গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাস বা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার

Spread the love

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাস বা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে কিভাবে আপনার বাচ্চা বেড়ে উঠে

১৪তম সপ্তাহের মধ্যে আপনার বাচ্চা ১১ সে.মি. লম্বা এবং ওজন প্রায় ৪৫ গ্রাম হয়। ডিম্বাশয় বা শুক্রাশয়সহ এর অঙ্গ গঠিত হয়। যদিও আপনি তা অনুভব করতে পারছেন না কিন্ত  আপনার বাচ্চা জরায়ুর চারপাশে ঘুরে। ১৮তম সপ্তাহের মধ্যে আপনার বাচ্চা ১৮ সে.মি. লম্বা এবং ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম হয়।

পরবর্তী চার সপ্তাহে আপনি বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারবেন (পাখির ঝাপটানোর মত অনুভূতি)। এটিকে কখনও “প্রানবন্ত” হওয়া বলে। আপনি যদি আপনার বাচ্চা এখন দেখতে পারতেন তাহলে আপনি তার লিঙ্গ বলতে পারতেন। আপনার বাচ্চা দ্রুত ওজন লাভ করছে এবং তার ভ্রু, চুল, এবং নখ আছে।

বিজ্ঞাপণ

২৪তম সপ্তাহের মধ্যে আপনার বাচ্চা প্রায় ৩০ সে.মি. লম্বা এবং ওজন প্রায় ৬৫০ গ্রাম হয়। সূক্ষ্ম লোম গজায় যাকে ল্যানুগো বলে এবং ভ্রূণের ত্বকের সুরক্ষায় মোমের আবরণ তৈরি হয়, যাকে ভারনিক্স বলে।

আপনার জরায়ুর উপরিভাগ আপনার নাভির একটু উপরে থাকে। ২৪ সপ্তাহে যদি একটি বাচ্চা জন্ম নেয় তাহলে প্রতি দুইটি বাচ্চার মধ্যে একটির বাচার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু এটি নির্ভর করে বিশেষ যত্ন সহজলভ্য কিনা এবং আপনার গর্ভাবস্থা কতটুকু ভালোভাবে অগ্রগতি হয়েছে তার উপর। যে বাচ্চা এই অবস্থায় বেচে থাকে, তার অন্ধত্ব বা সেরিব্রাল পালসির মতো মারাত্মক অক্ষমতা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে গর্ভস্থ ভ্রূণের অনেকটা বৃদ্ধি হয়। এই সময়ে ভ্রুন ৩-৫ ইঞ্চি লম্বা হয়। যদি হবু বাবা-মা আগাম জানতে চান তাহলে ১৮-২২ সপ্তাহে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ভ্রূণের লিঙ্গ জানা যায়।গর্ভাবস্থার ৪ মাসের সময় ভ্রু, পাপড়ি, নখ এবং ঘাড় গঠিত হয়। এই সময়ে ভ্রূণের ত্বক কুঞ্চিত থাকে এবং হাত ও পা বাঁকা করতে পারে। কিডনি কাজ করা শুরু করে এবং প্রস্রাব উৎপাদন করতে পারে। গর্ভস্থ শিশু ঢোক গিলতে এবং শুনতে পারে।

পঞ্চম মাসে ভ্রুন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মা তার নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন। এই সময়ে গর্ভস্থ শিশু নিয়মিত সময়ে ঘুমায় ও জেগে উঠে। ছয় মাসে ভ্রূণের চুল উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়, চোখ খোলা শুরু করে এবং মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দ্রুত হয়। ফুসফুস পুরোপুরি গঠিত হয়ে গেলেও কাজ করা শুরু করেনা।

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে আপনার কি কি পরিবর্তন আসতে পারে?

আপনি আপনার গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে আছেন। এটি ‘দ্বিতীয় তিনমাসকাল’ যা ১৪তম সপ্তাহ থেকে ২৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। ১৬তম সপ্তাহের মধ্যে আপনি ওজন লাভ করতে পারেন এবং আপনাকে দেখে গর্ভবতী মনে হবে।

যদিও বাচ্চার ওজন মাত্র কয়েকশ গ্রাম হয়, কিন্তু অন্যান্য জিনিসও আপনার ওজনে যুক্ত হচ্ছে। এগুলো হল অতিরিক্ত রক্ত এবং তরল পদার্থ, আরও আছে বর্ধিত স্তন, জরায়ু এবং গর্ভফুল। রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়া এবং গর্ভকালীন হরমোনের কারণে আপনার শিরাগুলোকে বেশী স্পষ্ট দেখা যায়।

আপনি সম্ভবত ভালো অনুভব করছেন। আপনি গর্ভাবস্থার এই সময়ে কম ক্লান্ত এবং বমিবমি ভাব অনুভব করবেন। প্রথম তিনমাসে যে ধরনের মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাবের ব্যপার থাকে,তা আস্তে আস্তে দূর হতে শুরু করে। মা নিজের শরীর ও মনকে এই ধরনের অসুস্থতার সাথে খাপ খাইয়ে নেয় ততদিনে।আপনার জরায়ু উপরের দিকে সরবে এবং তা আপনার মূত্রথলিকে খুব বেশী চাপ দিবে না। অন্তত: এই সময়ের জন্য টয়লেটে কম যাওয়া লাগবে।

শীঘ্রই আপনার পুরোনো ব্যবহার করতে কষ্ট হবে। এর মানে এই না যে, মাতৃত্বের (মের্টানিটি) কাপড় কেনার পিছনে বেশী খরচ করতে হবে। আপনার পোশাকের আলমারিতে থাকা কাপড় আপনি এখনো পরতে পারবেন – এবং আপনার সঙ্গীরও কিছু কাপড় আপনি পড়তে পারবেন। বন্ধুরা আপনাকে কাপড় ধার দিয়ে খুশী হতে পারে।

আপনি কি উষ্ণ অনুভব করছেন? অনেক মহিলা তা করে। শরীরে অতিরিক্ত রক্তের কারণে এটি হয়। এই অতিরিক্ত উষ্ণতা শীতের মাঝামাঝিতে একটি বোনাস হতে পারে, কিন্তু গ্রীষ্মে নয়। ঢিলা,সুতী কাপড় সিনথেটিক কাপড়ের চেয়ে ঠান্ডা।

আপনার শরীর যখন বৃদ্ধি পেতে থাকবে তখন ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক অবস্থান পাওয়া কষ্টকর হয়। কিছু মহিলা এক পাশে শুয়ে,দুই পায়ের মাঝে এবং মাথার নীচে বালিশ দিয়ে এই আরামদায়ক অবস্থা পেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ

যতোই আপনার বাচ্চা বড় হবে, আপনার সামঞ্জস্য/ব্যালান্স প্রভাবিত হবে। ভার উত্তোলন বা মই বেয়ে উঠা অন্য কাউকে দিয়ে করান। ঝুঁকার সময় সাবধান থাকবেন-মনে রাখবেন আপনার হাড়েঁর জয়েন্টগুলো গর্ভাবস্থায় নরম থাকে এবং আপনি নিজেকে সহজেই আঘাত দিতে পারেন।

কখনো কখনো ২০ সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত লাথি মারতে পারে যা আপনার সঙ্গী অনুভব করতে পারবে। এটা অনুভব করা সঙ্গীর জন্য সবসময় সহজ নয়।তবে, যেহেতু তারা গর্ভাবস্থার অংশ – বাচ্চাকে জানা এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করার ব্যাপারে এটা তাদের জন্য একটি সর্বোত্তম পন্থা।

মায়ের মনে সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন আশংকা, দুশ্চিন্তা দানা বাঁধে বলে এ সময় অনেক গর্ভবতী মা দুঃস্বপ্ন দেখে থাকেন। কিছুটা দুশ্চিন্তা করা খুবই সাধারণ ব্যপার কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে কোনভাবেই যেন তা অতিরিক্ত আকার ধারণ না করে।

এ সময়ে মায়েদের মনে আসে কিছু প্রশ্ন

আমি কি এখনও উঁচু হিলের জুতা পরতে পারবো?

যদি আপনি উঁচু হিলের জুতা পরিধান করেন, এখনই এগুলোছেড়ে দেয়ার সময়- কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের জন্য। ৫ সে.মি. এর কম উচ্চতার হিলে আপনি অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, পিঠের ব্যাথা কম হবে এবং কম ক্লান্তি অনুভব করবেন।

আমি আমার সিটবেল্ট কিভাবে বাধবো?

যথাযথভাবে লাগানো সিটবেল্ট,কোন দূর্ঘটনার সময় আপনাকে এবং আপনার বাচ্চাকে রক্ষা করতে পারে। সিটবেল্ট-এর ভাজকরা অংশ আপনার পেটের স্ফীত/ফোলা অংশের এর নীচে পড়ুন। এটি যতো আঁটসাঁট সম্ভব ততটুকু শক্ত করে বাধুঁন, যাতে আপনার কোন অস্বস্তি বোধ না হয়।

বিমানে চড়া কি নিরাপদ?

বিজ্ঞাপণ

স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থায় সাধারণত কোন স্বাস্থ্য-সম্পৃক্ত কারণ নাই যে, কেন আপনি বিমানে চড়তে পারবেন না, কিন্তু সাধারণত ৩২ সপ্তাহের পর ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়া হয়। গর্ভাবস্থায় ভ্রমণের ব্যাপারে কিছু এয়ারলাইনস্রে নিজস্ব নীতিমালা আছে, তাই আপনার এয়ারলাইনস্ থেকে এ ব্যাপারে জেনে নিন।

ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস (একটি অবস্থা যা জীবন নাশক হতে পারে) -এর ঝুঁকি কমাতে একটি করিডোর আসনের জন্য বলুন যেখানে আপনি সহজেই আশেপাশে চলাফেরা করতে পারবেন। প্রত্যেক ৩০ মিনিট পরপর নিয়মিত প্লেনের একদিক থেকে অপর দিকে হাঁটুন, প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করুন এবং কফি পরিহার করুন, তাহলে আপনার শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকবে।

মধ্যম থেকে দুরের ফ্লাইট যা চার ঘন্টার বেশী স্থায়ী হয়, তার জন্য ভালো করে উপযুক্ত সংকুচিত (স্টকিং) মোজা পরুন। যদি আপনার রক্ত জমাট বাধার অতিরিক্ত ঝুঁকি থাকে, তাহলে আপনার পরিকল্পনা নিয়ে আপনার  ধাত্রী বা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ

হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা

যখন প্রসব বেদনা শুরু হবে তখন কিভাবে হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করা যাবে এবং যখন যাওয়ার সময় হবে তখন কিভাবে হাসপাতালে নেয়া হবে, তার ব্যাপারে আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। যদি আপনি আপনার সঙ্গীর সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন বা যদি প্রসবের ঘটন খুব তাড়াতাড়ি ঘটে যায় তখন আপনি কি করবেন – তার একটি পরিকল্পনা থাকা ভালো।

নিজে গাড়ী চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না। আপনার সঙ্গীর সাথে যদি যোগাযোগ করা না যায় বা বাড়ীতে পৌছতে তার দেরী হয়, তাহলে কি করবেন তার একটি বিকল্প পরিকল্পনা রাখুন।

দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের প্রতিটি সপ্তাহের বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলগুলো পড়ুন-

সপ্তাহ- ১৪

সপ্তাহ-১৫

সপ্তাহ- ১৬

সপ্তাহ- ১৭

সপ্তাহ- ১৮

সপ্তাহ- ১৯

সপ্তাহ- ২০

সপ্তাহ- ২১

সপ্তাহ- ২২

সপ্তাহ- ২৩

সপ্তাহ- ২৪

সপ্তাহ- ২৫

সপ্তাহ- ২৬

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment