খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে বা পিকি ইটার (picky eater) শিশুদের কীভাবে সামলাবেন

Spread the love

শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক বছর হয়তো তাকে খাওয়াতে আপনার কোনোরকম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কিন্তু ইদানীং হঠাৎ লক্ষ্য করছেন সে খাবার নিয়ে প্রচুর খুঁতখুঁতে আচরণ শুরু করেছে। তার পছন্দের খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতে চাচ্ছেনা, আর সেগুলো না থাকলে খাবার না খাওয়ার জন্যে তালবাহানা করছে।এমনকি সে কোন নতুন খাবারও খেতে চাইছেনা। এমন অভিযোগ অসংখ্য মা-বাবাই প্রতিনিয়ত করে থাকেন। আসলে আপনার শিশুর এমন আচরণের কারণ হলো সে বর্তমানে “পিকি ইটিং” নামক একটি ধাপ পার করছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা এই পর্যায়টির সাথে সম্পর্কিত সকল কিছু নিয়েই আলোচনা করবো।

শিশুর পিকি ইটিং বা খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে আচরণের কারণ

পিকি ইটিং শিশুদের বেড়ে উঠার খুব সাধারণ একটি পর্যায়। ৪০০০ জন শিশুর উপর চালানো একটি গবেষণার ফলাফল হতে জানা যায়, প্রায় অর্ধেক শিশুই পিকি ইটিং পর্বটি পার করে থাকে। সাধারণত এই ধাপটি শিশুর ১.৫ থেকে ১১ বছরের মাঝে যেকোনো সময়ই দেখা যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর ১৮ মাস বা এর আশেপাশের সময়েই বেশি দেখা যায়। পিকি ইটিং বা খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে আচরণের বেশ কিছু সহজ এবং জটিল উভয় রকম কারণই রয়েছেঃ

বিজ্ঞাপণ

তারা এখন স্বাধীনভাবে অনেক কাজ করতে পারছে

শিশু একটা সময় পুরোপুরিই আপনার উপর নির্ভরশীল ছিলো। একটু একটু করে বড় হতে হতে সে এখন নিজে নিজেই হাঁটতে পারে, এমনকি কথাও বলতে শিখেছে মোটামুটি। যার কারণে তারা এখন নিজেদেরকে আরো বেশি স্বাধীন অনুভব করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে চায়। ধরুন সে কোনো খাবার পছন্দ করছেনা, সে এখন সেটা মুখ ফুটে বলতে পারে। তাও খেতে বললে হয়তো দেখবেন সে মুখ খুলছেনা, বা না খেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, বা প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করেছে বা জেদ দেখাচ্ছে অথবা এই সবগুলোই করছে।

সহজাত প্রবৃত্তি

বেশ কয়েক বছর ধরে করা অসংখ্য সমীক্ষা হতে এটি প্রমাণিত যে, মানুষ প্রবৃত্তিগতভাবেই মিষ্টি জাতীয় এবং লবণাক্ত খাবারকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই আকাঙ্খাটা বড়দের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। তাদেরকে নিজ থেকে পছন্দ করতে দেওয়া হলে দেখা যাবে বেশিরভাগ শিশুরাই টক, কড়া, বা তীব্র ঝাঁজবিশিষ্ট খাবারের চেয়ে মিষ্টি বা লবণাক্ত খাবারকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

শিশুরা ভালো খাবার বলতে বোঝে মিষ্টি জাতীয় খাবার আর তাদের কাছে সবচাইতে খারাপ খাবার হোল সবুজ রঙের খাবার। এর পেছনে অবশ্য আমরাই দায়ী, কারণ শিশুর খাবার তৈরির সময় সবসময় আমাদের লক্ষ্য থাকে কীভাবে তা মিষ্টি করা যায়, সেটা স্বাস্থ্যকর উপায়ে হোক বা অস্বাস্থ্যকর উপায়ে। ফলে এভাবে তারা অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং যখনই আপনি নতুন কোন শাক সবজি তাদের দেয়ার চেষ্টা করেন সে তাতে আপত্তি জানায়।

বাবা মায়ের খাদ্যাভ্যাসের কারণেও বাচ্চা খাবারের প্রতি খুঁতখুঁতে হয়ে উঠতে পারে। যেমন যে সব খাবার আমরা পছন্দ করিনা সেসব খাবার স্বাভাবিকভাবেই আমরা বাসায় রান্না করিনা এবং বাচ্চাকেও দেইনা। এতে ওই জাতীয় খাবারের প্রতি বাচ্চা স্বাভাবিকভাবেই অনীহা প্রকাশ করে।

দেখা যায়, একটি শিশু ছোটবেলা থেকে পূর্বধারণাপ্রসূত বিশ্বাস থেকে কোনো মাছ না খেয়েই বড় হচ্ছে। এতে সে বিচিত্র সব খাবারের স্বাদ তো পেলই না, পুষ্টিগুণ থেকেও বঞ্চিত হলো। কোনো শিশু হয়তো প্রতি বেলায় মুরগি খেতে চায় বলে অন্যান্য খাবার আর গ্রহণই করে না। এভাবে নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের প্রবণতা অনেক শিশুরই থাকে।

আবার অনেক বাচ্চা কিছু খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে বিশেষ করে যেগুলো তাদের কোন খারাপ মুহুর্ত মনে করিয়ে দেয় ,যেমনঃ অসুস্থ থাকার সময় যে খাবার খেয়েছিলো সে খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে , এগুলো তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বংশগত কারণ

অনেক ক্ষেত্রেই পিকি ইটিং “নিওফোবিয়া” বা সম্পূর্ণ নতুন কোনো কিছুর ভয় এবং তা এড়িয়ে চলার সাথে সম্পর্কযুক্ত। একটি সমীক্ষা হতে দেখা যায় যে, শিশুদের এই ধরনের নিওফোবিক আচরণ ৭৫% ক্ষেত্রেই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে থাকে। ঠিক যেমন চোখের রঙ, কথা বলার ভঙ্গি ইত্যাদি বংশগতভাবে পেয়ে থাকে, এটিও তেমনি প্রাপ্ত। যেসব শিশুর বাবা-মায়েদের পিকি ইটিং এর ইতিহাস আছে তাদের ক্ষেত্রেও এই আচরণ বেশি লক্ষ্য করা যায়।

খাবার ঘরের পরিবেশ

এমনও হতে পারে যে আপনার শিশু খাবারের চেয়ে খাবার ঘরের পরিবেশের জন্য বেশি অস্বস্তিবোধ করছে। যেমন :

  • তার জন্য নির্ধারিত বা তার পছন্দের চেয়ারে বসতে না পারা বা চেয়ার অগোছালো অবস্থায় থাকা।
  • যে পাত্রে বা গ্লাসে খাবার দেওয়া হয়েছে তা পছন্দ না হওয়া।
  • খাবারঘরে অন্য কোনো কিছুর আওয়াজ যেমন মোবাইল, টেলিভিশন ইত্যাদির শব্দে বিরক্তবোধ করা।
  • তার আশেপাশের মানুষদের আচরণ, অঙ্গভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হওয়া।

জোরপূর্বক খাওয়ানোর চেষ্টা করা

মা-বাবা যখন শিশুকে জোরপূর্বক কিছু খাওয়াতে চেষ্টা করেন তখন তারা ভয় পেয়ে যায় এবং উদ্বীগ্ন হয়ে পড়ে। ভয়ে তাদের ক্ষিধেও চলে যায়। যার কারণে ওই খাবারের উপর তাদের বিতৃষ্ণা চলে আসে। পরবর্তীতে ওই খাবার দেখলে তারা ভীত হয়ে পড়ে এবং সেটি থেকে দূরে দূরে থাকতে চায়। প্রয়োজনে ক্ষুধার্ত থাকবে, তাও ওই খাবার তারা খেতে চায় না।

প্রসেসড/প্যাকেটজাত খাবার

আজকালকার বাচ্চাদের খাবার নিয়ে ঝামেলা করার সবচাইতে বড় কারণ সম্ভবত বিভিন্ন প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড এবং ফাস্ট ফুড। এসব খাবার সুবিধাজনক হওয়ায় বেশিরভাব বাবামা ই এতে অভ্যস্ত হয়ে পরছেন। যতই স্বাস্থ্যকর বলে প্রচার করা হোক না কেন এসব বেশিভাগ খাবারই অনেক চিনি, সোডিয়াম(লবণ) এবং ফ্যাট থাকে। তাই এসব খাবার শুরু করার পর বাচ্চার স্বাভাবিকভাবেই চিনি, লবণ ইত্যাদি সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে এবং আগে সে যেসব খাবার খেত, দেখা যায় সেসবের প্রতিও তার অনীহা চলে আসে।

মিডিয়ার প্রভাব

আজকালকার শিশুরা বলতে গেলে জন্মের পরপরই স্ক্রিনের সাথে পরিচিত হয়ে যায়। মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন সবখানেই বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার, কুড়মুড়ে খাবার ও ফাস্ট ফুডের বিজ্ঞাপনে ভর্তি। যার কারণে ওই খাবারগুলোই তাদের মনে গেঁথে যায় এবং সেগুলোকেই তারা মূলত প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তারা ধরেই নেয় যে অন্য খাবারগুলো নিশ্চয়ই মজাদার না, এজন্য সেগুলো স্ক্রিনের সামনে আসে না।

পিকি ইটার শিশুদের মা-বাবার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ

১. শিশুর খাওয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট তকমা লাগিয়ে দিবেন না

আমরা যখন শিশুর খাওয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট তকমা লাগিয়ে দেই, তখন আসলে আমরাই বিষয়টা জটিল করে ফেলি। যেমন ধরুন, আপনার শিশু খাবারের ব্যাপারে প্রচন্ড খুঁতখুঁতে। এখন আপনারা কোথাও বেড়াতে গেলেন, সেখানে তাকে ভিন্ন কোনো খাবার পরিবেশন করা হলো। আপনি সবার সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিলেন, “না না সে এসব খাবে না”। অথবা “তার খাবারে প্রচুর বাছাবাছি আছে, সে শুধু মিষ্টান্ন এবং পনির জাতীয় খাবার খায়”। দেখবেন আপনার শিশু আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নতুন কিছু যাচাই করবেনা।

কিংবা ধরুন আপনি বললেন যে, “সে আসলে একটু লাজুক স্বভাবের”। তখন সে আসলেই লাজুক ভাব দেখাবে৷ আর এই লাজুক স্বভাবটাই তার ভিতর ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে। আপনার এই লাগিয়ে দেওয়া তকমাগুলোর কারণেই সে নতুন কোনো খাবার চেষ্টা করে দেখতে এবং উপভোগ করতে পারবেনা।

আবার ধরুন, আপনার দুই সন্তানের ভিতরের একজন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মেনে চলে এবং আরেকজন খাবারে কিছুটা বাছাবাছি করে। এখন আপনি প্রথমজনের খাদ্যাভাসকে ভালোর তকমা দিয়ে দিয়েছেন। এতে করে অপরজন মনে করবে তার খাদ্যাভাস বাজে। এটা তার উপর বাজে প্রভাব ফেলে। মোদ্দাকথা হচ্ছে শিশুদেরকে খাদ্য সম্পর্কিত কোনোরকম তকমা দিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, সেটা ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক।

২. খাওয়ার সময়ের একটা রুটিন তৈরি করুন

প্রতিদিনের খাবার বিশেষ করে রাতের খাবারটি সবসময় একটি নির্ধারিত সময়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করুন। খাবারের সময় যেকোনো রকম স্ক্রিন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, কারণ এতে খাবারে মনোযোগ ক্ষুণ্ন হতে পারে৷ কোনো উপভোগ্য এবং মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন, যাতে শিশুদের এই খাবার সময়টির ব্যাপারে একটা ইতিবাচক ধারণা জন্মায়।

দ্যা পিকি ইটার্স ক্লিনিকের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ড. ক্যাথেরিন ডাহলসগার্ড বলেন, “মনে রাখবেন শিশুরা বেশিরভাগ ক্যালরি প্রথম ২০ মিনিটেই অর্জন করে থাকে, তাই খাওয়ার আগে একটি আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করুন এবং খাবার টেবিলে সময় সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করুন, যাতে বিরক্তিবোধ চলে না আসে”। 

৩. খাবারকে কোনো কিছুর পুরস্কার বানাবেন না

শিশুদেরকে প্রায়ই এরকম প্রলোভন দেখানো হয় যে, “যদি তুমি এই সবজিটা শেষ করো, তাহলে তোমার পছন্দের মিষ্টি খেতে দিবো”। আসলে আমরা ভুলে যাই যে খাবার এমন একটি জিনিস যা পরিবারের সকলে মিলে উপভোগ করা উচিত, এটি কোনো কিছুর পুরস্কার হতে পারেনা।

আপনি যখন তাকে পছন্দের খাবারের লোভ দেখিয়ে সবজি খাওয়াতে চাইবেন তখন সে ওই খাবারের লোভেই সবজিটি খাবে। দেখবেন সে তাড়াহুড়ো করে কোনো মতে খাওয়া শেষ করছে যাতে তার কাঙ্খিত পুরস্কারটি তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়। এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে খাবার গলায় আটকে বা নাকে মুখে উঠে বিপদ ঘটতে পারে।

শুধু সবজি খাওয়া বলে নয় যেকোনো ভালো কাজ যেমন সবার সাথে ভালো আচরণ করা, বা নতুন কোনো কিছু শেখা – মোদ্দাকথা কোনো কিছুর পুরস্কার হিসেবে খাবারকে ব্যবহার করা যাবেনা।

বিষয়টি এভাবে চিন্তা করুন। আমরা সবসময় আমাদের বাচ্চাদের শেখানোর চেষ্টা করি শাকসবজি হোল ভালো খাবার আর চিপস বা মিষ্টি হোল ক্ষতিকর। তাহলে কেন আমরা একটা ভালো কাজের জন্য শিশুদের ক্ষতিকর পুরষ্কার অফার করবো। শিশুরাও এই বিষয়টি বুঝতে পারে এবং তাদের ধারণা জন্মে যায় যে মিষ্টি জাতীয় খাবারটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ।

৪.শিশুকে যেসব খাবার খাওয়াতে চান সেগুলো ঘরে নিয়ে আসুন

আপনার শিশু কেবলমাত্র ওই সকল খাবার থেকেই বাছাবাছি করতে পারবে, যে সমস্ত বিকল্প তার কাছে রয়েছে। আপনি যদি চান যে আপনার শিশু স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাক, তাহলে আজই আপনার রেফ্রিজারেটর এবং ভাঁড়ারঘর স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যে পরিপূর্ণ করে ফেলুন। আপনি চাইলে আপনার ফ্রিজার এমন কিছু খাবারে পূর্ণ করে রাখতে পারেন যেগুলোর স্বাদ ও পুষ্টি সহজে নষ্ট হবেনা। এতে করে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার শিশু বাছাবাছি করলেও স্বাস্থ্যসমৃৃদ্ধ খাবারই খাচ্ছে।

৫. খাবারকে আকর্ষণীয় করে তুলুন

বাচ্চারা অন্যদের তুলনায় খাবারের প্রতি বেশি স্পর্শকাতর। অনেক বাচ্চা খাবারের স্বাদ , রঙ অথবা আকৃতি পছন্দ করে না। এজন্য যে খাবার আগে কখনো খায়নি সে খাবার মুখে দিতেও তারা অনীহা প্রকাশ করে।

আপনি শিশুর সামনে খাবারগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করুন যাতে সে সেটার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। যেমন ধরুন, বেশিরভাগ শিশুরাই এমন খাবার পছন্দ করে যেগুলো দেখতে একটু রঙিন হয়ে থাকে। আপনি তেমন কোনো খাবার এনে সেটিকে এমনভাবে কেঁটে নিন, যাতে একটি মজার গঠনবিন্যাস তৈরি হয়৷ মনে রাখবেন, শিশুরা খাবার খেয়ে দেখার আগে খাবারটি দেখতে কেমন সেটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই আপনি যদি খাবারটিকে তার সামনে আকর্ষণীয় উপায়ে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে দেখবেন সেও ওই খাবারটির প্রতি আগ্রহবোধ করছে।

উদাহরণস্বরূপ স্যান্ডইউচ তৈরি করে সেটিকে ছোট ছোট অংশে এমনভাবে ভাগ করুন যাতে আপনার শিশু খাবারটির প্রতি আগ্রহী হয়। একইভাবে কিছু রঙিন ফলমূল বা সবজি কেটে রংধনুর মতো আকৃতি বানাতে পারেন। এভাবে খাওয়াটাকে আপনার শিশুর কাছে উপভোগ্য করে তুলুন। আপনার এই কাজটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। কিন্তু দিনশেষে আপনার শিশু পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর খাবার পাবে এবং সেটি উপভোগ করবে৷

৬. শিশুকে কিছু বিকল্প দিন

যেমনটা আমরা পূর্বেও বলেছি আপনার রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, ভাঁড়ারঘর যদি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারে পরিপূর্ণ থাকে, তাহলে আপনার শিশু সেখান থেকে যেটাই খাক সেটা স্বাস্থ্যকর খাবারই হবে। এখন তাকে এতোটুক অধিকার আপনি দিতেই পারেন যে সে সেখান থেকে নিজের পছন্দমতো খেতে পারবে।

যেমন, তাকে দুই-তিন পদের খাবার দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে তুমি সকালের নাস্তা হিসেবে এদের মধ্যে কোনটা খেতে চাও। এভাবে দিন ও রাতের খাবার এবং অন্য নাস্তার ক্ষেত্রেও তাকেই বাছাই করতে দিন যে সে কি খেতে চায়। এরকম করে তাকে নিজের খাবার নিজেকেই বাছাই করতে দিলে আপনাকে আর তাকে খাওয়ানোর জন্য কোনো রকম ঝামেলা পোহাতে হবেনা।

তাছাড়াও পরবর্তীতে কখনো যদি বিকল্প নাও থাকে, তখনও দেখবেন সে তেমন কোনো ঝামেলা করছেনা। কারণ তখন খাবারটার উপর তার একটা অধিকারবোধ কাজ করবে। তার ভিতর এই চিন্তাটা এসে যাবে যে, খাবারটা আমার আর আমারই এটা খেতে হবে।

বিজ্ঞাপণ

৭. খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন আনুন

খাবারের মেন্যু পরিবর্তন করা – মানে একই খাবার সবসময় না দিয়ে ভিন্ন কিছুও চেষ্টা করুন এবং সবগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিন। এটাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের মূল চাবিকাঠি। আপনি যদি প্রতিদিনই তাকে একই রকম খাবার দেন, সেটা যদি স্বাস্থ্যকর খাবারও হয়, তাও তার খাদ্যাভাসকে স্বাস্থ্যকর বলা যাবেনা। তাছাড়া প্রতিদিন একই রকম খাবার খেতে খেতে তারও খাবারের প্রতি একটা বিরক্তবোধ চলে আসবে। ফলশ্রুতিতে সে খাবারে বাছাবাছি শুরু করবে বা খেতে চাইবেনা। তারা মনে করবে যে খাওয়া-দাওয়া বিষয়টা উপভোগ্য নয়, বরং একঘেয়েমি।

তাই শিশুর খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন আনা জরুরি৷ এতে করে সে বিভিন্নরকম খাবারের সাথে পরিচিত হতে পারবে এবং তার পিকি ইটিং অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি তার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসও গড়ে উঠবে।

৮. তার জন্য আলাদা খাবার বানাতে যাবেন না

দ্যা পিকি ইটার প্রজেক্টের সহ-রচয়িতা স্যালি স্যাম্পসনের মতে, আপনি যদি আপনার শিশুর সবচাইতে পছন্দের খাবারগুলোই তাকে সবসময় পরিবেশন করতে থাকেন তাহলে আপনি নিজেই তার এই পিকি ইটিং অভ্যাসটি বাড়িয়ে ফেলছেন আর নতুন কিছু চেষ্টা করার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে স্যাম্পসন বলেন, ” আমার বাচ্চাদের সবসময় এই স্বাধীনতা দিয়েছি যে যখন তাদের টেবিলে পরিবেশন করা খাবার পছন্দ হবেনা তারা উঠে যেতে পারে এবং বিকল্প হিসেবে ঘরের অন্যান্য সাধারণ খাবার খেতে পারে। মজার বিষয় হোল তারা সবসময় টেবিলে পরিবেশ করা খাবারটাই বেছে নিত কারণ অন্য খাবারগুলো তাদের আরও বেশি অপছন্দের ছিল।

এছাড়াও বাচ্চারা যখন দেখে আপনি তার জন্য আলাদা শ্রম দিয়ে, আলাদাভাবে তার খাবার তৈরি করছেন, একধরনের খাবার খেতে না চাইলে আরেকধরনের খাবার তৈরি করে আনছেন তখন তারা বুঝতে পারে এটাই মায়ের মনোযোগ পাওয়ার সবচাইতে ভালো উপায়। আর এটাতো আমরা এখন সবাই জানি বাচ্চারা বাবা মায়ের মনোযোগ পাওয়ার জন্য অনেক কিছুই করতে পারে।

৯. শিশুকে খাওয়ার জন্য জোর করবেন না

সাধারণভাবেই মানুষকে যে কাজটির জন্য জোর-জবরদস্তি করা হয়, সে কাজটি তার পছন্দনীয় হয় না। শিশুর খাওয়ার বেলায় ও তার ব্যতিক্রম নয়। একটি পরীক্ষা হতে দেখা গেছে যে, যেসব শিশুদেরকে জোরপূর্বক খাওয়ানো হতো, তারা আসলে স্বাস্থ্যকর ফলমূল ও সবজি কম খেয়েছে, এবং অস্বাস্থ্যকর জাঙ্ক ফুডই বেশি খেয়েছে।

আবার বর্তমানে কলেজে অধ্যয়নরত এমন কিছু শিশুর উপর গবেষণা চালিয়ে জানা যায়, ছোটবেলায় মা-বাবা জোর করে তাদের যেসব খাবার খাইয়েছে তারা এখনো সেই খাবারগুলো অপছন্দ করে এবং অন্য বিকল্প থাকলে তারা এসব এড়িয়ে চলতে চায়।

তাই শিশুকে খাওয়ার জন্য কোনোরকম চাপ দিবেন না। আপনি তাকে খাবারগুলো দিন আর একটু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। দেখবেন একসময় সে নিজেই ওই খাবারগুলো খাওয়া শুরু করেছে।

১০. চেষ্টা করুন, সফল না হলে আবার চেষ্টা করুন

আপনার শিশু আজকে কোনো একটা খাবার খায়নি মানে এই না যে সে সেটা কখনোই খাবেনা। বরং এমনও হতে পারে আজকে তার যেটা অপছন্দ হচ্ছে, কাল সেটা তার পছন্দের তালিকায় চলে আসবে। তাই একবার চেষ্টা করে সফল না হলে সেটি আর কখনোই দিবেন না এমন চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। বরং পরে আবারো তাকে খাবারটি পরিবেশন করুন এবং তাকে সেটি চেষ্টা করে দেখতে উৎসাহিত করুন। এমনও হতে পারে যে আপনার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সে সেটি চেষ্টা করে দেখছে এবং পছন্দও করছে।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরই শিশুদের টেস্ট বাড বা স্বাদগ্রন্থি বিভিন্ন খাবারে অভ্যস্ত হয়। তাই গবেষকরা বলেন কোন খাবার শিশুর পছন্দ নয় এমন উপসংহারে আসার আগে অন্তত ১০-১২ বার সেটা তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চারা পুষ্টিকর কোনো একটা খাবার খেতে না চাইলেই মায়েরা নতুন কিছুতে চলে যান। এমনটা না করে রেসিপিতে পরিবর্তন এনে ওই খাবারটিই বারবার পাতে দিন। পুষ্টিকর যেকোনো খাবার বহু চেষ্টায় খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

১১. তার পছন্দের খাবারের সাথে কিছু নতুন খাবার মিশিয়ে দিন

আপনার শিশু যদি নিওফোবিক বা নতুন কিছু চেষ্টা করতে না চায়, তাহলে আপনি বুদ্ধি খাঁটিয়ে তাকে তার পছন্দের কোনো খাবারের সাথে নতুন কোনো খাবার মিশিয়ে দিয়ে দেখতে পারেন। যেমন সে যদি নুডুলস পছন্দ করে, তাহলে আপনি তাকে নুডুলসের সাথে কোনো সবজি মিশিয়ে দিতে পারেন। একটি গবেষণা হতে দেখা গেছে যে, শিশুদেরকে তাদের পছন্দের কোনো খাবারের সাথে নতুন কোনো খাবার মিশিয়ে দিলে বা সেটির সাথে পরিবেশন করা হলে, তারা ওই নতুন খাবারটির প্রতিও আগ্রহবোধ করছে।

১২. শিশুকে খাবার তৈরির প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করুন

শিশুদেরকে খাবার তৈরির প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করলে তারা সেই কাজটিতে সক্রিয় অংশগ্রাহী হয়ে উঠে এবং খাবার তৈরির ব্যাপারটা পুরোপুরিই তাদের নিয়ন্ত্রণে এমনটা অনুভব করে। তাকে নিয়ে বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনে আনুন, অতঃপর রান্নাঘরের ছোট খাটো কাজে যেমন আপনাকে কিছু একটা এগিয়ে দেওয়া এবং সবশেষে খাবারগুলো টেবিলে পরিবেশন করতে তার সহযোগিতা নিন। পুরো বিষয়টিতে সে নিজে অন্তর্ভুক্ত থাকায় সে ব্যাপারটি নিয়ে চরম কৌতুহল বোধ করবে এবং আগ্রহভরে অপেক্ষা করবে খাবারটি কেমন হয়েছে সেটা দেখার জন্য।

১৩. খাওয়ার সময় মনোযোগ নষ্ট হয় এমন জিনিসপত্রসরিয়ে ফেলুন

খাবার সময়টা কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যদের। এই সময় পরিবারের সদস্যরা একে অপরের খোঁজ-খবর নিবে আর সবাই মিলে কিছু খোশালাপ করবে এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু তা না হয়ে যদি খাওয়ার সময় কেউ মোবাইল ব্যবহার করে, বা কেউ বই/পত্রিকা পড়ে বা কেউ খাবার নিয়ে টেলিভিশনের সামনে চলে যায় – তবে তা শিশুর উপরও এর প্রভাব ফেলে।

শিশু যখন দেখবে যে তার পরিবারের মানুষজন একেকজন একেকভাবে খাবার খাচ্ছে, তখন স্বাভাবিক সেও শান্ত হয়ে বসে খেতে চাইবেনা। সেও তখন তালবাহানা শুরু করবে। এজন্য খাওয়ার আগেই যাবতীয় স্ক্রিন বা খাবারঘরের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন জিনিসপত্র সামনে থেকে সরিয়ে ফেলুন। আর অবশ্যই পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

১৪. তার খাবারের সাথেই ডেসার্ট পরিবেশন করুন

ব্যাপারটা আপনার কাছে অদ্ভুত লাগতে পারে যদি আপনি “খাওয়া শেষ হলে ডেসার্ট” এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে এটি খাবারের সাথে সুন্দর সম্পর্ক এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

খাবারের পর ডেসার্ট নীতি ফলো করলে কিছু সমস্যা হতে পারে, যেমন- বাচ্চা খাবার শেষ না হলেও বলবে তার পেট ভর্তি কিন্তু সে ডেসার্ট খেতে চায়, ডেসার্টটাই তার কাছে প্রধান খাবার হয়ে উঠবে এবং তাকে তার প্রধান খাবার খাওয়ানোর জন্য আপনার যুদ্ধের শেষ কখনো হবেনা।  

খাবারের সাথেই ডেসার্ট পরিবেশন করা হলে হয়তো সে সেটাই আগে খাবে বা শুধু সেটাই খাবে। সমস্যা নেই, ধীরে ধীরে সে বুঝবে যে মিষ্টি খাবারের একটি সামান্য অংশমাত্র, পুরো অংশ নয়। মিষ্টি কখনোই তার খিদে পুরোপুরি মিটাতে পারবেনা। একটা সময় দেখবেন যে, সে মিষ্টি রেখে অন্য স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোই আগে খাচ্ছে।

তাছাড়া, মিষ্টি যে কোনো কিছুর পুরস্কার হওয়ার মতো কিছু নয় সেটাও তাদের বোধগম্য হবে। তাই এটা খেলে ওটা পাবে – এভাবে না করে বরং একসাথেই সব পরিবেশন করুন। দেখবেন সে তার খিদের পরিমাণ অনুযায়ীই খাচ্ছে৷

১৫. সন্তানের রোল মডেল হোন

সবারই খাবারে নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু খাবার টেবিলে থাকা অবস্থায় আপনি যেন খাবার নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা না বলেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। যেমন : সবজিটা একদম ভালো হয় নি, বা মাছ খেতে ইচ্ছা করছেনা বা ডায়েটিং সংক্রান্ত কথাবার্তা – এগুলো কখনোই শিশুর সামনে বলবেন না।

বিজ্ঞাপণ

শিশুরা বড়দেরকেই অনুকরণ করে৷ আপনার দেখাদেখি তারও খাবারের প্রতি অনীহা এসে যেতে পারে। এতে শিশুটি অভ্যস্ত হয়ে যায়। তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়। এরপর হাজার সাধাসাধির পরও শিশু আর সেই খাবার খেতে চায় না। পরিণত বয়সেও তার স্বাদগ্রন্থি ওই বিশেষ খাদ্যের উপযোগী হয় না বলে নির্দিষ্ট খাবারগুলো আর খেতেই পারে না।

তা না করে বরং আপনি নিজেও বিভিন্নরকম খাবার চেষ্টা করে দেখুন আর আপনার শিশুকেও অনুপ্রাণিত করুন। খাবার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলুন। এতে করে আপনার শিশুও নতুন নতুন খাবার চেষ্টা করতে উৎসাহিত হবে।

১৬. শাকসবজি স্বাস্থ্যকর খাবার – এই ধরনের  উপদেশ দেওয়া বন্ধ করুন

মিষ্টি, বিস্কুট বা জাঙ্ক ফুড “মজা” আর শাকসবজি “স্বাস্থ্যকর” – এই ধরনের তকমা আসলে এই বার্তা পৌঁছায় যে শাকসবজি ওতো মজা না, কিন্তু খেতে হয়। আপনি যদি এই ধরনের কথা বলা থেকে বির‍ত থাকেন, তখন দেখবেন সে শাকসবজি খেতে আরো বেশি উৎসাহ বোধ করছে। পাশাপাশি আপনি যখন অন্য খাবারকেও এরকম তকমা দেওয়া বন্ধ করে দেন, তখন আসলে আপনি আপনার শিশুকেই নিজ থেকে খাবার পছন্দ করার দরজা খুলে দেন যেখানে কোনো রকম “ভালো” “খারাপ” “কম মজা”  এই ধরনের তকমা থাকেনা। মনে রাখবেন, এই তকমাগুলোর জন্য শিশুর খাবারের সাথে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তৈরি হয়।

১৭. প্লেট খালি করার জন্য জোর করবেন না

আমরা অনেক সময় প্লেটে কিছুটা খাবার বাকি থাকলে বাচ্চাদের জোর করতে থাকি এবং অনেকটা জোর করেই তাদের মুখে আরও দুগ্রাস খাবার গুঁজে দেই। এটা করা উচিত নয়। এতে বাচ্চার যেমন খাবারের প্রতি বিতৃষ্ণা আসতে পারে তেমনি ধীরে ধীরে তার খিদে সম্পর্কে ধারণা কমতে থাকে। সে বুঝতে পারেনা কখন তাকে খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে যা পরবর্তীতে অবেসিটির কারণ হতে পারে ।

. মনে রাখবেন পিকি ইটিং বেশিরভাগ শিশুর “বেড়ে উঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া”

প্রতিটি শিশুই অপর একটি শিশু থেকে ভিন্নভাবে বেড়ে উঠে। তাই সব শিশুকেই যে সব পর্যায় একই সময়ে অতিক্রম করতে হবে, সেরকম কোনো কথা নেই। পিকি ইটিং পর্যায়টির মধ্য দিয়ে কম-বেশি সব শিশুকেই যেতে হয়। হয়তো আপনার শিশু ১.৫ বছর বয়সে এই ধাপটি পার করবে, আবার আরেকটি শিশু হয়তো ৩ বা ৪ বছরের সময় পার করবে। তাই আপনার শিশু অন্য শিশুদের চেয়ে বেশি খাবারে বাছাবাছি করছে – এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খুব শিগগিরই এটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

কখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে তা কীভাবে বুঝবেন?

যদি শিশুর খাবারে বাছাবাছি অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়, সেক্ষেত্রে হয়তো আপনাকে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। এই মাত্রাটা বোঝার জন্য আপনাকে কিছু লক্ষণ খেয়াল করতে হবে। যেমন –

  • নতুন কোনো খাবার অসংখ্যবার প্লেটে দেওয়ার পরেও চেষ্টা করে দেখতে খুব বেশি অনীহা প্রকাশ করা।
  • অপছন্দনীয় খাদ্য নিয়ে খুব বেশি মর্মপীড়ায় ভোগা। যেমন: সে হয়তো কখনোই খিচুড়ি খেতে চাইবেনা কারণ একবার সে খিচুড়িতে এমন একটি সবজি পেয়েছিলো যা তার পছন্দ নয়।
  • যে খাবারগুলো সে খেতো সেগুলোতেও ধীরে ধীরে অরুচি বোধ করতে থাকা।

যদি আপনার শিশুর মধ্যে উপরিউক্ত লক্ষণগুলো বারবার লক্ষ্য করেন, তাহলে কোনো বিশেষজ্ঞের দারস্থ হোন। ড. ডাহলসবার্গ বলেন, “শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নয় বরং জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি লাভের জন্যও শিশুদের খাবারে অতিরিক্ত বাছাবাছি করা থেকে বিরত থাকা উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্নরকম খাবার খাওয়া এবং তা উপভোগ করা খুবই জরুরি”।

আপনার বাচ্চা দ্রুত বড় না হলে ভয় পাবেন না। সব বাচ্চা একই গতিতে বড় হয় না। আপনার বাচ্চার গ্রোথ তার প্রথম বছরের মত দ্রুত হবেনা।শিশুদের খাওয়ানো নিয়ে মোটেও মানসিক চাপে থাকবেন না। যদি মনে হয় বাচ্চা সঠিক ভাবে বেড়ে উঠছে না তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কিন্তু আপনার উদ্বেগ আপনার সন্তানের কাছে প্রকাশ করবেন না। আপনি যদি ক্রমাগত খাওয়ার সময় ঘোরাঘুরি করেন ,খাওয়ার জন্য জোর করেন অথবা ক্যালোরির হিসেব করেন তাহলে আপনার বাচ্চা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। যেটা অবশ্যই আপনার কাম্য নয়, তাই না ?

[ আরও পড়ুনঃ যেভাবে আপনার বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে আগ্রহী করে তুলবেন ]

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment