২৫ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা | ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের শরীর এবং কিছু টিপস

Spread the love

গর্ভাবস্থার ২৫ তম সপ্তাহে গর্ভের ভ্রূণের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। তার মস্তিষ্ক, ফুসফুস এবং পরিপাকতন্ত্রসহ অন্যান্য অঙ্গগুলো শরীরের নিজ নিজ স্থানে গঠিত হয়ে যায়, যদিও এগুলোর পরিপূর্ণ বিকাশ হতে আরও বেশ কিছু সময় প্রয়োজন।

বেশিরভাগ মায়েরা হয়তো আরও কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে শুরু করেন।  তবে প্রথমবার মা হতে যাওয়া অনেক নারীই হয়তো এই সময়ে এসে ভ্রূণের নড়াচড়া প্রথমবারের অনুভব করা  শুরু করতে পারেন।

বিজ্ঞাপণ
২৫ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থার ২৫ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ১২তম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ মাসে।

গর্ভধারণের ২৫ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি

নবজাতক শিশুর আশেপাশে কোন উচ্চ শব্দ অথবা দ্রুত নড়াচড়া হলে শিশুকে আঁতকে উঠতে দেখা যায়। উচ্চ কোন শব্দ হলে শিশু সাধারণত তার মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে দেয় এবং হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে শুরু করে, আবার হাত এবং পা শরীরের দিকে ভাঁজ করে কুঁকড়ে যায়। শিশুর এই প্রতিক্রিয়াকে মোরো বা স্টার্টল রিফ্লেক্স (startle reflex) বলা হয়।

গর্ভাবস্থার ২৫তম সপ্তাহ থেকেই ভ্রূণের এই রিফ্লেক্সের বিকাশ হতে শুরু করে। এর মানে হলো, কোনো  উচ্চ শব্দে বা মায়ের হঠাৎ নড়াচড়ায়  ভ্রূণটি চমকে উঠে হাত পা ছুঁড়তে শুরু করতে পারে, এমনকি তার হেঁচকি তোলাও শুরু হয়ে যেতে পারে। ভ্রূণের এই নড়াচড়াগুলো মা খুব সহজেই অনুভব করতে পারবেন।

গর্ভের শিশুটি এসময় শরীর বাঁকিয়ে তার পা স্পর্শ করতে ও ধরে রাখতে, এবং হাত মুষ্টি করতে পারবে। তার শ্রবণশক্তির মাধ্যমে সে পরিচিত কণ্ঠস্বর চিনতে এবং সবার মাঝ থেকে মায়ের গলার স্বর আলাদা করে বুঝতে শুরু করতে পারে।

ভ্রূণের আকার ২৫ তম সপ্তাহে একটি বাঁধাকপির সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১৩.৬২ ইঞ্চি বা ৩৪.৬ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ১.৪৬ পাউন্ড বা ৬৬০ গ্রামের মত।

২৫ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে সেগুলো নিম্নরূপঃ

ত্বক

ভ্রূণের ত্বক এসপ্তাহে এসে আরও বেশি লালচে বা গোলাপি বর্ণ ধারণ করতে থাকে কারণ তার ত্বকের নিচে ক্যাপিলারিস (Capillaries) নামের ক্ষুদ্র রক্তবাহী নালী গঠিত হয় এবং নালীগুলো রক্ত পরিবহন করতে শুরু করে।

এছাড়াও ভ্রূণের শরীরে চর্বির স্তর জমতে থাকার কারণে তার ত্বকের ভাঁজগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে শুরু করে।

চুল

অনেক ভ্রূণের এসময় মাথায় চুল গজিয়ে যায় এবং এসময়ে এসে চুলগুলো রং ধারণ করতে শুরু করে। তবে চুলের এই রং তার জন্মের পর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। ভ্রুনাবস্থার এই চুলগুলো বেশিরভাগ সময় জন্মের পর ঝরে যায় এবং নতুন চুল গজায়।

ফুসফুস

২৫ তম সপ্তাহে ভ্রূণের ফুসফুসে রক্তনালী গঠিত হতে শুরু করে যাতে ফুসফুস আরও বিকশিত হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যেই ভ্রূণটি ‘সারফেক্ট্যান্ট’ নামের একধরনের তরল উৎপন্ন করতে শুরু করেছে যেগুলো ফুসফুসের বায়ুথলীগুলোকে প্রসারিত হতে সাহায্য করে যাতে মানবশরীর শ্বাস গ্রহণ করতে পারে।  

হৃদপিণ্ড

ভ্রূণের হৃদস্পন্দন এখন এতোটাই শক্তিশালী যে খুব সহজেই মায়ের পেটে stethoscope দিয়ে তার হৃদস্পন্দনের শব্দ শোনা যেতে পারে। এসময় ভ্রূণের হৃদস্পন্দন থাকে প্রায় ১৪০ বিপিএমের কাছাকাছি।   

চোখ

ভ্রূণের চোখের পাতাগুলো ধীরে ধীরে আলাদা হতে শুরু করলেও এসময় তার চোখের পাতা বন্ধ অবস্থাতেই থাকে। যদিও পাতা বন্ধ অবস্থাতেও চোখগুলো আলোর প্রতি সংবেদনশীল থাকে।

নাক

ভ্রূণের নাসারধ্র এসময় খুলে যায় এবং ভ্রূণটি  এগুলোর মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনের অংশ হিসেবে অ্যাম্নিওটিক ফ্লুয়িড গ্রহণ করতে থাকে।  

আম্বিলিকাল কর্ড

ভ্রূণের আম্বিলিকাল  কর্ড এ সময় আরও পুরু ও শক্ত হয়ে যায় যাতে তা গর্ভের ভ্রূণের বাড়তি প্রয়োজন মেটাতে পারে। এই কর্ডটি  “ওয়ারটন জেলী” নামের একধরনের ঘন পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে যা আম্বিলিকাল কর্ডটিকে সুরক্ষিত রাখে।

আম্বিলিকাল কর্ডে একটি শিরা ও দুটি ধমনী থাকে।  শিরাটি মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পুষ্টি ভ্রূণের দেহে সরবরাহ করে এবং ধমনী দুটি ভ্রূণের বর্জ্য পদার্থ প্লাসেন্টাতে পৌঁছে দেয় যা পরবর্তীতে মায়ের শরীরের মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।

২৫ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার ২৫ তম সপ্তাহে মায়ের জরায়ুর আকার অনেকটা ফুটবলের সমান হয়ে যায় এবং নাভি ও বুকের হাঁড়ের (Sternum) মাঝ বরাবর চলে আসে।

মায়ের পেটের আকারওজন বাড়ার কারণে এসময় মায়ের ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন হয়। এতে মায়ের শরীরের ব্যাল্যান্স রাখা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এছাড়াও মায়ের শরীরের জয়েন্টগুলোও এসময় একটু নমনীয় হয়ে যায়। তাই চলাফেরায়  একটু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন হয়।

তবে হ্যাঁ, কখনো যদি হোঁচট খান বা একটু পিছলে যান  তবে খুব বেশি আতঙ্কিত হবেন না। গর্ভের শিশু জরায়ুর ভেতর অ্যাম্নিওটিক স্যাকে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। তারপরও ছোট খাটো কোন দুর্ঘটনায়ও, নিশ্চিন্ত হবার জন্য যথাযথ চেকআপ করিয়ে নিতে পারেন।

গর্ভাবস্থার এ সময় নতুন যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা হল

বিজ্ঞাপণ

বুক ধড়ফড় করা বা পালপিটেশন হওয়া

গর্ভাবস্থায় শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হয় তখন মায়ের হৃদপিণ্ডের কাজও অনেক বেড়ে যায়। ভ্রূণের শরীরে পরিমাণ মত রক্তের প্রবাহ এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মায়ের শরীরের রক্তের পরিমাণও একই সাথে বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি পাওয়া রক্ত শরীরের সবখানে পৌঁছে দেয়ার জন্য মায়ের হৃদপিণ্ডকেও আরো দ্রুত পাম্প করতে হয়। এসময় প্রতি মিনিটে মায়ের শরীরের হৃদ কম্পনও স্বাভাবিক সময়ের চাইতে ১০ থেকে ২০ বার বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়াও এসময় মায়ের শরীরের রক্তনালীগুলো  বিস্তৃত হয় অর্থাৎ সেগুলো অপেক্ষাকৃত একটু বড় হতে থাকে। তাই এই সময়ে শরীরের রক্তচাপ একটু কমে আসে।এসব কারণেই মাঝে মধ্যে মনে হতে পারে যে আপনার বুক কেমন জানি ধড়ফড় করছে অথবা হার্ট-বিট খুব জোরে জোরে হচ্ছে।

যদিও এই ধরনের বুক ধড়ফড় (Palpitation)  করাটা গর্ভাবস্থায় খুবই স্বাভাবিক এবং এতে কোন ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয় না। তবে অন্য বড় রোগের কারণেও এই বুক ধড়ফড়  হতেও পারে, তাই ঝুঁকি কিছুটা থেকেই যায়। যদি বুক ধড়ফড় করা খুব বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা বুকে ব্যথা অনুভব হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে।

এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শোয়া বা বসা থেকে ওঠার সময় ধীরে ধীরে মুভ করার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

পাইলস বা অর্শরোগ

বিভিন্ন কারণে গর্ভাবস্থায় হেমরয়েডস বা পাইলস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। ক্রমবর্ধমান জরায়ু, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রোজেস্টেরণ হরমোনের আকস্মিক বৃদ্ধির ফলে গর্ভবতী মায়েদের পাইলস বা অর্শ হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভেরিকোস ভেইনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলেও গর্ভাবস্থায় হেমরয়েডস বা অর্শ হয়ে থাকে। এই উপসর্গ খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও এতে অনেক ব্যথা থাকতে পারে এবং রক্তক্ষরণেরও সম্ভাবনা থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পেলভিক এক্সারসাইজগুলো  এক্ষেত্রে ভালো কাজ দিতে পারে। এছাড়া মলত্যাগের চাপ আসলে কখনো আটকে রাখার চেষ্টা করবেন না।

ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য আক্রান্ত স্থানে আইস ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তবে ব্যাথা যদি খুব বেশি হয় এবং রক্তপাত হয় তবে দ্রুত ডাক্তারকে জানানো জরুরী।

চোখের সমস্যা

গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে হরমোন, বিপাক, তরল ধারন এবং রক্ত প্রবাহে যেসব পরিবর্তন আসে তার সবকিছুই মায়ের চোখ এবং চোখের দৃষ্টির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- এ সময় শরীর তরল ধরে রাখে বলে মায়ের চোখের কর্নিয়ার ঘনত্ব কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এটা যদিও খুবই সামান্য পরিবর্তন কিন্তু তার ফলে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে পারে। কিছু মায়েদের এসময় চোখ শুকনো লাগতে পারে এবং চোখে অস্বস্তিবোধ হতে পারে।

এসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চোখের ড্রপ ব্যাবহার করলে আরাম বোধ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন কিছু কিছু ড্রপে এমন সব উপাদান থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থায় পুরোপুরি নিরাপদ নাও হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ ব্যাবহার করবেন না।

যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহার করে থাকেন তবে তা দীর্ঘ সময় একটানা ব্যাবহার না করার চেষ্টা করুন। যদি তাতেও সমস্যা হয় তবে সন্তান জন্মদান পর্যন্ত চশমা ব্যাবহার করুন। টিভি, কম্পিউটার বা ফোনের দিকে একটানা অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকবেন না। এর কারণে চোখে শুকনো ভাব আরও বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় চোখের সমস্যা মাঝে মাঝে মারাত্মক জটিলতার লক্ষন হতে পারে, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-এক্লাম্পশিয়া।  ব্লাইন্ড স্পট বা চোখে অন্ধকার দেখা, সবকিছু দুটো করে দেখা,ঝাপসা দৃষ্টি, আলো সংবেদনশীলতা বা আলো সহ্য করতে না পারা, হঠাৎ হঠাৎ চোখের দৃষ্টি লোপ পাওয়া, হঠাৎ চোখে আলোর ঝলকানি দেখা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে।

নাভিতে এবং আশপাশে ব্যাথা

গর্ভাবস্থায় নাভিতে ব্যাথা সাধারণত মায়ের শরীরের আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে হয়। এই সময় কেউ কেউ নাভিতে এবং এর চারপাশে ব্যাথা ও জ্বলুনি অনুভব করতে পারেন। নাভির জায়গা ফুলেও যেতে পারে।গর্ভকালীন সময় নাভিতে ব্যাথা পুরো সময় জুড়ে আসা যাওয়া করতে পারে। কেউ কেউ এসব ব্যাথার সাথে মানিয়ে নেন আবার কারো কারো ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ব্যাথা অনেক তীব্র হতে পারে।

এর থেকে স্বস্তি পেতে আপনার পেটের উপর থেকে চাপ কমিয়ে দেখতে পারেন। ঘুমানোর সময় পাশ ফিরে শোন এবং পেটের নীচে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিন যাতে পেটের উপর চাপ কম পরে। ঢিলেঢালা কাপড় পড়বেন যাতে নাভিতে ঘষা না লাগে। নাভিতে এবং এর আশপাশে আইস প্যাক ব্যাবহার করা যেতে পারে। এর ফলে রক্তনালীগুলো  রিলাক্স হবে এবং চাপ কমবে। হালকা গরম সেক দিলেও আরাম হতে পারে।

তবে নাভি সংক্রান্ত কিছু কিছু উপসর্গের ক্ষেত্রে মায়েদের সাবধান থাকতে হবে। যদি ব্যাথা খুব বেশী হয় এবং সাথে জ্বর, বমি, ? ফুলে যাওয়া, ক্র্যাম্পিং, রক্তপাত ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায় তবে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে।

ইডেমা বা শরীরে পানি আসা

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় মায়ের শরীরে প্রায় ৫০ ভাগ বেশী রক্ত ও তরল উৎপন্ন হয়। এই অতিরিক্ত রক্ত এবং তরলের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় শরীর ফুলে যাওয়া বা ইডেমা খুব স্বাভাবিক। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই । বেশীরভাগ মায়েরাই কম বেশী এ সমস্যায় ভোগেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইডেমা ভয়ের কারণ হতে পারে। তাই এসময় থেকে নিয়মিত ব্লাড প্রেশার চেক করতে হবে। যদি শরীর ফুলে যাওয়ার সাথে সাথে মাথা ব্যাথা থাকে এবং দৃষ্টি ঝাপসা মনে হয় তবে তা প্রি-এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত আপনার গাইনক্লোজিস্টকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।

যখন বিশ্রাম নেবেন বা শুয়ে থাকবেন তখন পায়ের নীচে বালিশ বা কুশন দিয়ে পা উপরের দিকে তুলে রাখুন। এতে যেমন আপনার রিলাক্সেশান  হবে তেমনি এতে শরীরে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবেনা। সবচাইতে ভালো হয় যদি শুয়ে থাকা অবস্থায় পা আপনার হার্টের চাইতে উপরে রাখা যায়। তবে শেষপর্যন্ত যেটা আপনার জন্য আরামদায়ক সেটাই করুন।

এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভধারণের সপ্তাহে করনীয়

গত সপ্তাহে করা গ্লুকোজ স্ক্রীনিং টেস্টে যদি অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায় তবে আরও কিছু পরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হবে। এসব পরীক্ষায় বেশ কিছু সময় না খেয়ে থাকতে হতে পারে। করণীয় সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন।

যদি গত সপ্তাহে টেস্ট করে না থাকেন তবে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ের এই টেস্ট সাধারণত ২৪-২৮ সপ্তাহের মাঝে যে কোন সময় করা যায়। তাই না করে থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে টেস্ট করিয়ে নিন।

আপনার রক্তশূন্যতা( Anemia) আছে কি না তা দেখার জন্য এ সপ্তাহে ডাক্তার রক্তপরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। এখন থেকে আপনাকে খাবারের সাথে বাড়তি লৌহ উপাদানের সাপ্লিমেন্ট Iron suppliment, ট্যাবলেট আকারে) নিতে হতে পারে। কোনো কোনো ডাক্তার গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই খাবারের পাশাপাশি বাড়তি আয়রন সাপ্লিমেন্ট চালিয়ে যেতে বলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে বেশীরভাগ নারীই গর্ভধারণ করার অনেক আগে থেকেই রক্তশূন্যতায় ভোগেন।

যেহেতু এখন ক্রমাগত বড় হতে থাকা জরায়ুকে জায়গা করে দেয়ার জন্য আপনার পেশী এবং লিগামেন্টগুলোতে টান বাড়বে, আপনি সামান্য ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যদি আপনি এখনো ব্যায়াম শুরু না করেন, তাহলে এ পর্যায়ে নিয়মিত গর্ভাবস্থার উপযোগী কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। এতে করে আপনার পেশী সবল থাকবে।

এই সময় থেকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ শুরু করতে পারেন। এসব ব্যায়ামগুলো প্রসবের সময় বেশ সাহায্য করে। সেই সাথে প্রসবের পর দ্রুত সেরে উঠতে এবং প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার মত সমস্যা রোধে বেশ কার্যকর।

এই সময় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও বিশেষ নজর রাখতে হবে। গর্ভকালীন সময়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের পরিমান যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশী হয়, তবে তা গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সূচনা করতে পারে।

আমাদের সমাজে গর্ভধারণ ও মায়েদের সুস্থতা, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলার চর্চা খুবই কম। এক্ষেত্রে আপনার কাছের বা বিশ্বস্ত কারো কাছে যেমন আপনার স্বামী, শাশুরি, মা, বোন, বন্ধু, অন্য কেউ, এমন কি ডাক্তারের কাছেও আপনার যাবতীয় কথা শেয়ার করতে পারেন। এটি আপনাকে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করবে।

সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। নতুন মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না এবং অনেক ব্যাপারে নার্ভাস থাকেন। হাজার হাজার উপদেশের ভিড়ে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন লেখা পড়ে ও এক্সপার্টদের কাছ থেকে করণীয় কি ইত্যাদি  জেনে নিতে হবে। এবং সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে । 

সবার জন্য শুভকামনা।

<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ২৪
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ২৬>>


Spread the love

Related posts

Leave a Comment