স্বাভাবিক প্রসব আরম্ভের লক্ষণ সমূহ

আর্টিকেলটিতে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে -
Spread the love

ডেলিভারির তারিখ খুব কাছে চলে এসেছে? তাহলে এখনই স্বাভাবিক প্রসব আরম্ভের সঠিক লক্ষণ সমূহ জেনে নিন যাতে কোন লক্ষণ দেখলে সাথে সাথে বুঝতে পারেন যে এটা প্রসবের লক্ষণ নাকি ফলস পেইন।

সেই সাথে যখন সত্যিকারের প্রসব শুরু  হবে, তখনকার লক্ষণগুলিও জেনে নিন।

বিজ্ঞাপণ
প্রসব আরম্ভের লক্ষণ সমূহ

স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ  

গর্ভের মোট সময় কাল ধরা হয় সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন বা ঌ মাস ৭ দিন৷ শেষ মাসিকের প্রথম দিনটিকে গর্ভধারনের প্রথম দিন ধরে প্রসবের তারিখ নির্ধারন করা হয়ে থাকে৷ যেমন – গর্ভধারণের পূর্বে শেষ মাসিকের প্রথম দিন যদি ২০ ডিসেম্বর হয় তবে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ হবে ২৭ সেপ্টেম্বর । এক্ষেত্রে প্রতি মাসকে ৩০ দিন হিসেবে ধরা হয়৷ এই তারিখের ২ সপ্তাহ আগে বা পরে যে কোনও তারিখে সাধারণত নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে৷

মায়ের শরীর যে স্বাভাবিক প্রসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে তা কিভাবে বুঝবেন

ডাক্তার আপনার নরমাল ডেলিভারির যে সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করে দিয়েছে, সে তারিখ অনুযায়ী প্রসবের কিছুদিন আগে অর্থাৎ গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহে অথবা শেষ মাসের দিকে আপনি প্রসব পূর্ববর্তী লক্ষণগুলো খেয়াল করা শুরু করবেন:

শিশু পেটের নিম্নভাগে চলে আসা: এটি যদি আপনার প্রথম সন্তান হয়, তাহলে ডেলিভারির কয়েক সপ্তাহ আগে হয়তো আপনি ‘লাইটেনিং’ বা হালকা লাগার ব্যাপারটা অনুভব করতে পারবেন। লাইটেনিং অর্থ আপনার শিশু এখন পেটের নিম্নভাগে অর্থাৎ পেলভিক অঞ্চলে চলে এসেছে।

শিশু নিম্নভাগে চলে আসায় বুকের হাঁড়ের ঠিক নিচে এতদিন যে চাপ অনুভব করতেন সেটি এখন কমে যাবে, যার ফলে আপনার নিঃশ্বাস নেওয়া সহজ হচ্ছে মনে হবে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় যদি বুকে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে, সেটিও এই সময়ে এসে কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে এটি যদি আপনার প্রথম সন্তান না হয়, তাহলে প্রসব শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত ‘লাইটেনিং’ অনুভূত নাও হতে পারে।

লাইটেনিং
লাইটেনিং অর্থ আপনার শিশু এখন পেটের নিম্নভাগে অর্থাৎ পেলভিক অঞ্চলে চলে এসেছে। ছবি সূত্রঃ medillsb.com/

বারবার ব্রাক্সটন হিকস কন্ট্রাকশন হওয়া: ঘন ঘন এবং তীব্র মাত্রার ব্রাক্সটন হিকস কন্ট্রাকশন বা ফলস লেবর পেইনের মাধ্যমে আপনি প্রি লেবারের সিগনাল পেতে পারেন। প্রি লেবারের সময় সারভিক্স পাতলা ও প্রশস্ত হতে থাকে এবং সত্যিকারের প্রসবের জন্যে প্রস্তুত হয়ে ওঠে। কিছু কিছু নারীদের এই সময় পিরিয়ডের মত ক্র‍্যাম্প হতে পারে।

সারভিক্সের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন: প্রসবের কিছুদিন আগে অথবা কিছু সপ্তাহ আগে থেকে সারভিক্সের কানেক্টিভ টিস্যুর পরিবর্তনের ফলে সারভিক্স ধীরে ধীরে পাতলা ও প্রশস্ত হতে থাকে। সারভিক্সের পাতলা হয়ে যাওয়াকে এফেসমেন্ট (effacement) বলে এবং এর মুখ খোলাকে ডায়লেশন (dilation) বলে।

সারভিক্সের পাতলা হয়ে যাওয়াকে  এফেসমেন্ট (effacement) বলে এবং এর মুখ খোলাকে ডায়লেশন (dilation) বলে।  ছবি সূত্রঃ medicalnewstoday
সারভিক্সের পাতলা হয়ে যাওয়াকে এফেসমেন্ট (effacement) বলে এবং এর মুখ খোলাকে ডায়লেশন (dilation) বলে। ছবি সূত্রঃ medicalnewstoday

আপনার যদি পূর্বে শিশু জন্ম দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে প্রসব শুরু হওয়ার আগে সারভিক্স এক থেকে দুই সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। কিন্তু, আপনার প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থা যদি ৪০ সপ্তাহ পূর্ণ হয়ে যায় এবং সারভিক্স যদি ১ সেন্টিমিটারের মত প্রশস্ত হয়, তবু এ কথা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রসব সন্নিকটে।

স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ যখন খুব কাছে চলে আসবে, আপনার ডাক্তার কিংবা যিনি ডেলিভারি করাবেন, তিনি হয়তো পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে সারভিক্স এফেসমেন্ট এবং ডায়ালেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে কিনা।

মিউকাস প্লাগ নিঃসরণ: ডেলিভারির সময় যখন সন্নিকটে এবং সারভিক্স ঠিকঠাকভাবে এফেস এবং ডায়ালেট হচ্ছে, তখন যোনী থেকে মিউকাস প্লাগ বের হতে পারে। মিউকাস প্লাগ হলো এক ধরণের থকথকে পদার্থ যা গর্ভাবস্থায় সার্ভিকাল ক্যানেল জমাট করে রাখে এবং প্রসবের আগ মূহুর্তে বেরিয়ে আসে। মিউকাস প্লাগ একেবারে একসাথে পিণ্ডের মতো বেরিয়ে আসতে পারে, আবার যোনীস্রাবের মতো ধীরে ধীরে কয়েকদিনে বের হতে পারে।

অল্প পরিমাণে রক্তপাত: সারভিক্স যখন কোমল এবং প্রশস্ত হতে থাকে, তখন হালকা রক্তযুক্ত গোলাপী স্রাব বা উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্ত বের হতে পারে।  যখন মিউকাস প্লাগ নিঃসৃত হওয়ার সময় যদি রক্তপাত হয়, তাহলে মিউকাসে রক্ত লেগে থাকতে পারে আবার এমনিতেও রক্তপাত হতে পারে। (অনেক সময় যৌন মিলন অথবা যোনী পরীক্ষার সময় মিউকাস প্লাগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে খুব কাছাকাছি সময়ে প্রসবের সম্ভাবনা না থাকলেও রক্তপাত ঘটতে পারে)।

রক্তপাত যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই সাথে সাথে ডাক্তারকে জানান।

প্রসব প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে আমাদের লেখা আর্টিকেলটি পড়ুন।

স্বাভাবিক প্রসব আরম্ভের একদম পূর্বমুহুর্তের লক্ষণগুলো কি কি?

নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন প্রসব খুবই সন্নিকটে:

মায়ের পেটের নিম্নভাগে শিশুর অবস্থান: শিশু পেটের নিম্নভাগে চলে আসায় হালকা লাগার ব্যাপারটি (লাইটেনিং) প্রসবের ঠিক পূর্বমুহুর্তে হতে পারে, বিশেষত এটা যদি আপনার প্রথম প্রেগন্যান্সি না হয়।

মিউকাস প্লাগ বেরিয়ে যাওয়া: মিউকাস প্লাগ বেরিয়ে যাওয়া নির্ভর করে সারভিক্স কখন মুখ খুলছে সেটার উপর। তাই কখনো কখনো প্রসবের কয়েক দিন কিংবা কয়েক সপ্তাহ আগে এটা হতে পারে, আবার প্রসবের একদম আগ মুহুর্তেও হতে পারে – যেটা আপনি হয়তো আলাদা করে খেয়াল না করতে পারেন।

রক্তপাত: যোনীস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়াটা প্রসবের ঠিক আগ মুহুর্তে হতে পারে আবার ক’দিন আগেও হতে পারে, – এটি পুরোপুরি নির্ভর করে কখন সারভিক্সের পরিবর্তন হচ্ছে তার উপর।

কিন্তু রক্তপাত যদি অনেক বেশি পরিমাণে হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারকে জানান।

পানি ভাঙা: এমনিওটিক ফ্লুইড ভর্তি যে থলেতে শিশু অবস্থান করে, সে থলেটি যখন ফেটে যায়, তখন ফ্লুইডগুলো যোনীপথে বেরিয়ে যায়। এমনিওটিক ফ্লুইড একবারে অনেক বেশী করে বের হতে পারে অথবা অল্প অল্প করেও বের হতে পারে। একে পানি ভাঙা বলে। যেভাবেই পানি বের হোক না কেন, পানি ভাঙার সাথে সাথে ডাক্তার কিংবা নার্সকে জানাতে হবে।

অধিকাংশ নারীদের ক্ষেত্রে পানি ভাঙার আগেই লেবার পাইনের পূর্ব লক্ষণগুলো দেখা যেতে শুরু করে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে প্রসব শুরুর আগেই পানি ভেঙে যায়। যখন এমনটি ঘটবে, বুঝতে হবে প্রসবের সময় খুব ঘনিয়ে এসেছে।

প্রসব শুরু হয়ে গিয়েছে, এটা বুঝবো কিভাবে?

সংকোচন তীব্রভাবে বেড়ে যাবে: প্রসবের সময় যখন জরায়ু সংকুচিত হবে, তখন আপনার পেটে প্রচুর টান ও চাপ অনুভব করবেন এবং ক্র‍্যাম্প এর মতো হতে পারে। সংকোচনের মধ্যকার বিরতিতে এই ব্যাথাযুক্ত টান লাগার অনুভূতি একটু কমে যাবে। সারভিক্স ডায়ালেট হওয়ার কারণে প্রসবের এই সঙ্কোচন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে,তীব্র হতে থাকে এবং দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে।

জরায়ুর সংকোচন হচ্ছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছে, যখন ব্যথা হয় ঠিক তখনই জরায়ুও সংকুচিত হয়৷ তখন পেটে হাত দিলে অনুভব করা যাবে যে জরায়ু শক্ত হয়ে আছে৷ আর ঠিক তার পরক্ষণেই যখন ব্যথা নেই অর্থাৎ জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে তখন পেটে চাপ দিলে হাতে দিয়ে অনুভব করা যাবে যে জরায়ু  নরম হয়ে আছে৷

পিঠের নিম্নভাগে ব্যাথা ও ক্র‍্যাম্প: প্রসবকালীন সংকোচনের সময় এবং বিরতির সময়ে পিঠের নিম্নভাগে প্রচুর ব্যাথা হতে পারে। এই সময়ে পিঠের নিম্নভাগে ব্যাথার মানে হলো শিশুর মাথা পিঠের নিম্নভাগে চাপ দিচ্ছে। তবে কিছু কিছু গবেষনায় এই ব্যাথার উৎস হিসেবে জরায়ুর সংকোচনকেই কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

স্বাভাবিক প্রসব কিভাবে হয় এবং ব্যথামুক্ত প্রসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলগুলো পড়ুন।

বিজ্ঞাপণ

নরমাল ডেলিভারি সাধারণত কত সপ্তাহে হয়?

৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে যে কোন সময়ে প্রসব হতে পারে। আপনি যদি ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই আপনার মধ্যে প্রসবের লক্ষণ দেখতে পান, অবশ্যই সাথে সাথে ডাক্তারকে জানান। আপনার হয়তো প্রিটার্ম লেবর হতে পারে।

[ আরও পড়ুনঃ প্রসবের শুরু থেকে বাচ্চা জন্ম দেয়া পর্যন্ত বিস্তারিত (স্বাভাবিক প্রসব) ]

গোছগাছ করার ইচ্ছে বা নেস্টিং কি প্রসবের লক্ষণ নির্দেশ করে?

অনেক মায়েরাই গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসে সম্ভাব্য শিশুর জন্যে ঘর গোছানো এবং সাজানোর তাড়না অনুভব করে থাকেন। একে নেস্টিং বলে। এটা প্রসবের এক সপ্তাহ আগেও হতে পারে, আবার মাস আগেও হতে পারে।এটা কোন গবেষণায় প্রমাণিত হয় নি যে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে ঘর গোছগাছ করার ইচ্ছার সাথে প্রসবের সম্পর্ক রয়েছে।

ফলস লেবার পেইন এবং সত্যিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে পার্থক্য বুঝবো কিভাবে?

এটা বোঝা কিছুটা মুশকিলের কাজই বটে। প্রসব বেদনা কতটা তীব্র, কত সময় ধরে হচ্ছে, কতক্ষণ পরপর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, ব্যাথা পেটের কোন যায়গায় হচ্ছে এগুলো নিরূপনের মাধ্যমে ভুল প্রসব বেদনা অর্থাৎ ব্র‍্যাক্সটন হিকস কনট্রাকশন এবং  সত্যিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে পার্থক্য বোঝা সম্ভব।

ফলস লেবার পেইন এবং সত্যিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে পার্থক্য

এছাড়াও, নড়াচড়া, হাঁটা ও বিশ্রাম নেয়া প্রভৃতির ফলে ব্যাথার কেমন পরিবর্তন হয়, সেটার মাধ্যমেও সঠিক প্রসব বেদনা নিরূপণ করা সম্ভব। এর সাথে বলা যায়, প্রসব বেদনার সময় যদি কোন রক্তপাত হয়, তাহলে এটা খুব সম্ভবত সত্যিকারের প্রসব বেদনাই।

নিচের চার্ট অনুসরণের মাধ্যমে আপনি ভুল প্রসব বেদনা এবং সত্যিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

ফলস লেবার পেইন এবং সত্যিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে পার্থক্য

পানি ভাঙলে কি করবো?

ডাক্তার অথবা ধাত্রীকে অবশ্যই সাথে সাথে কল দিন এবং পরবর্তী করণীয় ধাপ বুঝে নিন। পানি ভাঙ্গার পর প্রসব ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। যদি শুরু না-ও হয়, তাহলে খুব শীঘ্রই হবে।

গ্রুপ বি স্ট্রেপটোকোকাস পরীক্ষায় যদি আপনি পজিটিভ হন, তাহলে পানি ভাঙার সাথে সাথে ডাক্তার আপনাকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন যাতে আপনাকে খুব দ্রুত এর এন্টিবায়োটিক দেওয়া যায়।

নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো ঘটলে ডাক্তার সাধারণত মায়েদের হাসপাতালে চলে আসতে বলেন:

  • গর্ভকালীন কোন জটিলতা অনুভব করলে
  • পানি ভেঙ্গে গেলে
  • পানি ভাঙার সময় এমনিওটিক ফ্লুইডের সাথে মেকোনিয়াম (কিছুটা সবুজাভ অথবা সবুজ ছোপ ছোপ যুক্ত) লক্ষ্য করলে।

পানি ভাঙার পরেও যদি প্রসব বেদনা বা সংকোচন শুরু না হয়, তাহলে করণীয় কি?

পানি ভাঙ্গার পর যদি প্রায় ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যায়, (ডাক্তার আপনার সাথে কথা বলে সঠিক সময় জেনে নেবেন) তবুও প্রসবের সংকোচন না হয়, তাহলে ডাক্তার কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরুর পরামর্শ দিতে পারেন। পানি ভাঙ্গার পর শিশুর এমনিওটিক থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে যায় যার ফলে শিশুর দ্রুত কোন জীবাণূ দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

ডাক্তারকে কখন জানাবো যে আমার লেবার পেইন শুরু হয়েছে?

কখন হাসপাতালে আসা উচিত সেটা একেক জনের জন্যে একেক রকম নির্দেশনা হতে পারে। যেমন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে সেটা একরকম, আবার স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার জন্যে আরেক রকম। সেই হিসেবে মায়ের বাসা হাসপাতাল থেকে কতখানি দূরে অথবা প্রথম প্রেগন্যান্সি কি না- এসব কিছুও বিবেচনায় আনা হয়।

আপনার গর্ভাবস্থা যদি অতোটা জটিল না হয়, তাহলে  নিম্নোক্ত ব্যাপারগুলো হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে:

  • প্রায় ৬০ সেকেন্ড দীর্ঘ সময় ধরে সংকোচন হওয়া
  • প্রতি ৫ মিনিট পরপর সংকোচন হওয়া
  • এভাবে প্রায় ১ ঘন্টা যাবত প্রসববেদনা হওয়া।

(সংকোচনের মধ্যবর্তী সময় হিসেব করা হয় একবার সংকোচন শুরু হওয়ার পর থেকে পরের সংকোচন শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত)

তারপরও যদি আপনি নিশ্চিত না হন যে এখনো সময় এসেছে কিনা, তাহলে সরাসরি ডাক্তার কিংবা ধাত্রীর সাথে কথা বলে ফেলুন। প্রসব আসন্ন এমন মায়েদের ক্ষেত্রে তাদের ফোনে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে ডাক্তারেরা সবসময় প্রস্তুত থাকেন।

আপনি যখন ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলবেন, তখন আপনার কাছ থেকে সব জেনে কিংবা আপনার গলার স্বর শুনে তিনি আপনার অবস্থা বুঝে নিতে পারবেন। তিনি নিম্নোক্ত ব্যাপারগুলো জানতে চাইতে পারেন:

  • একবার সংকোচনের পর পরবর্তী সংকোচন শুরু হতে কত সময় লাগে
  • একবার সংকোচন কতক্ষণ স্থায়ী থাকে
  • সংকোচন কতটা তীব্র (যেমন সংকোচনের সময় আপনি কথা বলতে পারছেন কিনা।)
  • আপনার পানি ভেঙ্গেছে কিনা
  • শিশুর স্বাভাবিক নড়াচড়া আপনি অনুভব করতে পারছেন কিনা

প্রসব বেদনা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসে কোন কোন বিপদের লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে?

নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো ঘটলে অবশ্যই সাথে সাথে ডাক্তারকে জানান অথবা হাসপাতালে চলে যান:

গর্ভাবস্থা ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি পানি ভেঙে যায় অথবা প্রসববেদনা শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনার হয়তো প্রিটার্ম লেবর হতে যাচ্ছে। প্রিটার্ম লেবরের অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো – যোনী থেকে রক্তপাত বা স্পটিং, অস্বাভাবিক যোনীস্রাব, পেটে ব্যাথা, পেলভিকে চাপ লাগা, পিঠের নিম্নাংশে ব্যাথা হওয়া।

আপনার পানি ভেঙে গেছে এবং মনে হচ্ছে যে এমনিওটিক তরলের সাথে হলুদাভ, সবুজাভ অথবা বাদামী কোন পদার্থ বেরুচ্ছে। এটি মূলত ম্যাকোনিয়ামের (শিশুর প্রথম মল) উপস্থিতিই প্রমাণ করে।

শিশু নড়াচড়া কম করছে মনে হলে

যোনী থেকে রক্তপাত হলে এবং চলতে থাকলে, পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অথবা জ্বর থাকলে।

প্রি এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে। প্রি এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণগুলো হলো, – অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া, প্রচন্ড বা একটানা মাথাব্যথা, চোখে ঠিকঠাক না দেখা, পেটের উপরিভাগে প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া এবং শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া।

অনেক নারীরাই মনে করে থাকেন যে, এত লক্ষণ  এবং অস্বস্তি- এগুলো গর্ভধারণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবার অনেক আছেন যারা শরীরের ছোট খাট পরিবর্তন হলে সেটাকেও বিপদের লক্ষণ বলে মনে করেন। এই সময়ে কোন কোন লক্ষণগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় সেটা যদি জানা থাকে ডাক্তারকে কখন ফোন করতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হয়ে যাবে।

প্রত্যেকটি গর্ভাবস্থাই একেকটি একেকরকম, তাই কোন তালিকা করে নির্দেশনা দিয়ে কূল পাওয়া সম্ভব নয়। লক্ষণগুলো সিরিয়াস কিছু নাকি স্বাভাবিক সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে নিজের মনের উপর আস্থা রাখুন এবং আপনার ডাক্তারকে কল করুন। যদি কোন সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তার তো অবশ্যই আপনাকে সহায়তা করবেন, যদি কোন সমস্যা নাও থাকে, তবু ডাক্তার আপনাকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলবেন।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment