ভালো খাদ্যাভ্যাস আপনার সন্তানকে দ্রুত শেখা ও বড় হবার শক্তি প্রদান করে। এছাড়া এটা তাকে সুস্থ থাকতে এবং সবসময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। পুষ্টিকর খাদ্যকে আপনার বাচ্চার কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার কিছু উপায় আপনি এখানে খুজে পাবেন।
খাদ্য বাছাইয়ে আপনার সন্তানকে মতামত দিতে দিন
আপনার বাচ্চাকে খাদ্যে আগ্রহী করার সবচেয়ে দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে তাকে পরিবারের খাবার কেনার সিদ্ধান্তে জড়িত করুন। যদিও তার খাবার বাছাই করার মতো বয়স হয়নি, তবে সে অবশ্যই মুদি দোকানে যেতে ভালোবাসবে।
তার বোঝার মতো বয়স হলে বাজারের লিস্টটা তার হাতে দিন এবং তাকে নিজের পছন্দ মতো কিছু খাবার কিনতে দিন ,যেমনঃ জাম না আম? মটরশুটি না গাজর? ক্র্যাকার না কেক?
প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন সবজি বা ফল কেনার অভ্যাস তৈরি করান। তবে এটা মনে রাখবেন যে এই খাবারগুলো আপনার বাচ্চাকে পুরোপুরি খাওয়াতে কিছুদিন চেষ্টা করতে হবে। কোন কোন পুষ্টিবিদেরা বলেন যে , অন্যান্য খাবারে যাওয়ার আগে বাচ্চাকে ১০ বার আগের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করার চেষ্টা করতে হবে।
[ আরও পড়ুনঃ শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস তৈরির ৭ টি টিপস (ছয় মাস থেকে ১৮ মাস বয়সী বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ]
খাবার দিয়ে মজার কিছু তৈরি করুন
আপনার বাচ্চার সাহায্য নিয়ে পিজ্জার টপিংস তৈরি করুন অথবা কাসেরোলের উপর ভাজা পনিরটি রাখুন। গাজর, চেরী, টমেটো, মরিচ দিয়ে বাচ্চার প্লেটে মানুষের মুখের মতো আকৃতি তৈরি করে ফেলুন।
তার নামের প্রথম অক্ষর আকৃতির প্যানকেক তৈরি করুন অথবা হার্ট আকৃতিতে টোস্ট কেটে তার প্লেটে সাজিয়ে রাখুন। ফলের টুকরা বা ক্র্যাকারের সাথে দই খেতে দিন এবং বাচ্চার জন্য সুন্দর থালা, গ্লাস ও মানানসই টেবিল ম্যাট রাখুন।
খাবারের উৎসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন
আপনার বাচ্চাকে একটি বাগানে বা খামারে নিয়ে যান যাতে সে তার প্লেটের খাবার গুলো কিভাবে আসে তা বুঝতে পারে।এই বয়সে সে হয়তো এতোকিছু বুঝতে পারবে না , কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তাকে খাবারের প্রতি আরো আগ্রহী কর তুলবে।
জুস খাওয়ানোর বেলায় একটু খুঁতখুঁতে হতেই পারেন
ফলের জুস আপনার বাচ্চার প্রতিদিনের ফলের চাহিদা পূরণ করতে পারে, কিন্তু কি পরিমাণ দিচ্ছেন এবং কি ধরণের জুস দিচ্ছেন সে বিষয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনার বাচ্চাকে তাজা ফলের জুস বা ফল-সবজির মিক্স জুস খেতে দিন (এগুলাতে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে এবং অন্যান্য ফলের তুলনায় কম প্রাকৃতিক চিনি থাকে)। কিছু কিছু বাচ্চা শুধু সবজির জুস খেতেও পছন্দ করে।
যদি আপনার বাচ্চা দুধ খেতে না চায় তবে তাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ জুস দিতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে ফ্রুট ড্রিঙ্কস খেতে দিবেন না । এটায় মাত্র ১০ শতাংশ জুস আর বাদবাকি কৃত্রিম ফ্লেভার ও চিনি থাকে।এক্ষেত্রে পানীয়ের গায়ের উপাদান লেভেলটি আপনাকে পানীয়টি কি কি দিয়ে তৈরি তা জানতে সাহায্য করবে।
কিন্তু মনে রাখবেন খুব পুষ্টিকর জুসও কখনো কখনো খুব সহজেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। জুস বাচ্চার স্থুলতা ও অপুষ্টির কারনও হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত ক্যালোরি দিতে পারলেও সব জুস কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টির চাহিদা পুরন করতে পারে না। এছাড়া এটা দাত ক্ষয়ের কারণও হতে পারে।
এজন্য আপনার বাচ্চাকে দিনে ১/২ কাপের বেশি ফলের রস খাওয়াবেন না। ওর পুষ্টির চাহিদা অনুযায়ী তাজা ফল খেতে দিনে কিন্তু যখন ওর পিপাসা পাবে, ওকে পানি খেতে উৎসাহ দিন।
শেইক এন্ড বেইক
আপনার সন্তানের খাবারের চার্টে ফল ও অন্যান্য নিউট্রিশন যোগ করার সহজ উপায় হচ্ছে সব খাবার একসাথে মিক্সড করে ফেলা।এটার জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র একটা ব্লেন্ডার আর কিছু সহজলভ্য উপাদান। আপনি আপনার পছন্দ মতো তাজা ফল, হিমায়িত ফল (যেমনঃ জাম বা কলা) অথবা ক্যানজাত আনারস বা চেরী ব্যবহার করে সিরাপ তৈরি করুন।
আপনি চাইলে টফু অথবা সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ যোগ করতে পারেন। এটা স্বাদ ও আকৃতি কোনটাই পরির্বতন না করে প্রোটিন যোগ করবে। খানিকটা ফ্লেক্স দানা যোগ করবে বাড়তি আঁশ এবং ওমেগা-৩ নামের উপকারি চর্বি। এগুলো ফলের রস দিয়ে ব্লেন্ড করুন অথবা এরসাথে দুধ, দই যোগ করুন।স্বাদটা ওর পছন্দ হবেই।
শিশুকে লুকিয়ে নয় বরং ওকে জানিয়ে খেতে দিন নতুন কিছু
আপনার বাচ্চার পছন্দের খাবারগুলোর সাথে অন্যান্য খাবারগুলোও যোগ করার চেষ্টা করুন, কিন্তু সেটা তার কাছ থেকে লুকাবেন না ( কারণ সে হয়তো এখন খাবারটা পছন্দ করছে, পরবর্তীতে জানলে তার মনে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হবে) ।
এরচেয়ে তাকে বলুন আজ আপনি তার জন্য পালং শাক বা ব্রোকলি অথবা চিজ মেশানো স্পেশাল পাস্তা বানাচ্ছেন। আর এগুলো তাকে খেতে উৎসাহিত করুন।
হিসাব করুন
আপনার সন্তানের পুষ্টিকর চাহিদাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকুন, তবে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না । বাচ্চাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা কঠিন কিছুনা। একটি বাচ্চার প্রতিদিন মাত্র ১,০০০ ক্যালোরি প্রয়োজন।এর মানে হলো এক থেকে দুই টেবিল চামচ সবজি এবং ওর হাতের তালুর সাইজের এক টুকরো মাংসই যথেষ্ট ওর জন্য। এখানে ভালো পুষ্টি পরিবেশন করার কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলোঃ
পিনাট বাটার লাগানো একটা গমের রুটি এবং অর্ধেক কাপ দুধ আপনার বাচ্চার একদিনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, শর্করা এবং ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে।
এছাড়া শুধুমাত্র একটা কলা, অর্ধেক আপেল এবং অর্ধকাপ স্ট্রবেরি একটা বাচ্চার সারাদিনের ফলের চাহিদা পূরণ করে।
বাড়িতে অথবা ছাদে বাগান করতে পারেন
বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা বাসার ছাদে বাগান করতে পারেন। বাগানের সাথে সন্তানকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। টুকটাক সবজি গাছ, শাক ইত্যাদি লাগালেন। সন্তান নিজে বাগানের যত্ন নিতে নিতে নিজের বাগানের সবজি খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হবে।
রোল মডেলের ভূমিকা পালন করুন
যেহেতু আপনি আপনার বাচ্চার সুষম খাদ্যাভ্যাসের সমস্ত বিষয় বিবেচনা করেন, সেহেতু আপনি এসকল বিষয় আপনার নিজের চর্চার মধ্যে রাখবেন। আপনার বাচ্চা যদি আপনাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে না দেখে প্রচুর জাঙ্কফুড খেতে দেখে, আপনি কখনোই তার সঠিক খাদাভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন না।কারণ আপনার বাচ্চা আপনাকে দেখেই শিখবে।তাই, আপনি এবং আপনার বাচ্চা উভয়েই শস্য, ফল এবং শাকসবজি খাবার অভ্যাস তৈরি করুন।
অতিরিক্ত চিন্তিত হবেন না
খাবার নিয়ে আপনার শিশুর সাথে জোরাজোরি ভুলে যান। ও যতটুকু খেতে চায় ততটুকুই খেতে দিন। খাবারের জন্য ঘুষ হিসেবে মিষ্টি আচরন বা শাস্তি কোনটাই দেবেন না।
টেলিভিশনের সামনে খেতে না বসে সবাই একসাথে খেতে বসুন এবং এটাকেই উপভোগ্য করে তুলুন যাতে আপনার শিশু খাবারের সাথে ভালো ও সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
সবার জন্য শুভকামনা।