গর্ভাবস্থায় চোখের কি কি সমস্যা হতে পারে?

Spread the love

গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে আসে অনেক পরিবর্তন। গর্ভবস্থায় নারীদের সাধারনত ওজন বৃদ্ধি, বমি ভাব, খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন, ব্যাক পেইন, পায়ে পানি আসা সহ অনেক রকম সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু সবাই হয় তো জানে না গর্ভাবস্থায় চোখের সমস্যা ও হতে পারে। শতকরা ১৫ ভাগ গর্ভবতী মহিলায় এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে হরমোন, বিপাক, তরল ধারন এবং রক্ত প্রবাহে যেসব পরিবর্তন আসে তার সবকিছুই মায়ের চোখ এবং চোখের দৃষ্টির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- এ সময় শরীর তরল ধরে রাখে বলে মায়ের চোখের কর্নিয়ার ঘনত্ব কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এটা যদিও খুবই সামান্য পরিবর্তন কিন্তু তার ফলে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

যদি গর্ভাবস্থায় দৃষ্টি শক্তি পরিবর্তিত হয়েও যায় তা সাধারনত দীর্ঘস্থায়ী হয়না। সন্তান জন্মদানের কয়েক মাসের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যায়। এ কারনের গর্ভাবস্থায় চোখের লেসার সার্জারি করার পরামর্শ দেয়া হয়না এবং এ সময় নতুন চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স কেনা ও প্রয়োজনীয় নয়। তবে যদি মনে হয় চোখে সমস্যা বেশী হচ্ছে তবে ডাক্তারকে তা জানানো উচিত।

গর্ভাবস্থায় চোখের কি কি সমস্যা হতে পারে?

চোখে শুকনো ভাব

কিছু মায়েদের এ সময় চোখ শুকনো শুকনো লাগতে পারে এবং চোখে অস্বস্তিবোধ হতে পারে (এ সমস্যা বাচ্চার জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানো পর্যন্তও থাকতে পারে)। এ সমস্যার কারণে এবং এর সাথে চোখের কর্নিয়ার ঘনত্বের পরিবর্তনের কারণে এ সময় কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহার করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চোখের ড্রপ ব্যাবহার করলে আরাম বোধ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন কিছু কিছু ড্রপে এমন সব উপাদান থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থায় পুরোপুরি নিরাপদ নাও হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ ব্যাবহার করবেন না।

যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহার করে থাকেন তবে তা দীর্ঘ সময় একটানা ব্যাবহার না করার চেষ্টা করুন। যদি তাতেও সমস্যা হয় তবে সন্তান জন্মদান পর্যন্ত চশমা ব্যাবহার করুন। টিভি, কম্পিউটার বা ফোনের দিকে একটানা অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকবেন না। এর কারণে চোখে শুকনো ভাব আরও বেড়ে যেতে পারে।

মাইগ্রেনের কারণে দৃষ্টিতে সমস্যা

গর্ভাবস্থায় মায়েরা হঠাৎ চোখে আলোর ঝলকানি বা ব্লাইন্ড স্পট দেখতে পারে। migraine headache with aura এর কারণে গর্ভাবস্থায় এমনটা হতে পারে। এর সাথে অনেক মাথা ব্যাথা থাকতে পারে (সাধারণত মাথার এক পাশে)। এ অবস্থায় মায়েরা হঠাৎ করে তীব্রে আলোর ঝলকানি দেখতে পারে, বা আঁকাবাঁকা লাইন অথবা চোখে অন্ধকারও দেখতে পারেন। এসবের সাথে সবসময় মাথা ব্যাথা নাও থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

Central serous chorioretinopathy

চোখের রেটিনার নিচে তরল জমা হয়ে গর্ভাবস্থায় central serous chorioretinopathy হতে পারে। এর ফলে চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা হতে পারে বা চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন। এটি সাধারানত স্ট্রেস হরমোনের সাথে সম্পর্কিত এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে হয়। তবে প্রথম বা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারেও হতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বা প্রসবের কয়েক মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।

প্রোলাইফরেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি 

গর্ভজনিত কারণে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। সাধারণত এদের চোখে কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। তবে ডায়াবেটিস দেখা দিলে অল্প সংখ্যক নারী চোখের সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যা সাধারণত আইরিশে নতুন রক্তবাহী শিরা গজায়। এতে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হয়। এমন সমস্যায় অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করা উচিত।

চোখের সমস্যা গর্ভাবস্থায় কি কোন ঝুঁকির কারণ হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় চোখের সমস্যা মাঝে মাঝে মারাত্মক জটিলতার লক্ষন হতে পারে, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-এক্লাম্পশিয়া।  প্রি-এক্লাম্পশিয়ায় আক্রান্ত ২৫ ভাগ এবং এক্লাম্পশিয়ায় আক্রান্ত ৫০ ভাগ মায়েদের চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা দেখা যায় যা ক্রমে বাড়তে থাকে। তাই যদি নীচের লক্ষনগুলো দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে-

  • ব্লাইন্ড স্পট বা চোখে অন্ধকার দেখা।
  • সবকিছু দুটো করে দেখা।
  • ঝাপসা দৃষ্টি।
  • আলো সংবেদনশীলতা বা আলো সহ্য করতে না পারা।
  • হঠাৎ হঠাৎ চোখের দৃষ্টি লোপ পাওয়া।
  • হঠাৎ চোখে আলোর ঝলকানি দেখা।

এছাড়াও যদি চোখে ব্যাথা হয়, চোখ লাল হয়ে যায় বা চোখে ফোলা ভাব আসে সেক্ষেত্রেও দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে।

আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত এবং তা হোল গ্লুকোমা। চোখের অক্ষিগোলকে চাপ পরার কারণে গ্লুকোমা হয়। গর্ভাবস্থায় সাধারনত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অক্ষিগোলকের উপর চাপ কমে যায়। এ কারণে কার যদি গর্ভধারণের আগে গ্লুকোমা থাকে তবে গর্ভাবস্থায় তার উন্নতি হতে পারে।

যদি কারো গ্লুকোমা থেকে থাকে তবে গর্ভধারণের সাথে সাথে সে ব্যাপারে ডাক্তারকে অবহিত করতে হবে। কারণে আপনি গ্লুকোমার যে ডোজের ওষুধ গ্রহন করতেন গর্ভাবস্থায় হয়তোবা সে ডোজের ওষুধ প্রয়োজন নাও হতে পারে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment