট ছোট বা বড় দেখানোর কারণ

বাচ্চা ঠিকভাবে বেড়ে না ওঠার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়ের পেট ছোট দেখাতে পারে এবং এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কথা শুনে চলাই উচিৎ। ঘরের মানুষ বা বন্ধুবান্ধবের কথা নয়।

যদিও  প্রত্যেক মায়ের ক্ষেত্রে তার পেট কেন ছোট দেখায় সেটা বলা সম্ভব নয় তবে কিছু কিছু কারণে সব ঠিক থাকার পড়ও কারো কারো পেটের আকার ছোট বা বড় থাকতে পারে।

প্রথমবার গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে পেটের পেশী গুলো শক্ত এবং মজবুত থাকে। এই কারণে পেট খুব বেশী একটা সামনের দিকে বাড়েনা। পেটের পেশীগুলো জরায়ুকে ধরে রাখে এবং জরায়ু উপরের দিকে বাড়তে থাকে। এই কারণে পেট তেমন একটা বোঝা যায়না।

একবার গর্ভবতী হওয়ার পড় যেহেতু পেটের পেশীগুলো প্রসারিত হয় তাই পরবর্তী গর্ভধারণে পেট বড় দেখাতে পারে। কিছু কিছু মায়েদের আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় গর্ভধারণেও পেট ছোট থাকতে পারে যদি তারা মধ্যবর্তী সময় খুব ফিট থাকে এবং নিয়মিত পেটের পেশীর ব্যায়াম করেন।

বিজ্ঞাপণ

বাচ্চার অবস্থানের কারণেও পেট ছোট দেখাতে পারে। গর্ভে বাচ্চারা নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করে। বিশেষ করে ৩২-৩৪ সপ্তাহ পর্যন্ত। এর উপর ভিত্তি করে মায়ের পেট কোন সময় বড় লাগতে পারে আবার কোন সময় ছোট লাগতে পারে।

লম্বা মায়েদের, যাদের কোমর থেকে পাঁজরের নীচ পর্যন্ত জায়গা লম্বা হয় তাদের শরীরে জারায়ুর উপরের দিকে বাড়ার জন্য অনেক জায়গা থাকে। এসব লম্বা মায়েদের পেট খুব একটা বোঝা নাও যেতে পারে কারণ তাদের জরায়ু সামনের দিকে না বেড়ে উপরের দিকে বাড়তে থাকে।

ঠিক একই ভাবে খাটো মায়েদের জরায়ু উপরের দিকে খুব একটা বাড়ার জায়গা পায়না। তাই তাদের ক্ষেত্রে জরায়ু বাইরের দিকে বাড়তে থাকে এবং তাদের পেট আকারে বড় মনে হয়।

মায়ের জরায়ু যখন বাড়তে থাকে তখন তার পেটের অন্যান্য অঙ্গগুলো জরায়ুর চাপে বিভিন্ন দিকে সরে যায়। অঙ্গ গুলো যদি জরায়ুর সামনের দিকে বা পেছনের দিকে থাকে তবে মায়ের পেট বড় এবং গোল দেখায়। আর যদি এই অঙ্গগুলো জরায়ুর পাশের দিকে থাকে তবে মায়ের পেট পাশে বড় দেখায় এবং সামনের দিকে তেমন একটা বড় হয়না।

বাচ্চার চারপাশে থাকা অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের কারণেও মায়ের পেট ছোট মনে হতে পারে। যদিও মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত ফ্লুইড এবং কম ফ্লুইড দুটোই সমস্যার কারণ। তবে এর মাত্রা প্রতি ঘণ্টায় পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রথম ২০ সপ্তাহে বেশীর ভাগ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড মায়ের শরীর থেকে উৎপন্ন হয় পরবর্তীতে গর্ভের শিশু প্রস্রাবের মাধ্যমে তা উৎপন্ন করে।  তাই গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বাচ্চা কি পরিমাণ ফ্লুইড উৎপন্ন করছে তার উপর নির্ভর করে মায়ের পেটের আকার পরিবর্তিত হতে পারে।

গর্ভের বাচ্চা ছোট না বড় সেটার উপর ভিত্তি করেও পেটের আকার ভিন্ন হতে পারে। বাচ্চা ছোট মানেই এই নয় যে বাচ্চার কোন সমস্যা আছে। বাচ্চার আকার কেমন হবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করে মা ও বাবার জিনের উপর। বাবা মা দুজনই যদি লম্বা হয় তবে বাচ্চা ও লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আর বাবা মা দুজনই গড়পড়তা সাইজের হলে বাচ্চারও তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটের আকার বড় বা ছোট হওয়াটা কি সবসময় সমস্যা নির্দেশ করে?

মায়ের পেটের আকার ছোট বা বড় হওয়া মানেই তা সমস্যার লক্ষণ এমনটা নয়। একটা বিষয়েই খেয়াল রাখতে হবে এবং তা হলো বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা। ডাক্তারের প্রতিটি সাক্ষাতকারে তিনি মায়ের পেটে বাচ্চার অবস্থান এবং বাচ্চার আকারের পরিমাপ করেন এবং তা পর্যবেক্ষণে রাখেন। এছাড়াও আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি আলট্রাসাউন্ড  করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপণ

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চার সমস্যার কারণে পেটের আকারের ভিন্নতা হতে পারে। এ সমস্যাগুলো যদিও  খুব কম ক্ষেত্রেই হয় তবু আপনার ডাক্তার সমস্যাগুলো সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন। যদি তিনি মনে করেন আপানার পেটের আকারে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে তাহলে আরও পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন। এবং এগুলোর মাধ্যমে তিনি বাচ্চার বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করবেন।

তাই পেটের আকার নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করে বা অন্যদের কথায় কান না দিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। বাচ্চার বৃদ্ধিতে কোন সমস্যা থাকলে তিনিই আপনাকে জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।

যদি বাচ্চার আকার ছোট হয় তবে সেটা জেনেটিক কোন কারণে নাকি বাচ্চার কোন সমস্যার কারণে সেটা ডাক্তারের কাছ থেকে যেনে নিন। বাচ্চা ছোট হলেই- “কি খেলে বাচ্চার ওজন বাড়বে” ধরনের চিন্তা বা প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করবেন না।

বাচ্চার ওজন বাড়ানোর জন্য আলাদা কিছুই খাওয়ার প্রয়োজন নেই। সুস্থ গর্ভধারণের জন্য যেসব পুষ্টিকর খাবারের পরামর্শ দেয়া হয় সেগুলো খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাটায় আসল কথা।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

2 Thoughts to “গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটের আকার । কখন দুশ্চিন্তার, কখন নয়”

  1. ferdousi

    hi amr 29week choltase amr babyr ojon 1000gr kintu amr pet ta tmn buja jay na et ki kono somossa

    1. এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আর্টিকেলটিতেই করা হয়েছে।

Leave a Comment